কালীপুজো ও দীপাবলির উৎসব হয়ে উঠুক সর্বজনীন

পাভেল আমান
পাভেল আমান
5 মিনিটে পড়ুন

উৎসব মুখর বাঙালি জাতির কাছে আজ পুজো যেন এক চিরায়ত আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। সারাবছরের দুঃখ জ্বালা বেদনা অনুতাপ বিরহ ব্যথা জীর্ণতা মলিনতা সব যেন পুজোর আগমনে এক নিমেষে বিলীন হয়ে যায়। দুর্গাপূজোর পরে আবারো হাজির কালীপুজো ও আলোর উৎসব দীপাবলি।বাঙালির শারদ উৎসব দূর্গা ও লক্ষ্মী পূজা শেষে সনাতন হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসী সকলের দুয়ারে আজ হাজির শ্যামা পূজা বা কালী পূজা। আজ উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে শ্যামা পূজা পালণ করবেন সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীরা। দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসবটি তাদের কাছে কালী পূজা নামেও পরিচিত। একইসঙ্গে আজ ঘরে ঘরে উদযাপিত হবে দীপাবলী উৎসব।কার্তিক মাসের অমাবশ্যা তিথিতে সাধারণত শ্যামা পূজা বা কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূরাণ মতে, কালী দেবী দুর্গারই আরেকটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। বাংলায় মা কালীর পূজার ধারণাটি সুপ্রাচীন। মা কালীর এই পূজার পেছনে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনীও।কালী- শব্দটি হল ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। যার অর্থ কৃষ্ণ বা গৌড় বর্ণ। প্রাচীন শাস্ত্রমতে মা কালীর ইতিহাস খনন করলে দেখা যায়- মা কালী হলো দেবী দুর্গার আরেকটি রূপ। আবার হরিবংশম গ্রন্থ অনুযায়ী মা কালী হলেন ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। সেই কারণে মা কালীর আরেকটি রূপের বর্ণনা এখানে পাওয়া যায়- ‘কাল’ অর্থাৎ ‘নির্ধারিত সময়’। তা প্রসঙ্গক্রমে মৃত্যু অর্থেও ব্যবহৃত হয়।মহাভারতে এমন এক দেবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যিনি হলেন দেবী কালরাত্রি বা কালী।কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে ‘দীপান্বিতা’ কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমকপূর্ণ। এছাড়াও মাঘ মাসের চতুর্দশী তিথিতে ‘রটন্তী কালীপূজা’ ও জৈষ্ঠ মাসের চতুর্দশী তে ‘ফলহারিনী কালী’ পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়াও ভাদ্র পৌষ মাসের অমাবস্যা তিথিতে কালীপূজা বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

