গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গরম অঞ্চলগুলো বাসযোগ্যতা হারাবে

সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আগামী কয়েক দশকে সারাবিশ্বের তাপমাত্রা তিনগুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এই শঙ্কার কথা জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। বর্তমানে গ্রীষ্মকালের কোনো কোনো সময় এখানকার তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশিতে পৌঁছাতে পারে।

গবেষকেরা বলছেন, ২১০০ সালের মধ্যে এই অসহনীয় তাপপ্রবাহের প্রভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মতো জায়গাগুলোতে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এর প্রভাব হবে আরও ভয়াবহ।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রা ১২৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ছাড়িয়ে গেলে সেটিকে “অত্যন্ত বিপজ্জনক” বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এটি খুব কমই ঘটে। এই শতাব্দীর শেষ দিকে ভারতের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে এই ধরনের তাপপ্রবাহ প্রতিবছর এক থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

- বিজ্ঞাপন -

হার্ভার্ডের জলবায়ু বিজ্ঞানী ও এই গবেষণার লেখক লুকাস জেপেটেলো বলেছেন, “এটি এক ধরনের ভীতিকর পরিস্তিতি। এর ফলে কয়েক বিলিয়ন মানুষ নিয়মিতভাবে অত্যন্ত বিপজ্জনক মাত্রার তাপের সংস্পর্শে আসতে চলেছে।”

জেপেটেলো ও তার সহকর্মীরা উচ্চ তাপের দুটি ভিন্ন স্তরের সম্ভাব্যতা দেখার জন্য ১ হাজারেরও বেশি কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেছেন। মার্কিন জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তারা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ১২৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর ওপরে তাপ সূচককে “বিপজ্জনক” এবং “অত্যন্ত বিপজ্জনক” হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

তারা ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত সারাবিশ্বে প্রতি বছর কতবার এই ধরনের তাপপ্রবাহ ঘটেছিল তার সঙ্গে ২০৫০ ও ২১০০ সালের মধ্যে কতবার এটা ঘটবে তার তুলনা করেছেন।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, মধ্য-অক্ষাংশে তাপ তিন থেকে দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপপ্রবাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ৫%।

সমীক্ষা অনুসারে, সম্ভবত ২১০০ সালের মধ্যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে “প্রতি সাধারণ বছরের বেশিরভাগ দিনে” ১০৩-ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা থাকবে।

- বিজ্ঞাপন -

গবেষণায় দেখা যায়, শিকাগো ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মাত্র চারবার ১০ ডিগ্রি তাপ সূচকে পৌঁছায়। কিন্তু শতাব্দীর শেষ নাগাদ শিকাগোতে বছরে ১১ বার সেই তাপদাহ ঘটেছে।

জেপেপেটেলো বলেছেন, তাপপ্রবাহ হল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, পানির ঘাটতি ও সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন চারটি লক্ষণের মধ্যে একটি।

তিনি ২০২১ সালে ওয়াশিংটন রাজ্যের উষ্ণায়নের সময় অনেক গবেষণা করেছেন। যে তাপদাহ বহু বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ যাতে প্রাণ হারায়।

- বিজ্ঞাপন -

উডওয়েল ক্লাইমেট রিসার্চ সেন্টারের জলবায়ু বিজ্ঞানী জেনিফার ফ্রান্সিস বলেন, “দুঃখজনকভাবে এই গবেষণায় দেখানো ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বিশ্বাসযোগ্য। গত দুটি গ্রীষ্ম আমাদের ইউরোপ, চীন, উত্তর-পশ্চিম উত্তর আমেরিকা, ভারত, দক্ষিণ-মধ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্য সাইবেরিয়া এবং এমনকি নিউ ইংল্যান্ডে প্রাণঘাতী তাপপ্রবাহসহ ভবিষ্যতের তাপদাহের জন্য একটি ইঙ্গিত দিয়েছে। গরম অঞ্চলগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। কারণ তাপ সূচকগুলো বিপজ্জনক সীমা ছাড়িয়ে যাবে, যা মানুষ ও বাস্তুতন্ত্রকে সমানভাবে প্রভাবিত করবে। যে অঞ্চলগুলোতে এখন চরম তাপ বিরল, সেখানেও ক্রমবর্ধমান ক্ষতি হবে।”

হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ড. রেনি সালাস বলেছেন, “গবেষণাটি তাপ সূচকের ওপর আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তাপ সূচক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরকে শীতল করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে। হিট স্ট্রোক হলো তাপ অসুস্থতার একটি সম্ভাব্য মারাত্মক রূপ, যা শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে গেলে ঘটে।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মন্তব্য নেই

Log In

Forgot password?

Don't have an account? Register

Forgot password?

Enter your account data and we will send you a link to reset your password.

Your password reset link appears to be invalid or expired.

Log in

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!