ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের জেরে ইউরোপে উত্তেজনা

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ। ছবি রয়টার্স

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের জেরে ইউরোপে উত্তেজনা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, বরং কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে এই সংঘাতের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোয়। ইউরোপের দেশগুলোতে ফিলিস্তিনের অধিকারপন্থি ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ-মিছিলের ঘটনা ঘটছে। এতে মহাদেশটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ‘গাজায় যা ঘটবে তা পুরো পশ্চিমেই প্রভাব ফেলবে’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ইউরোপের বৃহত্তম শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত এসব বিক্ষোভ-মিছিলে গাজায় যুদ্ধবিরতিসহ ফিলিস্তিনিদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। নির্বিচারে হাজার হাজার শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক হত্যার দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতের এ উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি দেশগুলোর রাজনীতিতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লন্ডনে বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্যের জেরে সোমবার (১৩ নভেম্বর) ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানকে বরখাস্ত করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে পুলিশের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের প্রতি খুব নম্র ব্যবহার করার অভিযোগ আনেন সুয়েলা। ওই নিবন্ধে বিক্ষোভকারীদের তিনি সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকারী ‘ঘৃণাপন্থি আন্দোলনকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

ব্র্যাভারম্যানকে অপসারণের ফলে ব্রিটিশ সরকারে বড় পরিবর্তন এসেছে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হওয়ায় তার নিয়োগ একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল।

গাজা সংকট কীভাবে মধ্যপ্রাচ্য পেরিয়ে লন্ডন থেকে প্যারিস এবং বার্লিন পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে এ ঘটনাটি তারই প্রতিফলন। ইউরোপে ক্রমবর্ধমান ইহুদিবিদ্বেষ বৃদ্ধি ও ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিবাদকারীদের অধিকার রক্ষায় ভারসাম্য বজায় রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মহাদেশটির অনেক দেশ। ইউরোপের বৃহত্তম শহরগুলোর রাস্তায় রাস্তায় কয়েক সপ্তাহ ধরেই পাল্টাপাল্টি মিছিল করে আসছেন প্রতিবাদকারীরা।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের জেরে ইউরোপে উত্তেজনা
লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভকারীরা। ছবি এপি

এ বিষয়ে লন্ডনের সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান রিফর্ম থিংকট্যাংকের সিনিয়র গবেষক লুইগি স্কাজিয়েরি এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘যুদ্ধ ইউরোপীয় সমাজকে এক কাতারে সংঘবদ্ধ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বামপন্থিরা প্রথমে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে সংঘবদ্ধ হলেও পরে তা গাজা সংঘাত ঘিরে পশ্চিমারা যে নীতিগুলো নিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।’

কর্মকর্তাদের মতে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে লন্ডনে প্রায় তিন লাখ বিক্ষোভকারী মিছিল করেছে। তবে আয়োজকদের দাবি, এতে ৮ লাখের কাছাকাছি মানুষ সমবেত হয়েছিল।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের জেরে ইউরোপে উত্তেজনা
ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে জনসাধারণের মিছিল। ছবি দ্য স্টার

যদিও শনিবারের মিছিলটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে ওই মিছিলে ইহুদিবিরোধী প্ল্যাকার্ড বহনকারীদের সন্ধান করছে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পুলিশ বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে; যার একটি ছবিতে একজন বিক্ষোভকারীকে “কোন ব্রিটিশ রাজনীতিকের ‘ইসরায়েলের বন্ধু’ হওয়া উচিত নয়” লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

একই দিন যুক্তরাজ্যে ‘আর্মিস্টিস ডে’ বা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির বার্ষিকী ছিল। প্রতি বছর ১১ নভেম্বর দিনটি উদযাপিত হয়। এবারও যুদ্ধে নিহত ব্রিটিশদের স্মরণে লন্ডনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এসময় এতে বিঘ্ন ঘটায় উগ্র ডানপন্থিরা। এদিন লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলায় তাদের পাল্টা বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, শনিবারের ঘটনায় তারা মোট ১৪৫ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশই পাল্টা বিক্ষোভকারী।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের জেরে ইউরোপে উত্তেজনা
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি এপি

স্কাজিয়েরি সতর্ক করে বলেছেন, “গাজায় যা ঘটবে তা পুরো পশ্চিমেই প্রভাব ফেলবে। কেননা, তা না হলে তাদের অবস্থান ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের করা ‘দুষ্কর্মে সহযোগিতা’ করার শামিল হিসেবে বিবেচিত হয়।”

ব্রিটেনে রাজনৈতিক এ অস্থিরতা এমন সময় দেখা দিলো যখন ফ্রান্সে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার মানুষের ইহুদিবিদ্বেষ-বিরোধী সমাবেশ এবং জার্মানিতে ‘নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত’ স্লোগানকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ দমন করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। এই স্লোগানটি ইহুদি ও ইসরায়েলকে নির্মূল করার আহ্বান’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় পশ্চিমা দেশগুলোতে। যদিও ফিলিস্তিনপন্থিদের দাবি, এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির কথা তুলে ধরা হয়।

এদিকে, ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন, জার্মানিতে প্রতিবাদ করার প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের কঠোর অবস্থান ও রাজনৈতিক নেতাদের চাপ প্রয়োগের কথা বলছেন বিক্ষোভকারীরা।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের জেরে ইউরোপে উত্তেজনা
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে জার্মানিতে মিছিল। ছবি ডয়েচে ভেলে

বার্লিনের স্কুলে শিক্ষার্থীদের ফিলিস্তিনি পতাকার রঙ বা পতাকার কাপড় পোশাক হিসেবে পরিধান করা থেকে বিরত রাখতে কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হামবুর্গে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যদিও পতাকার সংখ্যায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করে পরে অনুমতি দেওয়া হয়।

এই বিভাজন কমছে বলে কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।

স্কাজিয়েরি বলেন, আমি মনে করি আমরা সম্ভবত এই প্রবণতার শেষ নয়, বরং শুরু দেখছি। কারণ, সংঘাতের গতি ধীর হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইসরায়েল যে লক্ষ্য নিয়ে শুরু করেছিল তা এখনও বহাল রয়েছে। যাচ্ছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!