মিয়া মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ (জন্ম: ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫১) একজন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী, যিনি বর্তমানে পাকিস্তানের ২০তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দ্বিতীয় দফায় এই পদে অধিষ্ঠিত হন ৪ মার্চ ২০২৪-এ। এর আগে, তিনি এপ্রিল ২০২২ থেকে আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বা পিএমএল-এন-এর শীর্ষ নেতা হিসেবে তিনি দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড তিনবার দায়িত্ব পালন করেন, যা তাঁকে পদটিতে সর্বাধিক সময় দায়িত্ব পালনকারী নেতা করে তোলে।
মিয়া মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ
পূর্ণ নাম | মিয়া মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ |
---|---|
জন্ম তারিখ | ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫১ |
জন্মস্থান | লাহোর, পশ্চিম পাঞ্জাব, পাকিস্তান |
রাজনৈতিক দল | পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) |
বর্তমান পদবি | প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তান (২০২৪ থেকে বর্তমান) |
পূর্ববর্তী পদ | প্রধানমন্ত্রী (২০২২–২০২৩), পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৯৭–১৯৯৯, ২০০৮–২০১৩, ২০১৩–২০১৮) |
পিএমএল-এন সভাপতি | ২০০৯–২০১১, ২০১৮–২০২৪ |
শিক্ষা | গভ. কলেজ ইউনিভার্সিটি, লাহোর (বি.এ.) |
ভাষাজ্ঞান | উর্দু, পাঞ্জাবি, ইংরেজি, আরবি, জার্মান, সিন্ধি |
পেশা | রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী |
স্ত্রী | নুসরাত শাহবাজ, আলিয়া হানি (তালাকপ্রাপ্ত), তেহমিনা দুররানী |
সন্তান | ৪ (এর মধ্যে হামজা শাহবাজ অন্যতম) |
বাসস্থান | রাইউইন্ড প্রাসাদ, লাহোর |
পরিচিতি | প্রশাসনিক দক্ষতা, “শাহবাজ স্পিড”, অবকাঠামো প্রকল্প |
সম্মাননা/স্বীকৃতি | দ্য মুসলিম ৫০০ (২০২৫)-এ অন্তর্ভুক্ত |
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
মিয়া মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ ১৯৫১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মিয়া মোহাম্মদ শরীফ একজন প্রভাবশালী শিল্পপতি ও সমাজসেবক ছিলেন, যিনি ইস্পাত শিল্পে ‘ইত্তেফাক গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানের অন্যতম সফল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তাঁদের পরিবার মূলত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর জেলার জাতি উমরা গ্রাম থেকে পাকিস্তানে এসে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর লাহোরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
শাহবাজ শরীফের শিক্ষাজীবন শুরু হয় লাহোরের বিখ্যাত সেন্ট অ্যান্টনি হাই স্কুলে। পরে তিনি গভর্নমেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটি, লাহোর থেকে কলাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী ও শৃঙ্খলাপূর্ণ ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর তিনি তাঁর পারিবারিক ব্যবসা ‘ইত্তেফাক গ্রুপ’-এ যোগ দেন এবং ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দেন।
১৯৮৫ সালে তিনি লাহোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে চেম্বার নতুন ব্যবসায়িক নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং শিল্পখাতের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। এই সময়কালে তাঁর প্রশাসনিক ও নেতৃত্বগুণ লক্ষ করে অনেকেই তাঁকে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেন।

রাজনৈতিক জীবন
১৯৮৮ সালে শাহবাজ শরীফ পাকিস্তান পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি ইসলামী জামহুরি ইত্তেহাদ (আইজেআই) থেকে নির্বাচিত হন এবং রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ ছিল তাঁর পরিবারিক প্রভাব ও ব্যবসায়িক ব্যাকগ্রাউন্ডের ফলে সহজতর। ১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হন এবং একই সঙ্গে পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের আসনেও জয়লাভ করেন, তবে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্যপদটি রাখেন। ১৯৯৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন এবং বিরোধীদলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময়ে তিনি দলীয় সংগঠনকে মজবুত করার পাশাপাশি সরকার পরিচালনার সমালোচনামূলক ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯৭ সালে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করলে শাহবাজ শরীফ প্রথমবারের মতো পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তাঁর প্রশাসনের মূল অগ্রাধিকার ছিল স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, শিক্ষার উন্নয়ন, কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে শক্তিশালীকরণ, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তাঁর সময়ে পাঞ্জাবে বড় পরিসরে হাসপাতাল নির্মাণ, সরকারি বিদ্যালয়ের সংস্কার, এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। অপরাধ দমন ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষায়ও তিনি কড়া অবস্থান নেন। তবে ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি পদচ্যুত হন এবং পরিবারসহ নির্বাসনে সৌদি আরবে পাঠানো হয়।
২০০৭ সালে তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে পিএমএল-এন পাঞ্জাব প্রদেশে জয়ী হয়। দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রশাসনিক গতিশীলতা, উন্নয়নকেন্দ্রিক কর্মপন্থা এবং জনসেবামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোযোগ দেন। তিনি স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তিনি পাঞ্জাবের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় মাপের প্রকল্প হাতে নেন। লাহোর মেট্রোবাস, অরেঞ্জ লাইন ট্রেন, শিক্ষাক্ষেত্রে ল্যাপটপ বিতরণ, ও বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর প্রকল্পগুলির দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য চীনা কর্মকর্তারা তাঁকে “শাহবাজ স্পিড” অভিধায় ভূষিত করেন।
জাতীয় নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রিত্ব
২০১৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে শাহবাজ শরীফ জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময়ে তিনি পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যার মাধ্যমে বিভিন্ন বিরোধী দলগুলোকে একত্র করে ইমরান খানের সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করা হয়। সংসদে তাঁর নেতৃত্বে সরকারী নীতির সমালোচনা, দুর্নীতির অভিযোগ, এবং আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা হয়।
২০২২ সালে পিডিএম-এর নেতৃত্বে আনা অনাস্থা প্রস্তাব সফল হলে শাহবাজ শরীফ পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এর সাথে নতুন ঋণ চুক্তিতে সম্মত হন, বৈদেশিক ঋণ পুনর্গঠন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরব ও অন্যান্য কৌশলগত মিত্রদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্জীবিত করেন। একই সাথে, তিনি জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় লোডশেডিং কমাতে এবং কৃষিখাতে ভর্তুকি বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির জন্য তাঁকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়।
২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে পিএমএল-এন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলেও শাহবাজ শরীফ পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), এমকিউএম-পাকিস্তান, আইপিপি ও আরও কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনের আয়োজন করেন, যেখানে ভারতসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। একই সাথে তাঁর সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার (বর্তমানে এক্স) নিষিদ্ধ রাখে এবং এক নতুন ডিজিটাল সেন্সরশিপ ফায়ারওয়াল চালু করে, যা ব্যবসা ও মুক্ত গণমাধ্যমের ওপর প্রভাব ফেলায় ব্যাপক সমালোচিত হয়।
এছাড়াও, সাংবিধানিক সংশোধনের নামে বিচারব্যবস্থার কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে গিয়ে সরকার বিরোধী নেতাদের হয়রানি ও নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ উঠে, যা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
আইনগত চ্যালেঞ্জ
শাহবাজ শরীফের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি ও অর্থপাচার মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে ২০২০ সালের ৭০০ কোটি রুপি মানি লন্ডারিং মামলাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অভিযোগ ছিল, তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি রুপি বিদেশে স্থানান্তর করেছেন। জাতীয় জবাবদিহিতা ব্যুরো (NAB) অভিযোগ তোলে যে এই অর্থের উৎস অজানা এবং তা অবৈধভাবে অর্জিত হয়েছে। তবে তদন্ত চলাকালীন সময়ে আদালত পর্যবেক্ষণ করে যে মামলাটির ভিত্তিতে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০২২ সালে লাহোরের একটি বিশেষ আদালত শাহবাজ শরীফ এবং তাঁর ছেলে হামজা শাহবাজকে খালাস দেন। আদালতের রায়ে বলা হয়, মামলার সাক্ষ্য ও উপস্থাপিত নথি অপর্যাপ্ত এবং যুক্তিসঙ্গত নয়।
