জন্মদিনে স্মরণীয় আলফ্রেড নোবেল

পাভেল আমান
পাভেল আমান
4 মিনিটে পড়ুন

নোবেল পুরস্কার, এই মহিমান্বিত শব্দযুগল শ্রুত হলেই চক্ষু নিমেষে উদ্ভাসিত শ্রেষ্ঠদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম পদার্থবিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, রসায়নবিদ, চিকিৎসাবিদদের উদ্ভাবন ও গবেষণার কৃতিকথা। নিজেদের কাজের উৎকর্ষতার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট বিজয়ী হিসেবে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার পান গুটিকয়েক জ্ঞানীগুণী। এই পুরস্কারটিকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক, ঈর্ষণীয় এবং মহার্ঘ পুরস্কার। কি বিজ্ঞানী, কি সাহিত্যিক, সকলের মনেই নিজ কাজের জন্য সম্মানিত হবার প্রবল বাসনা থাকে। এক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার যেন একটি সার্বজনীন সর্বস্বীকৃত চিরস্থায়ী স্বপ্নের নাম। আর এই বহু আলোচিত নামটি, এই পুরস্কারটি আজ এত সম্মানিত, এত প্রশংসিত এত জনপ্রিয় যাকে কেন্দ্র করে তিনি হলেন একজন সুইডিশ পদার্থবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, আবিষ্কারক, ব্যবসায়ী, অস্ত্র নির্মাতা মানবহিতৈষী দানশীল ব্যক্তিত্ব আলফ্রেডবার্নার নোবেল। তাঁর পেটেন্ট নেওয়া ৩৫৫টি আবিষ্কারের মধ্যে ডায়নামাইট আবিষ্কার সর্বাধিক বিখ্যাত। মৃত্যুর আগে উইল করে তিনি তার সুবিশাল অর্থ সম্পত্তি নোবেল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য রেখে যান। উইলে আরও বলে যান, নোবেল ইনস্টিটিউটের কাজ হবে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার এর অর্থ প্রদান করা। অকৃতদার আলফ্রেড নোবেল ১৮৩৩ সালের ২১ শে অক্টোবর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম এমানুয়েল নোবেল। বরাবর তিনি ছিলেন মেধাবী ছাত্র এবং পরবর্তীতে হয়েছিলেন বিজ্ঞানী গবেষক ও আবিষ্কারক। নোবেল বিশ্ববিখ্যাত হন ডিনামাইট আবিষ্কার করে।

১৮৬৩ সালে তিনি নাইট্রোগ্লিসারিনের সাথে কাঠ কয়লার মতো আরও কিছু পদার্থ মিশিয়ে একপ্রকার শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল বিস্ফোরক তৈরী করেন। ১৮৬৪ সালে তিনি তাঁর এই নতুন বিস্ফোরকের জন্য সুইডিশ পেটেন্ট অফিসে পেটেটেন্ট এর জন্য আবেদন করেন। তবে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তাঁর আবেদন মঞ্জুর হচ্ছিল না। এরপর তিনি আবার গবেষণা শুরু করেন। তিনি নাইট্রোগ্লিসারিনকে কিসেলগার কাঠের গুঁড়ো, সিলিকেট ইত্যাদি শোষক পদার্থ দিয়ে শোষণ করিয়ে নেন। তারপর তিনি এই বিস্ফোরককে কাগজে মুড়ে তৈরী করেন ডিনামাইট। তিনি গ্রীক শব্দ ‘ডিনামিস’ থেকে ইংরেজি প্রতিশব্দ ডিনামাইট শব্দটি তৈরি করেন যার অর্থ হল শক্তি। এই ডিনামাইটকে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হবে বলেই তিনি বিশ্বাস করতেন।

আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইটের মতো ভয়াবহ বোমার আবিষ্কারক হলেও তিনি কিন্তু চাইতেন তার আবিষ্কৃত বোমা ধ্বংসাত্মক কাজে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন শান্তি প্রচেষ্টায় ব্যবহৃত হতো। যেমন পাহাড় পর্বতে, সড়ক পথ নির্মাণ করতে, কয়লা ও বিভিন্ন খনিতে ডিনামাইট ব্যবহৃত হয়। তাই সবকিছু ভেবে এবং ডিনামাইট আবিষ্কারকে নিজের পাপ হিসেবে মনে করে এর প্রায়শ্চিত্ত করতে, ভবিষ্যতের পৃথিবীকে সুন্দর করতে তিনি এক অভাবনীয় কাজ করে রেখে যান। তিনি তার বিশাল পরিমাণ বিত্ত বৈভব সব মানব কল্যাণে কাজ করা ব্যক্তিদের পুরস্কার প্রদানের জন্য রেখে যান। তিনি নিজের ৯৪ ভাগ সম্পত্তি দিয়ে পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য, শান্তি এই ৫টি বিষয়ে সারা পৃথিবীর ব্যাপ সেরা ব্যক্তিদের পুরস্কার প্রদানের জন্য ফান্ড গঠন করেন। ১৯০১ সালে তার মৃত্যুর ৫ বছর পর প্রথমবারের মতো নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। তার নামানুসারে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য কয়েকজনকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজেও বিশ্ববিখ্যাত ও অমর হয়ে যান। নোবেল ১৮৯৬ সালে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান। মারা যাবার কয়েক বছর পূর্বে ১৮৯০ সালে তিনি ৯০ লাখ ডলার রেখে যান এবং এই অর্থের সুদ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে প্রতি বছর ৫ টি বিশেষ ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরপ বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে। সেগুলো হলো পদার্থবিদ্যা রসায়নশাস্ত্র চিকিৎসাশাস্ত্র বা শরীর বিজ্ঞান সাহিত্য এবং বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রে মৌলিক অবদান রাখা। ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতি বিজ্ঞানেও একটি নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছে। নোবেল পুরস্কার বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান এবং সম্মানজনক পুরস্কার। প্রতিবছর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যু দিন ১০ই ডিসেম্বর বিজয়ীদের নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রকৃত অর্থে আলফ্রেড নোবেল ছিলেন মানবতাবাদী বিজ্ঞানী। তার মানব সেবার প্রতি অঙ্গীকার দায়বদ্ধতা এবং সর্বোপরি নোবেল পুরস্কার প্রদানের মধ্যে দিয়েই তিনি রয়ে যাবেন আপামর বিশ্ববাসীর মননে চিরস্থায়ীভাবে। পরিশেষে এই মহান বিজ্ঞানী গবেষক এবং মানব সেবার প্রতি দায়বদ্ধ ব্যক্তিত্বকে জন্মদিনে জানাই শ্রদ্ধা ভক্তি ও ভালোবাসা ।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ইংরেজিতে স্নাতক। পেশা শিক্ষকতা। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখির প্রতি আকর্ষণ। বিশেষত কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ বিভিন্ন ফিচার লিখতে অভ্যস্ত। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় উদার আকাশ পত্রিকা। এরপর শব্দসাঁকো, জিলিপি, শারদীয়া আগন্তুক, আলেখ্য, আখর কথা, পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত। আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রতিদিন, উত্তরের সারাদিন, পুবের কলম, দিনদর্পন, সাত সকাল প্রভৃতি পত্রিকায় প্রবন্ধ চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এখনো ভালো লাগে কলমটাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীলতায় ভেসে গিয়ে ভাব জগতে বিচরণ করে কিছু না কিছু লিখতে। লেখালেখিটা অনেকটা জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। ক্রমশই অনুভূত লেখনিই আমার জীবনের অবশ্যিক অভিব্যক্তি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!