রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে ‘নোভা কাখোভকা’ বাঁধ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের ‘নোভা কাখোভকা’ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ উড়িয়ে দেওয়া নিয়ে পরস্পরকে দুষছে ইউক্রেন ও রুশ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (৬ জুন) বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে কয়েকটি এলাকা। সময় গড়ার সঙ্গে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বলেছে, রুশ বাহিনী বাঁধটি উড়িয়ে দিয়েছে। তবে নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও পশ্চিমারাও রুশ বাহিনীকেই দায়ী করছে। ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ একে ‘জঘন্য ঘটনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
![রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে ‘নোভা কাখোভকা’ বাঁধ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? 38 রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে ‘নোভা কাখোভকা’ বাঁধ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/06/uk-2-5.jpg)
খেরসন অঞ্চলে ডিনিপ্রো নদীর উজানে অবস্থিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ‘নোভা কাখোভকা’ বাঁধটি। মঙ্গলবার ভোরের দিকে কে বা কারা বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাঁধের একাংশ উড়িয়ে দেয়। এতে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে পানি অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। এই বাঁধ খেরসনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করছে কিয়েভ। খবর পাওয়া মাত্রই উদ্বিগ্ন হতে দেখা গেছে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে।
খেরসনে যে অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেখানকার মস্কো সমর্থিত মেয়র এ ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন।
নোভায়া কাখোভকা অঞ্চলটি বর্তমানে রাশিয়ার দখলে। শহরের মেয়র ভ্লাদিমির লিওন্তিয়েভ রুশ বার্তা সংস্থা রিয়া নোভস্তিকে বলেছেন, মূল অবকাঠামো ধ্বংসের পাশাপাশি বাঁধের বেশ কয়েকটি ফ্লাডগেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ডিনিপ্রো নদীতে অবস্থিত নোভা কাখোভকা বাঁধটি খেরসন শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এর একাংশে বড় ক্ষতি হওয়ায় ইউক্রেন যুদ্ধে প্রভাব ফেলতে পারে।
![রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে ‘নোভা কাখোভকা’ বাঁধ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? 39 রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে ‘নোভা কাখোভকা’ বাঁধ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/06/uk-2-4-1024x564.jpg)
নোভা কাখোভকা বাঁধটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সোভিয়েত আমলে প্রায় ৯৮ ফুট প্রশস্ত এবং ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর বাঁধটি ১৯৫৬ সালে কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অংশ হিসেবে ডিনিপ্রো নদীতে নির্মাণ করা হয়। এটি নদীর পানি প্রবাহ ধরে রাখতে সহায়ক। এই জলাধারে ১৮ কিউবিক কিলোমিটার জল রয়েছে, যা ইউটাহের গ্রেট সল্ট লেকের সমান।
এর জলাধার থেকে দক্ষিণ ক্রিমিয়া উপদ্বীপেও পৌঁছে যায় পানি। যা ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণে নেয় রাশিয়া। এখন বাঁধে বিপর্যয়ে ক্রিমিয়াসহ দক্ষিণ ইউক্রেনের বেশিরভাগ অংশে সেচ প্রদানকারী খাল ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
![রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে ‘নোভা কাখোভকা’ বাঁধ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? 40 রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে ‘নোভা কাখোভকা’ বাঁধ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/06/uk-4-3-1024x567.jpg)
এই বাঁধ আগেও হুমকির মুখে পড়েছিল?
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই নোভা কাখোভকা বাঁধটিও রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। খেরসন শহর কয়েক মাস আগে পুনর্দখল করে কিয়েভ। কিন্তু নোভা কাখোভকা বাঁধ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাতেই রয়ে গেছে।
গত বছরের অক্টোবরেও রুশ বাহিনীর বড় ধরনের হুমকির মুখে ছিল বাঁধটি। এটি উড়িয়ে না দিতে সেই সময় মস্কোকে সতর্ক করেছিলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি দাবি করেন, বাঁধের ভেতরে বিস্ফোরক সংযুক্ত করে রেখেছিল রুশ সেনারা। কারণ, এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইউক্রেনের দক্ষিণ অঞ্চল তলিয়ে যেতে পারে।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দারা বলেছে, বিস্ফোরণে পরিবেশগত বিপর্যয়ের মাত্রা ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে যাবে এবং পুরো কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলকে প্রভাবিত করতে পারে।