পুলিশি হেফাজতে মৃত ইরানি তরুণীর জানাজা-দাফন ঘিরে বিক্ষোভ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন
পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হয় মাহসা আমিনির । ফাইল ছবি

হিজাব আইন ভঙ্গের অভিযোগে ইরানের নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর হাসপাতালে মারা যাওয়া তরুণী মাহসা আমিনির জানাজা-দাফন ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে পুলিশ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মাহসার জন্মশহর সাকেজে তার জানাজা ও দাফন হয়। আশপাশের এলাকার অনেক মানুষ মাহসার জানাজায় অংশ নেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, উপস্থিত লোকজন বিক্ষোভ করছেন। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। সাকেজে কিছুসংখ্যক বিক্ষোভকারী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি ইঙ্গিত করে স্লোগান দেন। তারা স্লোগানে বলেন, “স্বৈরশাসক নিপাত যাক”। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

ইরানে জনপরিসরে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দাবিধি রয়েছে। এই বিধিগুলো কার্যকর হচ্ছে কি-না, তা তদারকি করে দেশটির নৈতিকতা–বিষয়ক পুলিশ। এই বিধির আওতায় নৈতিকতা-বিষয়ক পুলিশ দল গত মঙ্গলবার মাহসাকে তেহরান থেকে আটক করে। আমিনি তার পরিবারের সঙ্গে তেহরান সফরে গিয়েছিলেন।

আটকের পর তিনি থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, পুলিশ ভ্যানে তোলার পর আমিনিকে মারধর করা হয়। তবে ইরানি পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

নারীদের পোশাক নিয়ে ইরানের কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসির কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণার কয়েক সপ্তাহের মাথায়ই এ ঘটনা ঘটলো। উল্লেখ্য, ইসলামি বিপ্লবের পর ১৯৭৯ সাল থেকে ইরানে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরতে হয়।

সাকেজে শনিবার যে বিক্ষোভ হয়েছে, তার কিছু ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। একটি ভিডিওতে অন্তত একজনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। ভিডিওতে কাউকে বলতে শোনা যায়, ওই ব্যক্তির মাথায় ছররা গুলি লেগেছে। তবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।

টুইটারে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ইরানি সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী মসিহ আলি নেজাদ টুইটার পোস্টে বলেন, “এই হলো সত্যিকারের ইরান। মাহসাকে দাফনের পর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর ইরানের সাকেজ শহরের নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছুড়েছে। বেশ কিছু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। হিজাব পুলিশ প্রথমে ২২ বছর বয়সী এক নারীকে (মাহসা) হত্যা করেছে। আর এখন তারা শোকাহত মানুষের বিরুদ্ধে বন্দুক ব্যবহার করছে। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে।”

গতকাল প্রাদেশিক রাজধানী সানান্দাজেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন। তারা স্লোগানে স্লোগানে বলছেন, “সাকেজ একা নয়, সানান্দাজ তার পাশে আছে”। গুলির শব্দ সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীদের দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায়।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলা হয়েছে, মাহসার মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। তবে গতকাল এক চিকিৎসক বলেছেন, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে তিন সপ্তাহ লাগতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে বলছেন, মাহসাকে সম্ভবত মারধর করা হয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। তারা বলছে, এমন কিছু হয়নি। নৈতিকতা–বিষয়ক পুলিশ স্টেশনে আটক থাকা অন্য নারীদের সঙ্গে ছিলেন মাহসা। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন ফুটেজ প্রকাশ করেছে পুলিশ। এই ভিডিওরও সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। ভিডিওটি দেখতে সম্পাদিত মনে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

আগে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মাহসাকে “শিক্ষা” দিতে থানায় নেওয়া হয়েছিল। সেখানে নেওয়ার পর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
তবে স্বজনেরা বলছেন, মাহসার হৃদ্‌রোগ-সংক্রান্ত কোনো সমস্যা ছিল না।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!