গাজায় ‘অস্ত্র সমর্পণের’ দাবি করা ছবি নিয়ে প্রশ্ন আর সন্দেহ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
উলঙ্গ অনেক পুরুষের ছবিতে কয়েক জনকে অস্ত্র তুলে ধরতে দেখা যায়।

গাজায় ‘অস্ত্র সমর্পণের’ দাবি করা ছবি নিয়ে প্রশ্ন আর সন্দেহ

গাজায় আটক উলঙ্গ ফিলিস্তিনি বন্দিদের ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে ‘অস্ত্র সমর্পণ’ করার কিছু ছবি নিয়ে নানা ধরণের জল্পনা আর প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ওই ঘটনার সময়কার সার্বিক পরিস্থিতি এবং তার ছবি তোলার বিষয়টি নিয়ে নানা ধরণের সন্দেহ দানা বাধছে।

প্রাথমিকভাবে একই দৃশ্যের দুটি ভিডিও দেখা যাচ্ছে, যেখানে অন্তর্বাস পরিহিত এক ব্যক্তি অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ মেনে মাটিতে অস্ত্র রাখছেন। কিন্তু দুটি ভিডিওর মধ্যে সামান্য পার্থক্য থাকার কারণে মনে করা হচ্ছে যে, হয়তো কয়েকটি ‘ধাপে’ এটি একাধিকবার ধারণ করা হয়েছে।

বিবিসি ভেরিফাই এই ফুটেজ যাচাই করে দেখেছে এবং তারা বলছে যে, দুটি ভিডিও ক্লিপই একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ধারণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মোট তিনটি বন্দুক সমর্পণ করা হয়েছে।

কিন্তু প্রকৃত পরিস্থিতি এবং ভিডিও প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

দুটি আলাদা ভিডিওতে কিছুটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এবং এগুলো গত নয়ই ডিসেম্বর শনিবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এখন অভিযোগ উঠেছে, কয়েক বারের প্রচেষ্টায় এই ভিডিওগুলো ধারণ করা হয়েছে। অনেকেই কীভাবে একই ব্যক্তি দুটি ভিডিওতে ভিন্ন হাতে বন্দুক ধরেছে তার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করছেন।

গাজায় ‘অস্ত্র সমর্পণের’ দাবি করা ছবি নিয়ে প্রশ্ন আর সন্দেহ
বন্দুক রাখা এই দুটি ভিডিও নিয়ে নানা জল্পনা চলছে সামাজিক মাধ্যমে

বিবিসি ভেরিফাই যা বলছে

বিবিসি ভেরিফাই বলছে, এই ফুটেজগুলো আসলে একটি চলমান ঘটনারই আলাদা দুটি দৃশ্য।

তবে, কয়েকবারের প্রচেষ্টায় ধারণ করা ভিডিও নয়, এবং একই ব্যক্তি বারবার যাওয়া-আসা করে আলাদা বন্দুক এবং খুলে রাখা গুলি এনে পায়ে হাঁটা রাস্তার উপর জড়ো করছেন।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার পাশে আরো কয়েক ডজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে দেখছেন। তারাও অন্তর্বাস পরিহিত এবং তাদের অনেকেই অস্ত্র ও পরিচয়পত্র উপরে তুলে ধরে আছেন।

বিবিসি ভেরিফাই জানতে পেরেছে যে তারা জাবালিয়ার উত্তরে বেইত লাহিয়া শহরে জাতিসংঘের একটি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

সূর্যের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে যে, একটি ভিডিও প্রথমে ধারণ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে একজন ব্যক্তি তার ডান হাত দিয়ে একটি বন্দুক ফুটপাতে রাখা আরেকটি বন্দুকের উপর রাখছেন।

পরের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সূর্য নিচে নেমে গেছে, একজন ব্যক্তি আরেকটি বন্দুক এনে বাম হাত দিয়ে অন্যগুলোর উপর রাখছে।

