দাবি পূরণ না হলে রাশিয়া শস্যচুক্তি নবায়ন করবে না: পুতিন

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি রয়টার্স

দাবি পূরণ না হলে রাশিয়া শস্যচুক্তি নবায়ন করবে না: পুতিন

দাবি পূরণ না হলে রাশিয়া শস্যচুক্তি নবায়ন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার দাবিপূরণ না করা পর্যন্ত মস্কো এই চুক্তি কার্যকর করবে না।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউক্রেনীয় শস্য নিরাপদে রপ্তানির বিষয়ে পুতিন তার এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী রাশিয়ার সোচি শহরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ায় বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে পরিচিত শস্য চুক্তিটিকে পুনরুজ্জীবিত করার আশায় এই বৈঠকের আয়োজন করা হলেও নিজেদের দাবি পূরণের বিষয়ে পুতিন তার দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন।

এদিন মূলত ভ্লাদিমির পুতিন তার কৃষি রপ্তানির বিষয়ে মস্কোর দাবি পশ্চিমা দেশগুলো পূরণ করার পরেই কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনীয় শস্য নিরাপদে পাঠানোর বিষয়ে জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তি পুনঃস্থাপনের বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়ে দেশটির কৃষ্ণসাগরের জাহাজ চলাচল পথ ও বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় মস্কো। এতে করে ইউক্রেনের উৎপাদিত শস্য বন্দরে আটকে যায়। মূলত কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার অবরোধের কারণে ইউক্রেনের বন্দরে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত থাকা কোটি কোটি টন খাদ্যশস্য আটকা পড়ে ছিল।

দাবি পূরণ না হলে রাশিয়া শস্যচুক্তি নবায়ন করবে না: পুতিন
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেইন। ছবি সংগৃহীত

এতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম দ্রুত হারে বাড়তে থাকে যার ফলে দরিদ্র দেশগুলোয় খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানি স্বাভাবিক করতে গত বছরের ২২ জুলাই রাশিয়া–ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যা কার্যকর হয় গত বছরের আগস্ট মাসের শুরু থেকে।

চুক্তির মধ্যস্থতায় ছিল জাতিসংঘ ও তুরস্ক। ওই চুক্তির ফলে রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে তাদের অবরোধ শিথিল করে যাতে ইউক্রেন থেকে সমুদ্রপথের নিরাপদ করিডর দিয়ে খাদ্যবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারে। এতে করে আগস্ট থেকেই ইউক্রেনের তিনটি বন্দর থেকে বাকি বিশ্বে নিরাপদে খাদ্যশস্য রপ্তানির পথ খুলে যায়।

মূলত যুদ্ধ সত্ত্বেও বৈশ্বিক খাদ্য সংকট দূর করতে ইউক্রেনকে তার কৃষ্ণসাগর বন্দরগুলো থেকে শস্য রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল রাশিয়া। তবে এই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য রাশিয়ার শর্ত উপেক্ষা করা হয়েছে অভিযোগ তুলে মস্কো গত জুলাই মাসে সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়।

রাশিয়ার অভিযোগ, রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানির প্রতিবন্ধকতা দূর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রক্ষা করা হয়নি। দেশটির দাবি, জাহাজ চলাচল ও বীমার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তার কৃষি বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করেছে। যদিও গত বছর থেকে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ গম প্রেরণ করেছে মস্কো।

দাবি পূরণ না হলে রাশিয়া শস্যচুক্তি নবায়ন করবে না: পুতিন
জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় নিরাপদ করিডোর দিয়ে ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্য বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়েছিল। ছবি রয়টার্স

সোমবারের বৈঠকে পুতিন মূলত সেই অভিযোগগুলোই পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, কৃষ্ণসাগর করিডোরকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যদি এই প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করা হয় তবে রাশিয়া ‘কিছু দিনের মধ্যে’ চুক্তিতে ফিরে আসতে পারে।

অন্যদিকে এই বিষয়ে শিগগিরই একটি অগ্রগতি আসতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তিনি বলেন, তুরস্ক এবং জাতিসংঘ এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নতুন প্যাকেজ প্রস্তাব নিয়ে একসাথে কাজ করছে।

ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গ্রহণকারী তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ত্রুটিগুলো সংশোধন করে শস্য রপ্তানির এই উদ্যোগটি অব্যাহত রাখা উচিত।’

বস্তুত, চলতি বছরের মে মাসে তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোয়ানের পুনর্নির্বাচনের পর এটিই ছিল এই দুই নেতার মধ্যে প্রথম বৈঠক।

দাবি পূরণ না হলে রাশিয়া শস্যচুক্তি নবায়ন করবে না: পুতিন
শস্যচুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার খবরে বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়ে যায়। প্রতীকি ছবি

এদিকে শস্যচুক্তি নিয়ে মস্কোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা বলছে, মস্কোর বিরুদ্ধে তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ান শস্য এবং সারকে লক্ষ্যবস্তু করেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষ্ণসাগরীয় শস্য চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হলে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশে ‘কঠোর প্রভাব’ পড়বে, যারা ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান শস্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

তবে এটি মোকাবিলায় পুতিন সোচিতে সাংবাদিকদের বলেন, আফ্রিকার ছয়টি দেশে বিনামূল্যে শস্য সরবরাহ করবে মস্কো। তিনি বলেন, ‘আমরা ছয়টি আফ্রিকান দেশের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করার কাছাকাছি রয়েছি, যেখানে আমরা বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করতে চাই এবং এমনকি বিনামূল্যে ডেলিভারি ও এ সংক্রান্ত সরঞ্জামও পাঠাতে চাই।

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই সরবরাহ কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান তিনি। রাশিয়ান এই প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, কৃষ্ণসাগর চুক্তির মাধ্যমে রপ্তানি করা শস্যের একটি বড় অংশ দরিদ্র দেশগুলোর পরিবর্তে পশ্চিমা দেশগুলোতে চলে গেছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!