যে রহস্য উদঘাটন হয়নি আজও

সিদ্ধার্থ সিংহ
3 মিনিটে পড়ুন
ছবি: সংগৃহীত

প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছে, তার সঙ্গে হাঁড় কাপানো শীতল বাতাস হু হু করে বইছে। গায়ে যতই গরম পোশাক থাকুক, সে সব ভেদ করে যেন শুধু শরীর নয়, শরীরের ভিতরের হাড়গোড়ও জমিয়ে দিচ্ছে। তাই আর এক পা-ও না এগিয়ে তড়িঘড়ি ‘মৃতদের পাহাড়’-এর ঢালে তাঁবু গেড়েছে ন’জন অভিযাত্রী।

গা ছমছম করা চারিদিক। কারা যেন আশপাশে ঘুরছে। রাতের অন্ধকারে কানে এসে পৌঁছচ্ছে অশুভ আতঙ্কের ফিসফিসানি। হঠাৎ তাঁবু ছিঁড়ে পাগলের মতো বেরিয়ে পড়লেন তাঁরা।

2 যে রহস্য উদঘাটন হয়নি আজও
ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যু তাড়া করেছে তাঁদের। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ওই ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মধ্যেই যে যে-দিকে পারলেন প্রাণপণে দৌঁড়তে শুরু করলেন রুদ্ধশ্বাসে। কিন্তু মরণ ঠেকানোর সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হল তাঁদের। কারও মৃত্যু হল ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে, কারও বুকের পাঁজর ভেঙে-গুঁড়িয়ে, আবার কারও মাথার খুলি ফেটে গিয়ে।

আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগে, রাশিয়ার বরফঘেরা ‘ডেড মাউন্টেন’ পর্বতে ঘটেছিল এই নির্মম ঘটনা। সময়টা ছিল ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিক।

- বিজ্ঞাপন -
3 যে রহস্য উদঘাটন হয়নি আজও
ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার তৎকালীন স্ফের্দোলোভস্ক শহর থেকে ওই অভিযাত্রীরা বেরিয়ে পড়েছিলেন উরাল পর্বতমালার উদ্দেশ্যে। বরফের মধ্যে অভিযানের জন্য স্কি করার সাজসরঞ্জাম-সহ যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছিলেন তাঁরা।

মোট ন’জনের ওই দলে ছিলেন দু’জন নারী আর সাত জন পুরুষ। তাঁদের মধ্যে দু’জন ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ আর বাকি সাত জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থী মানে একেবারে আনকোরা নয়, তার আগেও বেশ কয়েকটি পর্বতাভিযানের অভিজ্ঞতা ছিল তাঁদের। কিন্তু প্রত্যকের ভাগ্যেই সে রাতে অপেক্ষা করে ছিল ভয়ানক এক রহস্যময় মৃত্যু।

4 যে রহস্য উদঘাটন হয়নি আজও
ছবি: সংগৃহীত

তাঁরা নিখোঁজ হওয়ার কয়েক মাস পরে, আবহাওয়া একটু থিতু হলে, বেশ কয়েক দিন ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁদের মৃতদেহগুলো খুব অদ্ভুত অবস্থায় উদ্ধার করে একটি রেসকিউ দল। ৩ জন মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন আর বাকি ছ’জন ১৫ ফুট বরফের নীচে।

তাঁদের যে গর্তে পাওয়া গিয়েছিল, সেটা দেখে অনুমান করা হয়, সেটা তাঁরা নিজেরাই নিজেদের জন্য খুঁড়েছিলেন। তাঁদের গায়ে অনেকগুলো করে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পোস্টমর্টেমে ধরা পড়েছিল তাঁদের হাত-পায়ের হাড় ভাঙা। ছিল অভ্যন্তরীণ আঘাতও।

5 যে রহস্য উদঘাটন হয়নি আজও
ছবি: সংগৃহীত

কিছু মৃতদেহের গায়ে কাপড় ছিল, আবার কিছু দেহ ছিল সম্পূর্ণ নগ্ন। একজনের জিভ আর একজনের চোখ ছিল না। কেউ যেন উপড়ে নিয়েছিল। ওই রকম একটি দুর্গম জায়গায় কেন এবং কী ভাবে তাঁদেরকে এই ভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেটি আজও রহস্য।

- বিজ্ঞাপন -

সেই পাহাড়ের যে গিরিপথ ধরে ওই ন’জন অভিযাত্রী এগিয়ে গিয়েছিলেন মৃত্যুর দিকে, তাঁদের দলনেতা ইগর দিয়াতলোভের নামানুসারেই এখন সেটার নাম দেওয়া হয়েছে— ‘দিয়াতলোভ পাস’ বা ‘দিয়াতলোভ গিরিপথ।’

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
মন্তব্য নেই

Log In

Forgot password?

Don't have an account? Register

Forgot password?

Enter your account data and we will send you a link to reset your password.

Your password reset link appears to be invalid or expired.

Log in

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!