স্থির চিত্রের কারণেই এরই অনুমানগুলো পোক্ত হয়েছে, যেখানে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বন্দুক রাখা হয়েছে এবং অন্যটিতে দেখা যাচ্ছে রাস্তার উপর তিনটি বন্দুক ও ম্যাগাজিন রাখা রয়েছে।

গাজায় ‘অস্ত্র সমর্পণের’ দাবি করা ছবি নিয়ে প্রশ্ন আর সন্দেহ
এই ছবিটিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে

ফুটেজ নিয়ে প্রশ্ন আর সন্দেহ

এই ফুটেজ আরো কিছু প্রশ্ন সামনে এনেছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, আর তা হচ্ছে ওই ব্যক্তিদের অস্ত্রের মুখে রাখা হয়েছিল এবং তাদেরকে ক্যামেরার পেছন থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছিল।

তাই এটা স্পষ্ট নয় যে তারা কি আসলে অস্ত্র ‘সমর্পণ’ করছিল নাকি তারা শুধু নির্দেশ মোতাবেক অস্ত্রগুলো সরিয়ে রাখছিল।

কারণ ওই ব্যক্তিকে এরইমধ্যে শুধু অন্তর্বাস পড়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে, এবং তার সেগুলো নিজে লুকিয়ে রাখার মতো অবস্থাও ছিল না।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব অস্ত্র সম্পর্কে জানতো না- এমন সম্ভাবনাও খুবই কম। তার মানে হচ্ছে, বাস্তবিকপক্ষে সমর্পণের পরিবর্তে শুধুমাত্র ক্যামেরায় ধারণ করার জন্যই এমনটা করা হয়েছে।

আমরা জানি না যে, ওই ব্যক্তি বা ভিডিওতে দেখানো আর কোন ব্যক্তি হামাস বা গত সাতই অক্টোবরের হামলার সাথে জড়িত কিনা।

একটি ভিডিওতে শেষের দিকে একটি ডিএসএলআর এর জুম লেন্স খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা যাচ্ছে।

ভিডিওর পাশাপাশি ছবিও প্রকাশিত হচ্ছে যেগুলো একটু ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা হয়েছে। এর থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, এই ঘটনা একাধিক ব্যক্তি এবং একাধিক ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ধারণা করা হয়েছে।

গাজায় ‘অস্ত্র সমর্পণের’ দাবি করা ছবি নিয়ে প্রশ্ন আর সন্দেহ
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আটককৃত পুরুষদের এই ছবিটি বিবিসি প্রথমে যাচাই করে

গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকেই।

বন্দিদের সাথে হওয়া আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। রেড ক্রস ইতোমধ্যে বলেছে যে, আন্তর্জাতিক আইন মেনেই বন্দিদের সাথে আচরণ করা উচিত।

কিন্তু গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে অগ্রগতি অর্জন করছে তার প্রমাণ দেখাতে আগ্রহী দেশটি।

রবিবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “সম্প্রতি কয়েক দিনে, হামাসের কয়েক ডজন যোদ্ধা আমাদের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তারা তাদের অস্ত্র জমা দিচ্ছে এবং নিজেরা আমাদের বীরোচিত যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করছে।”

“আরো সময় লাগবে, যুদ্ধ পুরোদমে চলছে, কিন্তু এটা হামাসের সমাপ্তির শুরু।”

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এই ভিডিও নিয়ে ওঠা প্রশ্ন বা সন্দেহের ব্যাপারে সরাসরি কোন প্রশ্নের উত্তর বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তবে একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন যে, বন্দিদের প্রতি “আন্তর্জাতিক আইন মেনে আচরণ করা হচ্ছে”।

“সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের পোশাক খুলে দেয়াটা প্রায়ই দরকার হয়, কারণ সেগুলো তল্লাশি করে নিশ্চিত হতে হয় যে, সেখানে কোন বিস্ফোরক দ্রব্য বা অন্য কোন অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছে কিনা।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!