তামিমকে বাদ রেখেই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা বাংলাদেশের
বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগের দিন বিসিবি সভাপতির বাসায় মাঝরাতে বৈঠক, তামিম ইকবালের ফিটনেস নিয়ে জল্পনা আর হাথুরুসিংহে ও সাকিব আল হাসানের সিদ্ধান্ত নিয়ে গণমাধ্যমে গুঞ্জন – এরকম নাটকীয় পরিস্থিতির মধ্যে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তামিমকে বাদ দিয়েই ক্রিকেট বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
দলের অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন সাকিব আল হাসান আর সহ-অধিনায়কের পদে রয়েছেন নাজমুল হাসান শান্ত।
তামিম ইকবাল না থাকলেও এশিয়া কাপের দলে না থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দলে ঢুকেছেন। আর পনেরো সদস্যের স্কোয়াডে প্রথমবারের মত ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন আট জন ক্রিকেটার।
দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলন নিয়ে দিনভর চলেছে নাটক। চূড়ান্ত দল ঘোষণার সময় বারবার পেছানো হয় বিসিবির পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবার ঠিক কোন সময়ে দল ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে দুপুর পর্যন্ত কিছু জানায়নি ক্রিকেট বোর্ড।
পরে দুপুরে জানানো হয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচের মাঝে সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিটে জানানো হবে চূড়ান্ত স্কোয়াড।
এরপর সাড়ে পাঁচটার কিছুক্ষণ পর জানানো হয় যে দল ঘোষণা করা হবে নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর।
শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন না করে ক্রিকেট বোর্ড তাদের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে অনলাইনে ভিডিও পোস্ট করে দল ঘোষণা করে।
এর কিছুক্ষণ পর অবশ্য বিশ্বকাপের স্কোয়াড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
সেখানে তিনি জানান যে ‘সবার সাথে আলোচনা করে’ তামিমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সেখানে তিনি বলেন যে, “মেডিকেল টিমের সাথে ও বোর্ডের সবার সাথে আলোচনা করেই তামিমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিশ্বকাপে অনেকগুলো ম্যাচ আছে। তামিমের ইনজুরি থাকায় তাকে নিয়ে আমরা ঝুঁকি নিতে চাইনি।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচককে প্রশ্ন করা হয় যে বিশ্বকাপে তামিম ‘পাঁচটির বেশি ম্যাচ খেলতে পারবেন না’ বলে তিনি নির্বাচকদের বলেছেন বলে যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, তা সঠিক কিনা।
ঐ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা তার (তামিমের)সাথে কথা বলেছি। মিডিয়াতে অনেক জল্পনাই দেখেছি দিনভর। কিন্তু তামিম পাঁচ ম্যাচ খেলতে চেয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমাদের কছে ছিল না।”
তামিমের ইনজুরি নিয়ে গত তিন মাস ধরেই নানা ধরণের নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। তবে তার বিশ্বকাপে খেলা-না খেলা নিয়ে সবচেয়ে সাম্প্রতিক জটিলতার শুরুটা হয় গতকাল থেকে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে খেলার পর তামিম নির্বাচকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন যে আগামী দেড় মাসের মধ্যে এগারোটি ম্যাচ খেলার জন্য ফিট নন তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার মাঝরাতে ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠক করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে।
এরপর মঙ্গলবার বিকেলে চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে আবারো মিরপুরের হোম অফ ক্রিকেটে দলের কোচ ও ক্যাপ্টেনের সাথে কয়েক ঘণ্টা মিটিং করেন সভাপতি নাজমুল হাসান।
অবসরের ঘোষণা, আবার ফেরা
এর আগে জুলাই মাসে সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল।
তামিম ইকবাল এর আগে ২০২১ সালের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন, এর পরের বছর তিনি আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি থেকে বিদায় নেন।
এবারেও বিশ্বকাপের ৩-৪ মাস আগে ওয়ানডে দল থেকে তথা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই বিদায় নেন।
তামিম ইকবাল অনেকদিন ধরেই পিঠের চোটে ভুগছিলেন, চলতি বছরও বেশ কটি সিরিজ ও ম্যাচ মিস করেছেন তিনি।
তবে জুলাই মাসে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হওয়ার আগেও তার বিশ্বকাপ লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন।
৫ই জুলাই ঐ সিরিজের প্রথম ম্যাচে নামার আগে তিনি নিজেকে ‘শতভাগ ফিট না’ বলেছিলেন। ঐ ম্যাচের আগে তিনি এমনও বলেছিলেন যে তিনি মাঠে নেমে বুঝতে পারবেন তিনি ফিট কি না।
পুরো ফিট না হয়েও ম্যাচ খেলার বিষয়টি কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে ভালোভাবে নেনি, এমন খবরও সে সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
পুরোপুরি ফিট না হয়ে তামিমের খেলার বিষয়টি নিয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনও সেসময় নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন।
এমন পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ চলাকালীনই ৬ই জুলাই চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
অবসর নেয়ার কারণ হিসেবে তখন তামিম বলেছিলেন, “হয়তো আমি ততটা ভালো নেই, অথবা ভালো, আমি জানি না কিন্তু আমি আমার শতভাগ চেষ্টা করেছি যখনই মাঠে ছিলাম।”
তবে অবসরের ঘোষণার পর দিনই তামিম অবসর তুলে নেন। এর আগে ৭ই জুলাই সকালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় বাসভবনে তার সাথে দেখা করতে যান তামিম।
সেসময় সেখানে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ও বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনও ছিলেন।
গণভবন থেকে বের হয়ে তামিম সাংবাদিকদের বলেন যে প্রধানমন্ত্রী তাকে খেলায় ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি সেসময় বলেছিলেন, “আমি আমার রিটয়ারমেন্ট এই মুহূর্তে তুলে নিচ্ছি। কারণ আমি সবাইকে না বলতে পারি কিন্তু দেশের যে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি তাকে না বলা আমার পক্ষে অসম্ভব।”
এর কিছুদিন পর ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তামিম।
তেসরা অগাস্ট রাতে বিসিবি সভাপতির বাসায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।
ঐ সংবাদ সম্মেলনেই তামিম জানিয়েছিলেন যে অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া কাপে তিনি খেলবেন না। সেসময় তিনি জানিয়েছিলেন যে ইনজুরি থেকে ফিরে এশিয়া কাপের পর জাতীয় দলে ঢোকার জন্য কাজ করবেন তিনি।
তামিম সেদিন বলেছিলেন যে, দলের কথা চিন্তা করেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তামিম ইকবাল।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে ২০০৭ থেকে নিয়মিত ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন তামিম ইকবাল। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪টি সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি।
গুগল নিউজ
