সুন্দরবনের আয়েশি এক বাঘ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

সুন্দরবনের বাঘ গণনা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয় ৩১ মার্চ। বনবিভাগই ৩৬ কোটি টাকার বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘ শুমারির জন্য সোয়া ৩ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানায়। ঠিক সেই মুহূর্তে সুন্দরবনের কটকায় সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পরে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আয়েশি রূপ। বাঘটিকে একটি নিচু গাছের ডালে বেশ আয়েশে বসে থাকতে দেখা যায়!

ছবিটি ধারণকারী ফটো সাংবাদিক ফরিদী নোমান। তিনি ২ এপ্রিল তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, সুন্দরবনে কটকা’র সমুদ্রের মোহনায় ঢেউয়ের কারণে বোট নিয়ে এই খালটিতে আমাদের ঢুকতে হয়েছে। কটকা অফিস পাড়াতেই বিকেলে নামার পরিকল্পনা ছিলো। খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রায় ১০ কিলোমিটার সরে এসেছি আমরা। তাই আশে-পাশে ট্রলারে ঘুরছিলাম পাখি খুঁজতে। প্রথম যে শাখা-খালে ঢুকলাম চুপচাপ বসে থেকে কয়েকটা ব্রাউন-উইঙড কিংফিশার, স্মল মিনিভেট, স্পেকলড পিকুলেটসহ আরো কিছু ছোট পাখির দেখা মিললো। শাখা-খালটি থেকে বেরিয়ে বাঁয়ের আরেকটি খালে ঢোকার চেষ্টা করলাম, পানি কম থাকায় সেখান থেকেও বেরিয়ে এসে ডানদিকে কিছুদূর এগোনোর পর কেওড়া পাতার ফাঁকে গাড়ো হলুদ বাঘটিকে দেখতে পাই। প্রথম কয়েক সেকেন্ড নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সত্যিই কি বাঘ দেখছি? একটু পরেই মো. তানজির এইচ রুবেল চিৎকার করে উঠলেন, বাঘ… বাঘ… বাঘ। খালের পাড়ে বেশিরভাগই কেওড়া গাছ। মাঝে পানিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বাইন গাছের ওপর খুব আয়েশি ভঙ্গিতে ছিল আহ্লাদি এক রাজকুমার, আমাদের প্রিয় বেঙ্গল টাইগার, বাংলার বাঘ।”

সুন্দরবনে ইদানীং বনের রাজা বাঘ দেখা মিলছে। কটকা, কচিখালীসহ বেশকিছু পর্যটন এলাকার আশপাশে এ বাঘ দেখা মিলছে। ফলে পর্যটকরাও হচ্ছেন উৎফুল্ল। বনজীবী ও বনরক্ষীরা জানান, গত ১০ বছরেও এভাবে বনে বাঘের চলাচল লক্ষ করা যায়নি। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে অনেকটা আতঙ্কে রয়েছেন তারাও।

গত ১২ মার্চ সুন্দরবনে ঘুরতে পরিবারসহ আসেন ঢাকার কিছু পর্যটক। তাদের টিমের কাছে বাঘের দেখা মিলেছে। এমএল সুবতি নামের পর্যটকবাহী লঞ্চে তারা ঢাকা থেকে সুন্দরবন ঘুরতে আসেন। টিমে ছিলেন ৩০ জন প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক। তারা কটকা ও কচিখালির মধ্যবর্তী স্থানে এলে দেখতে পান রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এসময় তারা আনন্দে হৈ চৈ শুরু করেন।

পর্যটক সোহরাব হোসেন জানান, ১২ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সুন্দরবন থেকে খুলনা ফেরার পথে শুনতে পান কচিখালি এবং কটকার মাঝামাঝি ছিটে কটকা নামক স্থানে তাদের সামনে থাকা ওয়েব নামের অন্য একটি লঞ্চের পর্যটকরা নদীর চরে বাঘ দেখতে পেয়েছেন৷ এরপর আমরাও চরের দিকে খেয়াল রাখি। তিনি বলেন, “আমরা একসাথে ৫টি বাঘ নদীর চরে গোল গাছের পাশে দেখতে পেলাম। সেগুলো বসে ছিল ও খেলা করছিল।”

লঞ্চের মাস্টার শামিম জানান, সুন্দরবনে বহুবার এসেছি। কিন্তু কখনওই বাঘের দেখা পাননি। এই প্রথম সুন্দরবনে বাঘ দেখলাম। তাও আবার একসাথে ৫টি।

এর আগেও সুন্দরবনে বন কর্মকর্তারা বাঘ দেখেছেন এবং ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কটকা এলাকায় একসঙ্গে ৩টি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

ট্যুর অপারেটর সুন্দরবন হলিডেজ’র ট্যুর গাইড শাহ ইলিয়াস বলেন, ১২ মার্চ বিকেল ৫টার পরে ছিটা কটকা খালের অপর পাড়ে ৪টি বাঘ দেখেছেন। সেখানে কোনো বাচ্চা ছিল না। সবগুলো আকারে বড় বাঘ।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সাবেক সভাপতি নিয়াজ আব্দুর রহমান বলেন, এবারই প্রথম বাঘের দেখা পেলাম।

সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কটকা এলাকায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে ৩টি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোল টিমের সদস্যরা। এই টিমে ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “আমাদের টহল দল সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে একসঙ্গে মা ও দুটি বাচ্চাসহ মোট ৩টি বাঘ দেখতে পায়। আমরা প্রায় ২৫ মিনিট ধরে তাদের দেখেছিলাম। এ নিয়ে সুন্দরবনে আমি সরাসরি ৪ বার বাঘ দেখতে পেলাম। তাই নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছি।”

তিনি বলেন, “গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতেও আমাদের কর্মকর্তারা বনে বাঘের দেখা পেয়েছিলেন। যা সুন্দরবনের বন কর্মীদের নিয়মিত টহল ও স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের নিরলস পরিশ্রমের ফল।”

বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৫৩। ১৯৮৫ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা ৪৫০। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-এফএওর বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৪ সালের বাঘের সংখ্যা ৩৬৯টি। ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪৪০। ক্যামেরায় ছবি তোলার মাধ্যমে ২০১৩ সাল ও ২০১৮ সালে বাঘ শুমারি হয়। ইনফ্লারেড নামক ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘ শুমারি হয়। সুন্দরবনে ক্যামেরা ফাঁদ পদ্ধতিতে সবশেষ বাঘ জরিপ হয়েছিল ২০১৮ সালে। সে বার শনাক্ত হয় ১১৪টি বাঘ, তার মধ্যে পূর্ণ বয়স্ক ৬৩টি , ১৮ টি ১২ থেকে ১৪ মাস বয়সী এবং ৩৩ টি ছিলো শাবক।

ওয়ার্ল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান রনথম্বোর ফাউন্ডেশন ও ওয়ার্ল্ড নেচার ইনস্টিটিউট এর তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা হার অব্যাহত থাকলে ২০৭০ সাল নাগাদ এখানে বাঘের সংখ্যা ৯৬% কমে যাবে।

২০১২ সালের ১২ জুন ঢাকার শ্যামলী থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি বাঘের শাবক ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ছেড়ে দেওয়া হয়। সুন্দরবন বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০১-২০২১ সাল পর্যন্ত সিডর, বাধক্যজনিত, গণপিটুনি ও শিকারীর হাতে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে ৩০টি বাঘ মারা পড়ে।

(সূত্র ঢাকা ট্রিবিউন)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!