ক্লাসে ফিরলেন হৃদয় মণ্ডল

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

দীর্ঘ ২৮ দিন পর ‘‘শঙ্কা’’ নিয়েই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন ‘‘ধর্ম অবমাননার’’ অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্ত হওয়া মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে দশম শ্রেণির “খ’” শাখার ৪ জন ছাত্র নিয়ে পাঠদান শুরু করেন তিনি।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘‘এভাবে আবারও ক্লাসে ফিরতে পারবো আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি ভীষণ আনন্দিত যে স্কুলে ফিরতে পেরেছি, শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে পারছি। আজকে আমার কর্মজীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’’

তিনি বলেন, ‘‘তবে শঙ্কা তো থেকেই যাচ্ছে। কারণ আমি তো সবসময় স্কুলে থাকবো না। বাইরে বের হবো, বিভিন্ন জায়গায় যাবো। তখন ওই কুচক্রিমহল পিছন থেকে অনেক কিছুই করতে পারে। সবটা্ তো আর প্রশাসন আটকাতে পারবে না। ভবিষ্যতে কী হবে এ নিয়ে তো শঙ্কা থেকেই যায়। তদন্ত কমিটির সামনে ওই তিন শিক্ষার্থী নিজেদের ওপর সব দায় নিয়ে অপরাধ স্বীকার করেছে। তদন্তের সময় তারা জানায়, স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক, বাইরের শিক্ষকরা আমাকে ‘নাস্তিক’ বলে একটা কথা প্রচার করেছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে আমি আশাবাদী এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। তবে, এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের ওপর আমার কোনো ক্ষোভ নেই। ওদের আমি অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। কারণ, ওরা কোমলমতি। ওদের যে যা বোঝাবে তাই বুঝবে, তাই করবে। কিন্তু এর পেছনে ষড়যন্ত্রকারী যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এর আগেও আমার সঙ্গে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কখনও রশিদ বই চুরি হয়েছে, কখনও বেতন পরিশোধ না করে মিথ্যা বলেছে। এ নিয়ে স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জাহাঙ্গীর আমার গায়ে হাতও তুলেছে।’’

মামলা প্রসঙ্গে হৃদয় চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘‘বুধবার আদালতে হাজির হবো। আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো। সে হিসেবেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুনেছি স্কুল থেকে মামলা প্রত্যাহার করা হবে।’’

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘‘মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। বিচারকার্য কোন দিকে যায় সেটা দেখে এরপর মামলার বাদীসহ সকলের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল সন্তোষজনক কারণ দেখিয়েছেন। আজকে তিনি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ক্লাস শুরু করেছেন। ’’

তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে, এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এছাড়া আজকেই স্কুলে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলে তার (শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল) বাসার সামনে দুটি সিসি ক্যামেরা বসিয়ে দেওয়া হবে।’’

বিদ্যালয়ের সভাপতি আলমগীর খান বলেন, ‘‘এ ঘটনার অন্যতম কারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করা। স্কুলে নতুন ভবন হচ্ছে, জমি বাড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়গুলো বাইরে থেকে অনেকেই ভালোভাবে দেখছে না। আমাদের এই কমিটির মাধ্যমে স্কুল ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। তাই এই কমিটি ভাঙার জন্য স্কুলের মধ্যে কখনও শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ, কখনও শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছে।”

এর আগে, মঙ্গলবার সকালে বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব, স্কুল কমিটির সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘‘এ ঘটনা মুন্সিগঞ্জ জেলার জন্য কলঙ্কিত একটি ঘটনা। এ ধরনের ঘটনার যাতে কখনও পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ ঘটনার পেছনের ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় মণ্ডল। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে প্রাসঙ্গিকভাবে ইসলাম ধর্ম বিষয়েও কথা বলেন।

কয়েকজন শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তার বক্তব্য রেকর্ড করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ নিয়ে অসন্তোষের জেরে স্কুল ছুটির পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত আবেদন দেয় শিক্ষার্থীরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একটি পক্ষের অসন্তোষের জেরে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ বিষয়টি সমঝোতার সমাধান না মেনে ২২ মার্চ ক্লাস বর্জন করে ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে।

খবর পেয়ে মুন্সিগঞ্জ থানা ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। এরপর হৃদয় চন্দ্রকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়।এরপর দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়।

১০ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুতাহারাত আক্তার ভূঁইয়া তার জামিন মঞ্জুর করেন। ওই দিন বিকেলেই মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!