নাইজারে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর ক্ষমতাসীন দলের সদর দপ্তরে হামলা

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন
আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি বিবিসির ভিডিও থেকে স্কিন শট নেয়া।

নাইজারে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর ক্ষমতাসীন দলের সদর দপ্তরে হামলা

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটির ক্ষমতাসীন দলের সদর দপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

মূলত সেনা অভ্যুত্থানের সমর্থকরা এই হামলা চালান এবং অভ্যুত্থানের সমর্থকদের অনেকের হাতেই রাশিয়ার পতাকা দেখা গেছে। এর আগে অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজারে সেনা অভ্যুত্থানের সমর্থকরা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের দলের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এসময় তারা সেখানে পাথর নিক্ষেপ করে এবং গাড়িতে আগুন দেয়। এছাড়া অভ্যুত্থানের সমর্থকদের একটি ছোট অংশের হাতে রাশিয়ার পতাকাও দেখা গেছে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে বুধবার রাত থেকেই আটক রাখা হয়েছে। কিন্তু কোথায় তা এখনও পরিষ্কার নয়। বুধবার সন্ধ্যায় একদল সামরিক কর্মকর্তা জাতীয় টেলিভিশন দখল করে এবং অভ্যুত্থানের ঘোষণা করে। পরে সেনাবাহিনীও এই অভ্যুত্থানে তাদের সমর্থন দেয়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই সেনা অভ্যুত্থানের ব্যাপক নিন্দা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে এই অঞ্চলে ইসলামি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান সহযোগী হিসেবে দেখা হয়। আর তাই বাজুমের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে অন্যান্য দেশ এবং জাতিসংঘের সাথে যোগ দিয়েছে রাশিয়াও।

নাইজারে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর ক্ষমতাসীন দলের সদর দপ্তরে হামলা
অভ্যুত্থানপন্থি বিক্ষোভের সময় রাশিয়ান পতাকা প্রদর্শন করা হয়। ছবি ইপিএ

৬৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ বাজুম দুই বছর আগে নাইজারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি পশ্চিম আফ্রিকায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স উভয়ই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ এই দেশে অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে।

এছাড়া নাইজারে সামরিক ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এক ফোনালাপে বাজুমকে ওয়াশিংটনের ‘অটল সমর্থনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জাতিসংঘ বলেছে, তারা নাইজারে তাদের মানবিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। স্থগিতাদেশের পেছনে কারণ হিসেবে অভ্যুত্থান ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য জাতিসংঘ এর আগে বলেছিল, নাইজারে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আটককৃত প্রেসিডেন্ট বাজুমের ‘অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত’ মুক্তি দাবি করেছেন।

তবে বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে মোহাম্মদ বাজুম বলেছেন, দেশের কষ্টার্জিত অর্জনকে রক্ষা করতে হবে।

নাইজারে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর ক্ষমতাসীন দলের সদর দপ্তরে হামলা
নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সামনে বিক্ষোভকারীদের হাতে রাশিয়ার পতাকা দেখা যায়। ছবি রয়টার্স

এদিকে বাজুমের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সমর্থন জোগাড় করার চেষ্টা করছেন এবং সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সেনাপ্রধান বলেছেন, তিনি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে লড়াই এড়াতে অভ্যুত্থানকে সমর্থন করছেন।

অবশ্য অভ্যুত্থানকারীরা কোনও নেতা ঘোষণা না করায় নাইজারের দায়িত্বে আসলে কে রয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।

বিবিসি বলছে, বৃহস্পতিবার রাজধানী নিয়ামে দোকানপাট ও বাজার খুলে দেওয়া হয় এবং ভোরে ভারী বৃষ্টির জেরে বিলম্বের পর অভ্যুত্থান সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসে। এছাড়া পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বাইরে জড়ো হওয়া শতাধিক অভ্যুত্থান সমর্থকের কাছে কিছু রাশিয়ান পতাকাও ছিল।

অন্যদের কাছে থাকা হাতে লেখা প্ল্যাকার্ডে বলা হয়: ‘ফ্রান্সের থেকে মুক্তি চাই’ এবং ‘বিদেশি ঘাঁটি চলে যাও’। পরে অভ্যুত্থান সমর্থকদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের সদর দপ্তরে হামলা চালায়। এমনকি বিক্ষোভকারীদের আসতে দেখে বাজুমের দলীয় কর্মীরা পালিয়ে যায়।

তবে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। সংঘর্ষে কিছু লোক আহত হয়েছে এবং পুড়ে যাওয়া গাড়িগুলো এখন পিএনডিএস তারায়া পার্টি ভবনের চারপাশে পড়ে রয়েছে।

অভ্যুত্থান সমর্থকরা বাজুমের এই দলটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি করতে এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা জিহাদি বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে যথেষ্ট কাজ করছে না বলেও অভিযোগ সামনে এনেছে।

নাইজারে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর ক্ষমতাসীন দলের সদর দপ্তরে হামলা
এর আগে নাইজারের সৈন্যরা জাতীয় টিভিতে সামরিক অভ্যুত্থানর কথা ঘোষণা করেছে। ছবি বিবিসির একটি ভিডিও থেকে স্কিন শট নেয়া।

বিবিসি বলছে, নাইজারের দু’টি প্রতিবেশী দেশ মালি এবং বুরকিনা ফাসো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হয়েছে। আর অভ্যুত্থানের পর উভয় দেশেই নতুন সামরিক নেতারা ফ্রান্সের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে রাশিয়ার কাছাকাছি চলে এসেছেন।

প্রতিবেশী দেশ মালিতে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত রাশিয়ান ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যরা জিহাদি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সে দেশের সামরিক সরকারকে সাহায্য করছে। এছাড়া ওয়াগনার গ্রুপের তৎপরতা এবং সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে সাহেল অঞ্চলের অস্থিরতা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এমনিতেই যথেষ্ট উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।

আর এর মধ্যে নাইজারের ভেতরে এই অস্থিরতা সেই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তবে বুধবারের এই সেনা অভ্যুত্থান এবং প্রেসিডেন্ট বাজুমকে উৎখাতের পেছনে রাশিয়ার জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ এখনও নেই।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বার্তাসংস্থা তাসের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, নাইজারে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা উচিত বলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন।

নাইজারের কিছু সুশীল সমাজ গোষ্ঠী সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ফ্রান্স থেকে সরে রাশিয়ার দিকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে একটি ফরাসি সামরিক বিমান নাইজারের একটি বিমান-বাহিনীর ঘাঁটিতে অবতরণের পর বন্ধ থাকা সীমান্ত লঙ্ঘন করার জন্য ফ্রান্সকে তিরস্কার করে জান্তা।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট বাজুম ২০২১ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফ্রান্স এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র তিনি। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর নাইজারে চারটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। আর আফ্রিকার এই দেশটিতে অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা হয়েছে অসংখ্যবার।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!