পাল্টা আক্রমণে কী প্রমাণ করতে চায় ইউক্রেন?

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
বাখমুতে সম্মুখ সমরে কামানের গোলা ছুড়ছে ইউক্রেনীয় সেনারা। ছবি: এপি

পাল্টা আক্রমণে কী প্রমাণ করতে চায় ইউক্রেন?

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এমন একটি আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা যেকোনও সামরিক বাহিনীর জন্যই ভয়ংকর। আর তা হলো: দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেওয়া একটি শত্রুকে বিতাড়িত করা।

গত বছর গ্রীষ্মে এমন কয়েকটি আক্রমণে সফলতা পেয়েছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। কিন্তু এরপর তারা আর আক্রমণে যায়নি। এখন আসন গেড়ে বসা রুশ বাহিনীকে আক্রমণ করা তাদের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহের গতি ধীর এবং দেশটির নেতারা যেমনটি চাইছেন বাস্তবে সেনারা কম উপযুক্ত অস্ত্রে সজ্জিত।

পাল্টা আক্রমণে কী প্রমাণ করতে চায় ইউক্রেন?
বাখমুতে এক ইউক্রেনীয় সেনা, ছবি: রয়টার্স

কামান শাখায় নেতৃত্ব দেওয়া মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মার্ক কিমিট বলেছেন, গুরুত্ব অনেক বেশি। যুদ্ধক্ষেত্রে সীমিত সাফল্য এবং বিশ্বজুড়ে ধীরে ধীরে মনোযোগ কমে যাওয়ার কারণে ইউক্রেনকে অবশ্যই বর্তমান অচলাবস্থা গুঁড়িয়ে দিতে হবে, তা না হলে তাদেরকে ক্রমশ যুদ্ধবিরতি ও আলোচনায় বসার আহ্বানের মুখে পড়তে হবে।

কিন্তু ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী যদি আবারও রুশদের পিছু হটতে বাধ্য করতে পারে এবং আরও সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয় তাহলে তাদের আক্রমণের গতি তীব্রতা পাবে, বেসামরিকদের মনোবল চাঙা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে আরও সমর্থন ও সহযোগিতা নিশ্চিত হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং অপর কর্মকর্তারা তাদের ভূখণ্ডের যে ১৮ শতাংশ রাশিয়া দখল করেছে সেগুলো পুনরুদ্ধারে পাল্টা আক্রমণ পরিকল্পনার কথা বলে আসছেন। তবে বহুল প্রতীক্ষিত এই আক্রমণের সময়, স্থান এবং আকার একেবারে গোপন রাখা হয়েছে। এমনকি হয়ত এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সমরবিদরা প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বলছেন, মে বা জুন মাসে পাল্টা আক্রমণ শুরু হতে পারে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, সীমিত সংখ্যক ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে হামলাটি কেমন হবে তা নির্ধারিত হবে। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাল্টা আক্রমণ একটি সুনির্দিষ্ট গাণিতিক হিসাব।

পাল্টা আক্রমণে কী প্রমাণ করতে চায় ইউক্রেন?
বেলজিয়ামের একটি হ্যাঙ্গারে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া নির্মিত ট্যাংক। ছবি: ব্লুমবার্গ

তিনি বলেছিলেন, তিনটি বিষয় পরিকল্পনায় প্রভাব রাখবে: সরঞ্জাম এবং সেনার প্রাপ্যতা, এবং একটি বড় আকারের অভিযানের রুশদের সরঞ্জাম ধ্বংস করা। মুল লক্ষ্য হলো শত্রুর প্রতিরক্ষা রেখাকে গুঁড়িয়ে ইউক্রেনীয় সেনাদের অগ্রগতি, তা যেকোনও দিকে দিকেই হোক না কেন।

ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জাম এবং সেনাদের মানের উন্নতি হচ্ছে। কারণ পশ্চিমা সরঞ্জামের সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পশ্চিম ইউরোপে প্রশিক্ষিত সেনারা দেশে ফিরে আসছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান পেয়েছে ইউক্রেন। জার্মানি নির্মিতি যুদ্ধের লেপার্ড ট্যাংক পেয়েছে। আরও অনেক দেশের প্রতিশ্রুতি অনুসারে সামরিক পৌঁছাবে আগামী দিনগুলোতে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে জেলেনস্কি ও তার টিমের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ অস্ত্র চাওয়া হয়েছে সেগুলোর তুলনায় অনেক কম।

কৌশলবিদরা বলছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রেখায় আক্রমণের ইউক্রেন সামরিক সক্ষমতায় এগিয়ে না থাকায় তারা ছলনা, জটিলতা এবং গতির সমন্বয়ের ওপর নির্ভল করতে পারে। তাদের লক্ষ্য হবে ইউক্রেনীয় সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে রাশিয়ার সক্ষমতাকে দুর্বল করে দেওয়া।

পাল্টা আক্রমণে কী প্রমাণ করতে চায় ইউক্রেন?
ইংল্যান্ডে প্রশিক্ষণে ইউক্রেনীয় সেনারা, ছবি: ব্লুমবার্গ

ব্রিটিশ আর্মর্ড ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের সাবেক কমান্ডার এবং বর্তমানে লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এ কর্মরত বেন বেরি বলেন, আক্রমণের ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয়দের সামনে অনেক বিকল্প রয়েছে, তারা চাইলে একটি বড় অভিযান চালাতে পারে অথবা ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ছোট হামলার পথে যেতে পারে। গত গ্রীষ্মের মতো এক স্থানের কথা বলে অন্য স্থানে হামলা চালাতে পারে ইউক্রেন।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মার্ক কিমিট বলছেন, হতচকিত করে দেওয়া হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আক্রমণের রেখা ধরে রাশিয়া যাতে বড় ধরনের প্রতিরক্ষা বজায় রাখতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হবে গুরুত্বপূর্ণ। অথবা ইউক্রেনীয় অনুপ্রবেশের পর প্রতিক্রিয়া জানানোর দ্রুত সুযোগ যেনও না পায়।

সমরবিদরা বলছেন, হামলার জন্য ইউক্রেনীয় সাঁজোয়া যানের চাকার ঘুরতে শুরু করার আগে কিয়েভ চাইলে রাশিয়ার সেনাদের মধ্যে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দিতে। এটিকে বলা হয় অভিযানকে নিজেদের মতো গড়ে তোলা। এ ক্ষেত্রে রাডার স্টেশন, বিমানবিধ্বংসী সেনাদের ইউনিট ও রসদ কেন্দ্রে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা, অথবা ছলনামূলক কৌশলের মাধ্যমে রাশিয়াকে তাদের সামরিক সরঞ্জাম অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য করা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার রাডার স্টেশনগুলোতে হামলা জোরদার করেছে ইউক্রেন। এমনটি বলছে ওপেন-সোর্স গোয়েন্দা গোষ্ঠী মোলফার। সেপ্টেম্বর ও গত মার্চে ইউক্রেনীয়রা এভাবে হামলা জোরদার করেছিল।

সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!