কবি তুষার ভট্টাচাৰ্যের ছ’টি কবিতা

তুষার ভট্টাচাৰ্য
তুষার ভট্টাচাৰ্য
3 মিনিটে পড়ুন

ভালবাসার গান

তারপর আকাশ দিগন্তে উড়ে গেলে দুঃখের সব খড়কুটো,
ব্যর্থ কবিজন্ম জেগে ওঠে
ভোরের বকুল, রজনী গন্ধা বাতাসে;
বিবর্ণ পাণ্ডুলিপির পাতায় পাতায়
উঠে আসে কলকল ঢেউ তোলা
পায়ে ঘুঙুর বাঁধা একটা নদী,
আর রাতপরিরা নীরবে শুনিয়ে যায় ভালবাসার গান;
ব্যর্থ কবি জন্ম আবার জেগে ওঠে নতুন স্বপ্ন বুনেl

বীজ পত্রের ভিতরে

বীজপত্রের ভিতরে লুকিয়ে রাখি ভাঙাচোরা জীবনের অপূর্ণ সব
সাধ স্বপ্নগুলি;
চারপাশে হিমেল শীতার্ত বাতাসে শুনি
হলুদ শুকনো ঝরাপাতার মর্মর গান;
আহত পাখির দু’ডানায় দেখি-
লেগে আছে যন্ত্রণার কত ক্ষতচিহ্ন;
তাই ভাঙাচোরা ব্যর্থ জীবন আমি ধুলো,
বৃষ্টি, বেগুনি রোদ, বরফ, লবনাক্ত সফেন সমুদ্র হাওয়ার আঘাত থেকে,
আড়াল আবডালে লুকিয়ে রাখি বীজপত্রে,
আমার শিকড়ে;
বুকের ভিতরে জমিয়ে রাখা অনন্ত আকাশ কুসুম স্বপ্নগুলি আমি দিয়ে যাবো
শিকড়ের মায়াটানে সন্তানের হাতেl

প্রেমিক বাউল

রাত্রির নিঝুম অন্ধকার ডানার আড়ালে অমোঘ মৃত্যুর
পরোয়ানা নিয়ে যে লুকিয়ে থাকে থাকুক
আমি আর ভয় পাই না;
কেননা শৈশবের কাশবন, জল জংলা, খাল বিল, ধূ ধূ নদীচর পেরিয়ে
আমি দুরন্ত পায়ে
একছুটে চলে যাই- মাঞ্জাকাটা ভোকাট্টা
রঙিন ঘুড়ির পিছনে;
আমার হাতে ধরা থাকে রোদ্দুরের
বর্শাফলক,
আমাকে মারবে কে? আমি তো
আজন্ম এক প্রেমিক বাউল,
যে ক্ষ্যাপার মতন খুঁজে বেড়ায়
ওই দিগন্তের আকাশতলে
ভালবাসার এক খিড়কি দুয়ারl

হৃদয়ের চৌকাঠে

হেমন্তের ঝরা পাতা- আমি রাত্তির হিমেল বাতাসে শুধু চলে যাবার পদ শব্দ শুনি,
শৈশবের কলরব মুখরিত নদীর জলে ভেসে যাওয়া
কত মানুষের শব দেখি,
অন্ধকারে মৃত জোছনায় জোনাকির কান্না ধ্বনি উড়ে এলে নিরালা দুয়ারে জানালায়,
আমি ঘেমে নিয়ে উঠি;
সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে আমারও নীরবে কী তবে চলে যাবার সময় হল
একাকী ওই দূরে তিন ভুবনের পারে নিরুদ্দেশ যাত্রায়?
বিপন্ন হৃদয়ে অলীক মৃত্যুর শিহরণ জেগে উঠলেই
আমি সন্তানের রৌদ্র ধোওয়া মায়াবী মুখ দেখি,
আর তখনই বেঁচে থাকার অনন্ত বাসনা জেগে ওঠে হৃদয়ের চৌকাঠেl

হাত

অশ্রু শিশির ভেজা দু’হাত পেতেছি ভালবাসার
শ্রাবণ বাদল দিনে না দাও যদি কিছু
জোর করে খুলবো না তোমার মনের
রুদ্ধ জানালা দুয়ার
অপার দুঃখ নিয়ে চলে যাব নদীর ওপার;
সুজন বন্ধু কোনও না কোনওদিন
আবার দেখা হবে ওই নীলিম আকাশ গঙ্গায়
ততদিন পুড়বে আমার হৃদয় মন
শুধু যে অন্ধ ভালবাসায়l

গোলাপের মৃত্যু

অবশেষে সারা শহরজুড়ে রটে গেল রাজার প্রমোদ কাননে একটি গোলাপের মৃত্যু হয়েছেl রাজা, পেয়াদা, সান্ত্রী, কোবরেজ, হাকিম, উচ্ছিষ্টভোগীরা কেঁদে কেঁদে কাটাল সারাদিনl
আর গরীব গুর্বোরা মনে মনে বলল- ঠিকই হয়েছেl
রাজা তো আমাদের বাগান থেকেই পেয়াদা দিয়ে রোজ গোলাপ ছিঁড়ে নিয়ে যায়l গোলাপের কান্নায় অসহায় আমাদের ঘর দুয়ার সংসার সব কিছু ভেসে যায়l
রাজার ঘুম নেই চিন্তায় চিন্তায়l
বৃন্তচ্যুত একটি গোলাপও রাজার এত আদর, সোহাগ, চুম্বন খেয়েও বেঁচে থাকে নাl অকালেই ঝরে যায়, মরে যায়l
কোথার থেকে একটি অচিন পাখি রক্ত চক্ষু পেয়াদাদের নজর এড়িয়ে নিদ্রাহীন রাজার জানালায় চুপটি করে উড়ে এসে বলল- হে রাজন ভালবাসা কখনও জোর করে পাওয়া যায় নাl অর্জন করতে হয়l
সারা শহর জুড়ে রটে গেল- রাজার প্রমোদ কাননে একটি গোলাপও বেঁচে নেইl সব গোলাপের মৃত্যু হয়েছে l আমাদের রাজা অন্ধ, বধিরl তাঁর পাথর হৃদয়ে কোনও ভালবাসা নেইl

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!