লেখার সেই বিশাল পরিকল্পনাটি

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
3 মিনিটে পড়ুন
লেখক বালজাক

এত দিনের সাহিত্য সৃষ্টির ইতিহাসে, একমাত্র ১৭৯৯ সালের‌ ২০ মে ফ্রান্সের তুরে‌ জন্মানো‌ ফরাসি সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক বালজাক ছাড়া আর কোনও লেখক আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে আসেননি, যিনি সমগ্র দেশের বাস্তব জীবনযাত্রার ছবিটাকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করে লেখনীতে ফুটিয়ে তোলার জন্য এতখানি দুঃসাহসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।

পরে যেগুলোর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি, প্রথম দিকে উল্টোপাল্টা ভাবে অশ্লীল সেই সব বাজারি কাটতি লেখা বেনামে লিখে, গদ্যে দক্ষতা আনার পরে; ১৮৩৩ সালে বালজাক প্রথম সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর উপন্যাসে বাস্তব ছবিটাকে তুলে ধরার। এর মাত্র ন’বছর পরেই, মানে ১৮৪২ সালে এই সিদ্ধান্তের ওপরেই একটা বিরাট প্রস্তাব পরিকল্পনা প্রকাশ করেন তিনি। ‘নামকরণ’-এর জন্য খুব বেশি সময় হাতে পাননি, ফলে দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’র অনুকরণ করেই তাঁর নিজস্ব নতুন ভাবনাচিন্তার উপন্যাস-পদ্ধতির নাম রাখেন— ‘হিউম্যান কমেডি সিরিজ’। তবে এখানে তিনি দান্তের মতো দেবতা ও তাঁর অলৌকিকত্বকে না এনে, এনেছেন কেবল মানুষ এবং মানুষের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা এবং ঠকে যাওয়াকে। আরও ঠিক‌ ভাবে বললে, বলতে হয়— ১৮১৫ সালে নেপোলিয়ান বোনাপার্টের পতনের পর ফ্রান্সের জনগণের জীবনযাত্রার বাস্তবিক অ্যাখ্যানই তিনি ফুটিয়ে তোলেন তাঁর এই সব উপন্যাসে এবং নাটকে।
সব ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু সেই সিরিজ বিভক্ত হবে ক’টা সংখ্যায়? মানে কতগুলো বই তাঁকে লিখতে হবে?

সাধারণত লেখকেরা তাঁদের সিরিজের যে আয়তন বা সংখ্যা একটু ভেবেচিন্তে ঠিক করে থাকেন, বালজাকের ক্ষেত্রে তা হল না। বাড়তে বাড়তে সেটা গিয়ে দাঁড়াল একশো আটত্রিশটি বইয়ে। অনেক আগেই ঘোষণা করা লেখার এই কোটা তিনি হয়তো‌ শেষ করে যেতে পারতেন, কিন্তু পারলেন না, একমাত্র উচ্চশ্রেণীর লোকেদের মতো বড়লোকি জীবন কাটাতে গিয়ে।

h 4 লেখার সেই বিশাল পরিকল্পনাটি
লেখক বালজাক

আচমকা হাতে কিছু টাকা পাবার জন্য উনি কি না করেছেন… বইয়ের দোকান থেকে প্রেস, এমনকী সার্ভিনিয়ার পরিত্যক্ত রুপোর খনির কথা শোনামাত্র অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে ছুটে গিয়েছেন সেখানে। লোকজন লাগিয়ে চালিয়েছেন খোঁড়াখুঁড়ি। এ ছাড়াও টুকিটাকি ব্যবসা তো আছেই— এ সব করতে গিয়ে যেমন তাঁর প্রচুর সময় নষ্ট হয়েছে, তেমনি সময় গেছে শুধু প্রেমের জন্য নয়, সন্ধে হলেই নিত্যনতুন নারীসঙ্গের জন্য।

ফলে শেষ পর্যন্ত সময়ের অভাবে তিনি তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক উপন্যাস আর লিখে যেতে পারেননি। তবুও বলব, অমন পরিবেশ ও সর্বক্ষণ দোটানার মধ্যে থেকেও উনি যে একশোটি ‘হিউম্যান কমেডি’ সিরিজের উপন্যাস লিখে রেখে যেতে পেরেছেন, সঙ্গে কিছু নাটক, গল্প, প্রবন্ধও, সেটাই আমাদের কাছে অনেক। যদিও লেখার গুণে সেগুলোর বেশির ভাগই আর কমেডি থাকেনি, পরিণত হয়েছে ট্রাজেডিতে।

মাত্র ৫১ বছর বয়সে, ১৯৫০ সালে‌র ১৮ অগস্ট ফ্রান্সের প্যারিসে‌ শুধুমাত্র ‘বালজাক’ নামেই যিনি পৃথিবীখ্যাত, সেই অনরে‌ দ্য বালজাক মারা যাওয়ার পরে‌ তাঁর মতো এ রকম বিশাল একটা সিরিজ লেখার পরিকল্পনা আর কোনও লেখক কোনও দিন‌ কল্পনাও করেননি। আর কেউ কখনও করবেন বলেও মনে হয় না।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!