‘ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে বেইজিংয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবো’ শি জিনপিংকে পুতিন

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে মস্কো সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি সংগৃহীত

ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে বেইজিংয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবো’ শি জিনপিংকে পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন. ‘ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে’ শি জিনপিংয়ের ১২ দফা প্রস্তাব নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য এখন মস্কো সফরে রয়েছেন। ‘আমরা আলোচনার জন্য সবসময় প্রস্তুত’ বলেন মি. পুতিন।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম রাশিয়া সফর করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সোমবার প্রথম দফা আলোচনার পর মঙ্গবার কিছু পরের দিকে আবারো দুই নেতার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবার কথা রয়েছে।

এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘যুদ্ধাপরাধ’ বন্ধে ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ দিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

চীন রাশিয়ার মিত্রতা

সোমবার শি জিনপিং মস্কো নামার পর দুই নেতা পরস্পরকে ‘প্রিয় বন্ধু’ হিসেবে সম্বোধন করেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বলেছেন, ‘ইউক্রেন সংকট নিরসনে’ বেইজিংয়ের দেয়া প্রস্তাবগুলো তিনি পড়ে দেখেছেন এবং এ নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন।

‘ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে বেইজিংয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবো’ শি জিনপিংকে পুতিন
চীন-রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান মৈত্রী পশ্চিমা দেশগুলোকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ছবি সংগৃহীত

গত মাসে এই ১২ দফা প্রস্তাব দেয় চীন। তবে এতে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। বরং এতে সব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানোর কথা, এবং সব পক্ষকে ‘যৌক্তিক আচরণ’ করার বলা হয়েছে। চীন এখন রাশিয়ার বড় মিত্র। বেইজিং গত মাসে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে চীন একটি ‘নিরপেক্ষ এবং ন্যায্য’ অবস্থান নেবে এবং শান্তির লক্ষ্যে আলোচনার জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।

চীনের প্রস্তাবে শান্তি আলোচনা এবং পরস্পরের জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কথা আছে। সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট মি. পুতিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘ন্যায্যতার নীতি’ মেনে চলা এবং ‘প্রত্যেক রাষ্ট্রের জন্য অখণ্ড নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করা নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান।

গত কয়েক বছরে চীন ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে উল্লেখ করে মি. পুতিন আরো বলেন যে, “আমরা এমনকি কিছুটা ঈর্ষাও বোধ করি।”
জবাবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মি. পুতিনের নেতৃত্বে ‘রাশিয়ার অগ্রগতি’র প্রশংসা করেন।

শি জিনপিংয়ের সফরের আগে চীনা সংবাদপত্রের জন্য লেখা এক নিবন্ধে মি. পুতিন বলেছেন, ‘আক্রমণাত্মক’ মার্কিন নীতির কারণে এই দুই দেশ কখনও দুর্বল হবে না।

তিনি আরও বলেন, মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধ যুগের তুলনায় এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। চীনের নেতার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে অনেক প্রত্যাশা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মি. পুতিন।

এদিকে, সোমবার এই সফরের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি ইউক্রেন থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য মি. পুতিনের প্রতি মি. শি’কে আহ্বান জানানোর অনুরোধ করেছে।

এর আগে কিছু মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, চীনা নেতার মস্কো সফরের পর প্রেসিডেন্ট শি এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি টেলিফোনে কথা বলবেন। তবে এটি এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

ইউক্রেন মনে করে, প্রেসিডেন্ট শি মস্কোর এই সফরের মাধ্যমে বাকী বিশ্বকে এরকম একটা বার্তা দিতে চাইছেন যে রাশিয়ার কিছু মিত্র অন্তত আছে।

‘ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে বেইজিংয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবো’ শি জিনপিংকে পুতিন
ফেব্রুয়ারিতে মস্কো সফরে গিয়ে মি. পুতিনের সাথে বৈঠক করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ছবি সংগৃহীত

ইউক্রেনের আশংকা, চীন এবং রাশিয়ার মধ্যকার বর্তমান সহযোগিতা যা বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি খাতে সীমাবদ্ধ তা এখন সামরিক খাতেও বিস্তৃত হতে পারে। চীনের বিশাল অর্থনীতির পেছনে তেলের যোগান আসছে রাশিয়া থেকে।

প্রেসিডেন্ট শি এমন এক সময়ে মস্কো সফরে গেলেন যার মাত্র একদিন আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ রাশিয়াকে একঘরে করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট শি’র মস্কো সফরের কথা ঘোষণার ঠিক আগে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেন, “আমার মনে হয় না চীন আসলে এখনো সেরকম একটা মূহুর্তে পৌঁছেছে, যখন তারা রাশিয়াকে অস্ত্র দিতে চায়, অস্ত্র দিতে প্রস্তুত।”

“আবার আমার এটাও মনে হয় না যে, এই সফরের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে…মস্কোতে চীনা নেতার এই সফরই আসলে একটা বার্তা,” তিনি আরো বলেন।

মি. কুলেবা মনে করেন না যে এ সফরের কোন তাৎক্ষণিক ফল হবে। দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান সম্পর্কের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। ইতিমধ্যে আমেরিকা চীনকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে রাশিয়ার কাছে অস্ত্র সরবরাহ না করতে।

এর আগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল এই শান্তি আলোচনা একটি ‘কৌশল’ হতে পারে।

‘ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে বেইজিংয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবো’ শি জিনপিংকে পুতিন
ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত শি জিনপিং। ছবি সংগৃহীত

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, ‘নিজ শর্তে যুদ্ধ স্থগিত করার জন্য চীনের সহায়তায় রাশিয়ার কৌশলগত পদক্ষেপে বিশ্বকে বোকা বানানো উচিত নয়’।

‘যুদ্ধবিরতির আহ্বান যেখানে ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রুশ বাহিনীকে অপসারণের কথা উল্লেখ নেই, সেটা কার্যকরভাবে রাশিয়ার বিজয়কে সমর্থন করবে’ – বলেন মি. ব্লিঙ্কেন।

সূত্র: বিবিসি

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!