পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে প্রাণ গেল ১১ জনের

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন
প্রতীকি ছবি

পঞ্চম ধাপে বুধবার দেশের ৭০৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ জেলায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। ভোটগ্রহণ চলাকালে এবং ভোট গণনার সময় এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

ভোট গণনা চলাকালে বগুড়ার গাবতলীতে স্থানীয়দের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। একই উপজেলায় দুপুরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হন। এছাড়া নির্বাচনী সহিংসতায় চাঁদপুরে দুজন এবং নওগাঁ, গাইবান্ধা, মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামে একজন করে মৃত্যু হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বগুড়ায় সংঘর্ষে নিহত ৫

ভোট চলাকালে এবং তা গণনার সময় বগুড়ায় সংঘর্ষে পাঁচজন মারা গেছেন। এর মধ্যে ভোট গণনাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নারীসহ চারজন মারা যান। আর ভোট চলাকালে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মারা যান একজন।

বুধবার রাতে গাবতলীর বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাই হাটা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা না করায় নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের কালাইহাটা গ্রামের খোকনের স্ত্রী (মেম্বার প্রার্থীর এজেন্ট) কুলসুম আক্তার, মকবুল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন, মৃত ইফাত উল্লাহর ছেলে আব্দুর রশিদ ও আব্দুর রাজ্জাক। নিহত চারজনই কালাইহাটা গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা না করে উপজেলা সদরে ব্যালট পেপার নিতে চান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে আপত্তি জানান নৌকা মার্কার প্রার্থী ইউনুছ আলী ফকির ও তার সমর্থকরা। এক পর্যায় তারা ভোট কেন্দ্র ঘেরাও করেন। এসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অন্য প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকরাও। সংঘর্ষে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা চালান পুলিশ, বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে। ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরে রাত ৮টার দিকে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এলে ভোটকেন্দ্রেই ব্যালট পেপার গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এর আগে দুপুরে গাবতলীর রামেশ্বরপুরে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হন। নিহত জাকির হোসেন (৩৫) ওই ইউনিয়নের জাইগুলি উত্তরপাড়া মৃত লয়া মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় রঙ মিস্ত্রির কাজ করতেন এবং তিনি মেম্বার প্রার্থী সাইদুল ইসলামের (টিউবওয়েল প্রতীক) সমর্থক হিসেবে কাজ করছিলেন। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোটগ্রহণ চলাকালে ইউপি সদস্য প্রার্থী মিঠু মিয়ার (ফুটবল প্রতীক) কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে সাইদুল ইসলামের (টিউবওয়েল প্রতীক) সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় জাকির হোসেনকে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর আড়াইটার দিকে জাকির হোসেন মারা যান।

চাঁদপুরে সংঘর্ষে নিহত ২

চাঁদপুরের কচুয়া ও হাইমচরে নির্বাচনী সহিংসতায় দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের হাতিরবন্ধ কেন্দ্রের বাইরে ইউপি সদস্যদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ছুরিকাঘাতে শরীফ নামে একজন নিহত হন। আরেকজনের মৃত্যু হয় হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ইশানবালা ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তার নাম এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। এছাড়া দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে একজন গুরুতর আহত হন। সন্ধ্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ।

নওগাঁয় ভোট গণনার সময় সংঘর্ষে নিহত ১

নওগাঁয় ভোট গণনার সময় সহিংসতায় একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও দুজন আহত হয়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় জেলার পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর কেন্দ্রে নির্বাচন শেষে ভোট গণনার সময় পুলিশ ও জনতার সংঘর্ষে ওই ব্যক্তি নিহত হন। তার পরিচয় জানা যায়নি। নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফতাব উদ্দিন একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

গাইবান্ধায় প্রার্থীর সমর্থককে গলাকেটে হত্যা

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় একটি ভোটকেন্দ্রে এক ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থককে ধারালো হাসুয়া দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে সাঘাটা উপজেলার জুম্মাবাড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জুম্মাবাড়ি আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের বাইরে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম আবু তাহের। তিনি একই ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মো. ওমর আলীর ছেলে।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, ভোটগ্রহণ চলাকালে বিকাল পৌনে ৩টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে ইউপি সদস্য প্রার্থী আইজল মিয়ার (টিউবওয়েল) সমর্থক আবু তাহেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রাসেল আহমেদের (পাখা) কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আবু তাহেরকে একা পেয়ে রাসেলের কর্মী-সমর্থকরা ধারালো হাসুয়া দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে। রাসেলকে উদ্ধার করে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মারা যান।

মানিকগঞ্জে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে নারীর মৃত্যু

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে এক নারীর মৃত্যু হয়েছেন। ওই কেন্দ্রে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মৃত ৫০ বছরের ওই নারীর নাম ছলেমন খাতুন। তার বাড়ি বাচামারা গ্রামে। শিবালয় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা ওই নারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে ওই কেন্দ্রে সংঘর্ষ বাধে। এর মধ্যে পড়ে ওই নারী প্রাণ হারান। তবে তিনি কীভাবে মারা গেছেন, কোনোভাবে আঘাত পেয়েছিলেন কি না এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

চট্টগ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় সমর্থকের মৃত্যু

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের হামলায় আরেক প্রার্থীর সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহরা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম অংকর দত্ত। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী টিউবওয়েল প্রতীকের সমর্থক বলে জানা গেছে। অংকরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাতরী ইউনিয়নে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!