সৌদি আরবের সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে শত শত অভিবাসী: প্রতিবেদন

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
সৌদি আরবের অভিবাসীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ পেয়েছে এইচআরডব্লিউ। ছবি সংগৃহীত

সৌদি আরবের সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে শত শত অভিবাসী: প্রতিবেদন

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে শত শত অভিবাসী নিহত হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

সোমবার (২১ আগস্ট) হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সৌদি-ইয়েমনে সীমান্তে ঘটেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই ইথিওপিয়ার নাগরিক। তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেন হয়ে সৌদিতে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ওই সময় গুলিতে প্রাণ হারান তারা।

বিবিসিকে কয়েকজন অভিবাসী জানিয়েছেন, গুলিতে অনেকের অঙ্গহানীও হয়েছে। এছাড়া গুলিতে নিহতদের অনেকের মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন অভিবাসীরা।

সৌদি এর আগে এসব হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেছে।

‘তারা বৃষ্টির মতো আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে’ এই শিরোনামে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত প্রতিবেদনে কয়েকজন অভিবাসীর রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অভিবাসীরা বলেছেন, তাদের ওপর গুলি করা হয়েছে এবং বিস্ফোরক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে সৌদির পুলিশ ও সেনারা। এসব ঘটনা ঘটেছে ইয়েমেনের উঁচুনিচু দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায়।

সৌদি আরবের সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে শত শত অভিবাসী : প্রতিবেদন
ইথিওপিয়ান অভিবাসীরা বলছেন, ইয়েমেন থেকে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের গুলি করা হয়।

বিবিসির সঙ্গে কয়েকজন অভিবাসী জানিয়েছেন, রাতের বেলা তারা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ওই সময় ইথিওপিয়ার অসংখ্য অভিবাসন প্রত্যাশীদের ওপর নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয়। যখন গুলি চালানো হয় তখন সেখানে নারী ও শিশুও ছিল। তারা মূলত তেল সমৃদ্ধ সৌদিতে কাজের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন।

মোস্তফা নামের ২১ বছর বয়সী এক অভিবাসী বিবিসিকে বলেছেন, ‘গুলি চলেছে আর চলেছে।’

তিনি জানিয়েছেন, গত বছরের জুলাইয়ে তিনি ও তার দলের সদস্যরা সৌদিতে প্রবেশের চেষ্টা চালান। তখন তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে শুধুমাত্র তার দলেরই ৪৫ জন নিহত হন। এমনকি তিনিও গুলিবিদ্ধ হন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি বুঝতেও পারিনি আমি গুলিবিদ্ধ হয়েছি। কিন্তু যখন আমি উঠে দাঁড়াই এবং হাঁটার চেষ্টা করি, আমার পায়ের অংশ আর তখন আমার সঙ্গে ছিল না।’

ইথিওপিয়া থেকে সৌদি আরবের সীমান্তে যেতে দীর্ঘ তিন মাসের এক কষ্টের যাত্রার মধ্যে দিয়ে যান তারা। এই তিন মাসের মধ্যে তাদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে। ইথিওপিয়ান ও ইয়েমেনি মানবপাচারকারীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তিন মাসের যাত্রাটি মূহুর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল— সৌদির বাহিনীর গুলির মাধ্যমে।

সৌদি আরবের সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে শত শত অভিবাসী : প্রতিবেদন
বিবিসিতে সাক্ষাৎকার দেয়া মোস্তফা সোফিয়া ।

মোস্তফার দলের ওপর হামলার কয়েক ঘণ্টা পর সেই হামলার একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। এতে দেখা যাচ্ছিল, মোস্তাফার পা পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে হাঁটু থেকে তার পা কেটে ফেলতে হয়। বর্তমানে ইথিওপিয়ায় থাকছেন তিনি। সেখানে ক্রার্চ এবং একটি নকল পা ব্যবহার করে চলাফেরা করেন তিনি।

দুই সন্তানের জনক মোস্তফা বলেছেন, ‘আমি সৌদি আরবে গিয়েছিলাম কারণ আমি আমার পরিবারকে উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি যা আশা করেছিলাম তা হয়নি। এখন আমার বাবা-মা আমার জন্য সব করে।’

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ২ লাখের বেশি মানুষ আফ্রিকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রার মাধ্যমে ইয়েমেনে যান। এরপর সেখান থেকে সৌদিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

তবে এ সমুদ্রে যাত্রাতেই অনেকের সলিল সমাধি ঘটে। ইয়েমেনের অনেক অঞ্চল এখন অভাগা এসব মানুষের কবরে পূর্ণ হয়ে গেছে।

দুই বছর আগে ইয়েমেনের রাজধানী সানার একটি কারাগারে কয়েক ডজন অভিবাসী গুলিতে প্রাণ হারান। রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে হুথি বিদ্রোহীদের দখলে।

সৌদি আরবের সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে শত শত অভিবাসী : প্রতিবেদন
সৌদি আরবের সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে শত শত অভিবাসী: প্রতিবেদন 41

কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে যা ওঠে এসেছে তাতে বোঝা গেছে, এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনেক বড় ও বিস্তৃত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদনটির প্রধান প্রতিবেদক নাদিয়া হার্ডম্যান সোমবার (২১ আগস্ট) বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা যে তথ্য লিপিবদ্ধ করেছি, সেটি নিশ্চিতভাবে গণহত্যা। মানুষ যে চিত্রের কথা বলেছেন তাতে বোঝা যায় সেটি মৃত্যুপুরী ছিল। মানুষের মরদেহ পাহাড়ি এলাকায় যেখানে সেখানে পড়ে ছিল।’

এই প্রতিবেদনে ২০২২ সালের মার্চ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত ঘটা ২৮টি আলাদা ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে বিস্ফোরক অস্ত্র ব্যবহার এবং কাছ থেকে গুলি করার ১৪টি ঘটনা রয়েছে।

নাদিয়া হার্ডম্যান জানিয়েছেন, যারা এই হামলা থেকে বেঁচে গেছেন তারা তাদের কাছে অনেক ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছেন। তাদের ধারণা সৌদির সীমান্ত বাহিনীর হামলায় ৬৫৫ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু এ সংখ্যা শত শত হতে পারে।

এদিকে অভিবাসীদের ওপর এ গণহত্যা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে সৌদি আরব।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সৌদি সীমান্তে এখনো হত্যার ঘটনা ঘটছে। আর যারা গুলিতে বা হামলায় নিহত হচ্ছেন তাদের কবর দেওয়া হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের শহর সাদাতে। সেই কবরস্থানের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!