২০১৯ সালে ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি মেইল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে দাবি করা হয়, ২০০৫ সালের ভূমিকম্প সাহায্যের জন্য যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (DFID) কর্তৃক প্রদত্ত অর্থ শাহবাজ শরীফ ও তাঁর পরিবার আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই অর্থ লন্ডনে তাদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এই অভিযোগ অস্বীকার করে শাহবাজ শরীফ মানহানির মামলা দায়ের করেন লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিস-এ।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর, ২০২২ সালে আদালত শাহবাজ শরীফের পক্ষে রায় দেন এবং পত্রিকাটি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি চুক্তির আওতায় ক্ষমা প্রার্থনা করে। ডেইলি মেইল তাদের ওয়েবসাইট থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয় এবং ভবিষ্যতে এই অভিযোগ পুনরায় না করার নিশ্চয়তা প্রদান করে। DFID-ও এক বিবৃতিতে জানায় যে তাদের নিজস্ব নিরীক্ষায় এমন কোনো অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ব্যক্তিগত জীবন
শাহবাজ শরীফ তিনবার বিয়ে করেছেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী নুসরাত শাহবাজ, যিনি তাঁর জীবনের রাজনৈতিক ও পারিবারিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সহধর্মিণী ছিলেন। তাঁদের চার সন্তান রয়েছে—সালমান, হামজা, এবং যমজ কন্যা জাভেরিয়া ও রাবিয়া। তাঁদের বড় ছেলে সালমান ব্যবসায়ে যুক্ত, এবং দ্বিতীয় ছেলে হামজা শাহবাজ একজন রাজনীতিবিদ, যিনি পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। হামজা বর্তমানে পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন আলিয়া হানি, যাঁর সঙ্গে ১৯৯৩ সালে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তবে তাঁদের বিবাহিত জীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং এক বছরের মধ্যেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
২০০৩ সালে শাহবাজ তৃতীয়বার বিয়ে করেন লেখিকা, সমাজকর্মী এবং নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার তেহমিনা দুররানীকে। তিনি My Feudal Lord নামক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তেহমিনা বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক প্রকল্পে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং পাকিস্তানে নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রেখেছেন।
শাহবাজ শরীফ বর্তমানে লাহোরের উপকণ্ঠে অবস্থিত তাঁর পারিবারিক বাসভবন রাইউইন্ড প্রাসাদে বসবাস করেন, যা রাজনৈতিক সভা ও পারিবারিক পরামর্শ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

জনমত ও স্বীকৃতি
প্রশাসনিক তৎপরতা, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য শাহবাজ শরীফ পাকিস্তানের অন্যতম সক্রিয় ও ফলপ্রসূ রাজনীতিক হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি নিজে ময়দানে উপস্থিত থেকে প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করতেন এবং সরকারী দপ্তর, হাসপাতাল ও বিদ্যালয়ে হঠাৎ পরিদর্শনের জন্য পরিচিত ছিলেন। পাঞ্জাবে তাঁর শাসনামলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং শহুরে অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। লাহোর মেট্রোবাস, অরেঞ্জ লাইন ট্রেন, আশ্রয়কেন্দ্র ও বিনামূল্যে চিকিৎসা কেন্দ্র তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে পড়ে।
চীনের সাথেও তাঁর ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগিতা গড়ে ওঠে, বিশেষ করে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে তাঁর নেতৃত্ব ও গতি দেখে চীনা কর্মকর্তারা “শাহবাজ স্পিড” শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করেন। তাঁর কাজের প্রতি অঙ্গীকার, সময়ানুবর্তিতা এবং কর্মক্ষমতা তাঁকে সাধারণ জনগণের মধ্যে একজন কার্যকর ও ফলপ্রসূ প্রশাসক হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
এই সকল গুণাবলীর জন্য ২০২৫ সালে তাঁকে দ্য মুসলিম ৫০০-এ বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিমদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা জর্ডানের রয়্যাল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত হয়।