জগতের সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে ‘শ্যামা’, ‘আদ্য মা’, ‘তারা মা’, চামুন্ডি’, ‘ভদ্রকালী’, ‘দেবী মহামায়া’সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।কালীপূজার দিন সনাতন ধর্মের অনুসারীরা সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের স্মরণ করেন। একে বলা হয় দীপাবলী।দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে গৃহস্থ বাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যমতে আদ্যাশক্তি কালীর রূপে কালীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।কালীর আরেক নাম শ্যামা। শ্যামা বা কালীপূজার সঙ্গে দীপাবলির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কালীপূজার দিনই দীপাবলি উৎসব পালন করা হয়। দীপাবলি বা দেওয়ালি সনাতনধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব। এটি দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়। এই দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়। কেউ কেউ রাত্রিতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় মোমবাতি জ্বালায়।দীপাবলি মানে আলোর উৎসব। আনন্দের উৎসব মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদযাপন করা। আলোকসজ্জার এই দিবস অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালার দিন। নিজের ভেতরের বাহিরের সকল অজ্ঞতা ও তমকে দীপশিখায় বিদূরিত করার দিন। প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বলিত করার দিন। দেশ থেকে দেশে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে- এই দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন; তবু মূল কথা এক। আর আধ্যাত্মিকতার গভীর দর্শনে এই দিন- আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার দিন।কালীপূজাই বলি, দ্বীপাবলিই বলি কিংবা অন্য যে পূজাই বলি না কেন, এসব পূজা ও দেবদেবীর আখ্যানের মূলে রয়েছে, অশুভের বিরুদ্ধে শুভশক্তির লড়াই বা বিকাশ। সেই দিক থেকে ধর্ম পালন বা সবাইকে নিয়ে অশুভের বিরুদ্ধে লড়াই- তা কিন্তু নিরন্তর চলছেই। এই লড়াই যেন শেষ হবার নয়। প্রতিটা পুজোয় আমাদের মনুষ্যত্ব বিবেক কে জাগ্রত করে। সেখানে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দুর্বার সংগ্রামের কাহিনী। আমরা পূজার্চনা টাকে শুধুমাত্র বাহ্যিক ভাবে না দেখে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য গুরুত্ব তাকে উপলব্ধি করি। সমস্ত ধর্মের মূল কথাই মানুষকে ভালোবাসা। কোন ধর্মই অন্য ধর্মকে ঘৃণা, বিদ্বেষ করতে শেখায় না। সব ধর্মের মূল কথাই মানবতা। আজকে যখন চারিদিকে ধর্মীয় উন্মাদনা, অস্থিরতা, হিংসা, হানাহানি তখন আমরা ভেবে অবাক হই আমরা কি প্রকৃত ধর্মের অন্তর্নিহিত অর্থ তাকে মনে লালন করতে পেরেছি আমরা শুধুমাত্র ধর্মটাকে বাহ্যিকভাবে পালন করে এসেছি। আমরা যেদিন ধর্মকে মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরে মানুষকে ভালবাসতে শিখবো, অপর ধর্মকে শ্রদ্ধা ভক্তি করব,সর্বোপরি মানবসেবাই নিজেদের নিয়ে যেতে করবো সেদিনই আমাদের পূজার্চনা ধর্মীয় বিশ্বাস সার্থক হয়ে উঠবে। আমরা আসন্ন কালীপূজা দীপাবলি ভাইফোঁটা ও ছট পুজোতে নিজেদের সংযত, সতর্ক, সাবধানী ও সচেতন করে তুলি। পরিশেষে প্রশাসনকে আবারো তার দায়িত্ব পালন করতে হবে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা বিধি প্রতিপদে মানার জন্য। পরিশেষে ধর্ম যে যার উৎসব সবার। আমরা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত সংকীর্ণতা ভেদাভেদ বিদ্বেষ সাম্প্রদায়িকতাকে দূর করে উৎসবের আবহে নিজেদের সম্পৃক্ত করি। আমরা যত বেশি একে অপরের সাথে মিলিত হব উৎসব অনুষ্ঠান পূজো পার্বণে ঈদে সবাই মিলেমিশে আনন্দ উপভোগ করব তবেই কেটে যাবে আমাদের মানসিক বিভাজন অবিশ্বাসের বাতাবরণ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প সর্বোপরি গড়ে উঠবে মজবুত বাঙালি জাতিসত্তা।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ইংরেজিতে স্নাতক। পেশা শিক্ষকতা। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখির প্রতি আকর্ষণ। বিশেষত কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ বিভিন্ন ফিচার লিখতে অভ্যস্ত। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় উদার আকাশ পত্রিকা। এরপর শব্দসাঁকো, জিলিপি, শারদীয়া আগন্তুক, আলেখ্য, আখর কথা, পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত। আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রতিদিন, উত্তরের সারাদিন, পুবের কলম, দিনদর্পন, সাত সকাল প্রভৃতি পত্রিকায় প্রবন্ধ চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এখনো ভালো লাগে কলমটাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীলতায় ভেসে গিয়ে ভাব জগতে বিচরণ করে কিছু না কিছু লিখতে। লেখালেখিটা অনেকটা জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। ক্রমশই অনুভূত লেখনিই আমার জীবনের অবশ্যিক অভিব্যক্তি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!