স্ত্রী হারানোর শোকে বাঁশগাছে ৩০ বছর

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
2 মিনিটে পড়ুন
ছবি: সংগৃহীত।

বাঁশবাগানের ওপর প্রায় ৩০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন দিনমজুর লকু রায়। বাঁশঝাড়ের উপরে বাঁশ, সিমেন্টের বস্তা আর পলিথিনের টুকরো দিয়ে তৈরি করা ঘরে বাকি জীবনটাও কাটিয়ে দেবেন বলেও ঠিক করেছেন তিনি। সেখানে বিষধর সাপ, কাঠবিড়ালি আর বিভিন্ন রকমের পাখিদের সঙ্গে মিলেমিশে দিনই গুজরান করেন বর্ধমানের পালিতপুর গ্রামের রায়পাড়ার এই বাসিন্দা।

আসলে স্ত্রীকে তিনি এতটাই ভালবাসতেন যে, স্ত্রীর মৃত্যুর পরে একদম ভেঙে পড়েছিলেন। তাই একদিন ঘর-সংসার ছেড়ে এখানে এসেই সন্ন্যাস জীবন যাপন করতে শুরু করেন বছর পঞ্চান্নর লকু।

তিনি যেখানে থাকেন তার চারিদিকে সবুজ ধানের জমি। মাঝখানে একফালি জমিতে বাঁশঝাড়ের ওপরে লকুর এই আস্তানা। সেই আস্তানার এদিকে ওদিকে আছে অজস্র বিষধর কেউটে সাপ। একটা ছোবলেই জীবনের শেষ হয়ে যেতে পারে। তবু তাতে তাঁর কোনও ভয়ডর নেই। উলটে বলেন, আমি তো এই সাপখোপেদের সঙ্গেই মিলেমিশে আছি।

লকু পেশায় দিনমজুর। কাজ থাকলে ভাল। আর কাজ না থাকলে সেখানকার ছোট্ট একচিলতে জমিতে তিনি জলের নালা বানিয়ে নিয়েছেন। সেখানে গিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ পাতেন। নিজের ধরা সেই মাছের ঝোলেই তৃপ্তি করে খান নিঃসঙ্গ এই মানুষটি।

জানা গেছে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তাঁর বউ মারা যায়। তার পর থেকেই মানসিক ভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েন লকু। ঘরে কিছুতেই থাকতে পারছিলেন না। বউয়ের স্মৃতি তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। তাই এই বাঁশবাগানে এসে তিনি দিন কাটাতে থাকেন।
এই গ্রামেই তিনি জন্মেছিলেন। আশপাশের সবাই তাঁকে চেনেন। তাই কেউ কিছু বলেন না। তাঁর ইচ্ছে হলে মাচা থেকে নামেন। না হলে নামেন না।

তিনি এখানে আর কত দিন এ ভাবে থাকবেন? জিজ্ঞেস করলেই তাঁর সাফ জবাব, বউ যদি কোনও দিন ফেরে, তা হলেই আমি ওখানে যাব। না হলে আমি আর ওই ভিটেয় কোনও দিন পা রাখব না। আমার জীবনের বাকি ক’‌টা দিন আমি এই বাঁশগাছের ওপরেই কাটিয়ে দেব।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!