সম্রাটও মানেননি কবির উইল

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
3 মিনিটে পড়ুন
ছবি সংগৃহীত

খ্রিস্টপূর্ব ৭০-এর ১৫ অক্টোবর জন্মানো ইতালির সর্বশ্রেষ্ঠ কবি, বিশ্বের সর্বকালের প্রথম সারির কবিকুলের নমস্য— পুবলিয়ুস ভেরগিলিয়ুস মারো। যিনি সবার কাছে ‘ভির্গিলিয়ুস’, ‘ভার্জিল’ বা ‘ভার্গিল’ নামেই খ্যাত, সেই প্রাচীন রোমান কবির অমর সৃষ্টি ‘এনিড’ হয়তো আজও পাণ্ডুলিপির আকারে বাক্স-বন্দি হয়েই পড়ে থাকত। কবি নিজে অন্তত তাই চেয়েছিলেন।

এই খ্রিস্টাব্দ শুরু হওয়ার উনিশ বছর আগে, যে বছরে কবি মারা যান, ঠিক সেই বছরেরই প্রথম দিকে মোটামুটি ভাবে লেখা শেষ হয়ে যায় এই মহাকাব্যটি। কিন্তু লেখা শেষ হলেও এই কবির যেন কিছুতেই তৃপ্তি হচ্ছিল না। তিনি যা চাইছেন, ঠিক যেন তেমনটি হচ্ছে না। তাই মনের মতো করে লেখাটা ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি ঠিক করলেন, লেখাটি নিয়ে আবার বসবেন। কাটা-চেরা করবেন। আরও সমৃদ্ধ করবেন এই মহাকাব্যটি। তাঁর মনে হল, এখানে থাকলে সেটা করা সম্ভব নয়, তাই পাণ্ডুলিপি সঙ্গে নিয়ে তিনি পাড়ি জমালেন বিদেশ ভ্রমণে। শুরু হল ঘোরাঘুরি আর সেই সঙ্গে নির্মম ভাবে কাটছাঁট এবং সংযোজন।

Untitled1 সম্রাটও মানেননি কবির উইল
সম্রাটও মানেননি কবির উইল 40

যখন মহাকাব্যটি তিল তিল করে ক্রমশ শ্রেষ্ঠত্বে পৌঁছতে চলেছে, ঠিক তখনই রোমে ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বুঝতে পারলেন, তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন না। অথচ ভিতর থেকে সায় পাচ্ছেন না, এই অবস্থায় মহাকাব্যটি পাঠকদের হাতে তুলে দেবার। খুঁত রয়ে গেছে যেন ছত্রে ছত্রে। সেটাকে ঠিক করার মতো হাতে আর সময়ও নেই। ডাক এসেছে চলে যাবার। তাই তাঁর খেদের অন্ত ছিল না। তবু উইল করে গেলেন তিনি। উইলে স্পষ্ট করে বলা হল— ‘এই পাণ্ডুলিপি কোনও দিন, কখনও কোনও মতেই প্রকাশ করা যাবে না।’

এর মাত্র কয়েক দিন পরেই খ্রিস্টপূর্ব ১৯-এর ২১ সেপ্টেম্বর এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তিনি চলে যান। কিন্তু উইল অনুযায়ী তাঁর সেই শেষ ইচ্ছে কিন্তু পূরণ করা হয়নি।

156a6db5 4e3b 4007 9557 b5fbddce8b90 সম্রাটও মানেননি কবির উইল
সম্রাটও মানেননি কবির উইল 41

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভার্জিলের ভীষণ গুণমুগ্ধ ছিলেন। ফলে সেই অনুরাগী-পাঠক চাইলেন না, তাঁর প্রিয় কবির কোনও লেখা এই ভাবে পড়ে থেকে নষ্ট হোক। তিনি আবেদন করলেন সম্রাটের কাছে। রোম সম্রাটও তাঁর সঙ্গে একমত হলেন। বললেন, হ্যাঁ, তিনি থাকলে এই মহাকাব্যটিকেও হয়তো তাঁর অন্যতম সেরা সৃষ্টি ‘একলোগুয়ে’ বা ‘গেয়র্গিক্‌স’-এর মতোই সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন করে আরও উৎকৃষ্ট করে তুলতেন। কিন্তু তিনি তো নেই! তিনি যা লিখেছেন সেটাই বা কম কী! আলোর মুখ দেখুক এই মহাকাব্য।

ফলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই হইহই করে প্রকাশিত হল জাতীয় কবির অসামান্য মহাকাব্য— এনিড। বারোটি বই জুড়ে লেখা এক মহাকাব্য, যা পরে রোমান সাম্রাজ্যের জাতীয় মহাকাব্যের মর্যাদা পায়। এবং এটাই বিশ্বের অন্যতম প্রধান মহাকাব্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!