নাটোরে তিন হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিলেন বসুন্ধরা গ্রুপ

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
6 মিনিটে পড়ুন

শুভ খান। অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জীবনের সবচেয়ে সংকট সময়টা পার করছেন। গেল ডিসেম্বর মারা গেছেন শুভর বাবা। মা গৃহিণী। পরিবারে উপার্জনক্ষম একমাত্র বড় বোন। তিনি মাস্টার্সে পড়ছেন। টিউশনি করে মাসে ৭-৮ হাজার টাকা আয় করেন।

তা দিয়েই টানাপোড়েন জীবনযাপন করছেন শুভর পরিবার। আজ সোমবার বসুন্ধরা গ্র“পের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয় তাদের। সহায়তা পেয়ে শুভ বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পরে আমরা খুব অসহায় হয়ে পরেছি।

আমার বড় বোন টিউশনি করে যেই টাকা পায় তা দিয়েই আমরা চলি। আর মাঝে মধ্যে আত্মীয়রা কিছু সাহায্য করে। আজকে আপনাদের সাহায্য দিয়ে কিছু দিন চলতে পারব। আপনাদের ধন্যবাদ আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

আরেক উপকারভোগী মো. কফের। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। কাচের খেলনা, অ্যালবাম বানিয়ে মেলায় বিক্রি করতেন। কিন্তু গত দুবছর ধরে কোন মেলা হচ্ছে না। তাই তার বিক্রিও কমেছে কয়েকগুণ। এখন সপ্তাহে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করেন।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই আয়েই চলছে তার মানবেতর জীবনযাপন। বসুন্ধরা গ্র“পের খাদ্য সহায়তা পেয়ে কফের বলেন, আমাগর অসহায় দিনে আপনারা সাহায্য করলেন খুব ভালো হইলো। বসুন্ধরার চেয়ারম্যান স্যারকে আল্লাহ হায়াত দারাজ করে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকের মাসে আজ সোমবার সকালে নাটোর জেলার সদর উপজেলায় আরোও ৪০০ অসহায় কর্মহীন পরিবার, সংবাদপত্র হকার ও পরিবহন শ্রমিক পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে কালের কন্ঠ শুভসংঘ।

বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা দেওয়া হয়। জেলার শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

বসুন্ধরা গ্রুপের দেখানো পথে যেন অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসে এমন আশা ব্যক্ত করে নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কন্ঠ শুভসংঘের আজকের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।

আমরা আশাকরি বসুন্ধরা গ্রুপ যে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছে তা আরো সম্প্রসারিত হবে। আমাদের যারা কষ্টে রয়েছেন, কর্মহীন রয়েছেন তাদের জন্য এই খাবার কিছুটা হলেও কষ্ট লাঘব করবে। করোনা যেভাবে কমছে আমরা আশা করি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব। বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য আপনারা শুভকামনা রাখবেন।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, লকডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ পরিচালনের সময় অনেকেই কর্মহীন হয়ে পরেছেন। এই কঠিন সময়ে যখন মানুষের খাদ্য প্রয়োজন সেই সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কন্ঠ শুভসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী।

যারা সাধারণ মানুষ এই সময়টা কর্ম করতে পারেনি তাদের জন্য এই সহায়তা ভালো কিছু। যেই সময় অসহায় মানুষের যেটা প্রয়োজন বসুন্ধরা গ্রুপ তখন সেই উদ্যোগ নিচ্ছে তাই আমি তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সভাতি রেজাউল করিম রেজা,কালের কন্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, জেলা ক্রিড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ মাহদী আশরাফ জীবন,

নাটোর জেলা শাখার সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুষ্ময় দাসসহ সোহেল রানা, শিশির কুমার, প্রান্ত শীল, বর্ষা খাতুন, সাজেদুল ইসলাম, মাহতিম রাসেল, বন্যা খাতুন, তমা ভট্টাচার্য, মহিমা খাতুন, ইরিন, রায়হান, রানা খান।

অপরদিকে , আজ সোমবার দুপুরে জেলার নলডাঙ্গা উপজেলায় নলডাঙ্গা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় ৪০০ অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘের সদস্যরা। । এছাড়া সকলের মাঝে মাস্ক বিতরণ ও করোনা সুরক্ষায় সচেতনামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহসিন বলেন, আজকে বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কন্ঠ শুভসংঘের উদ্যোগে ৪০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ হয়েছে।

এই মহান উদ্যোগে জন্য আমি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি সারা দেশের ২ লাখ মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এভাবে যদি আমাদের দেশের বড় কোম্পানি গুলো এগিয়ে আসে তবে এই মহামারি সময় খুব দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারব।

এতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে প্রত্যয় সেটাও এগিয়ে যাবে। এই দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে কালের কন্ঠ শুভসংঘ যেভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এরজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আশাকরি আপনাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের উপজেলায় অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘকে ধন্যবাদ ধন্যবাদ জানাই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের নলডাঙ্গায় ত্রাণের বিষয়টি আমি সমন্বয় করি। তাই কারো কোন খাদ্যের প্রয়োজন হলে আমাদের জানাবেন। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো বড় শিল্পগোষ্ঠীরাও যদি এগিয়ে আসে তবে করোনার এই সময়ে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, কালের কন্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, নলডাঙ্গা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ মাহদী আশরাফ জীবন।

নাটোর জেলা শাখার সভাপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুষ্ময় দাস । সোমবার বিকেলে সিংড়া বিকেলে সিংড়া উপজেলার দমদমা পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে আরোও ৪০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়।

কালের কন্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন ,নাটোর জেলার তিন হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্টি বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত বসুন্ধরা গ্রুপ তিনদিন ধরে করোনায় কর্মহীন জেলার ৭টি উপজেলার তিন হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে।

আজ সোমবার নাটোরের নলডাঙ্গা ,সিংড়া ও নাটোর সদর উপজেলার এক হাজার ২ শ পরিবারকে মাঝে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, লালপুর, বাগাতিপাড়ায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা দেওয়া হয়

করোনা সংকটের মধ্যে খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশি কর্মহীন-দরিদ্র এসব পরিবার। মহামারী সংকটের মধ্যে বসুন্ধরার উপহার অসহায় দরিদ্রদের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রশংসা করেন জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনিক কর্মর্তারা।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!