অভিযোগ ছাড়া মা-ছেলেকে ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনা বেআইনি

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন

ঢাকার কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠে থানাভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় “তেঁতুলতলা মাঠ সুরক্ষা” আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না ও তার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রাখার ঘটনাকে বেআইনি বলে উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন অধিকারকর্মীরা। সেই সঙ্গে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই কলাবাগানের খেলার মাঠে থানা নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য একজন কর্মী ও তার ছেলেকে আটক করা সংবিধানের লঙ্ঘন বলেও মনে করেন তারা।

সোমবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণ ইস্যুতে “এলাকাবাসীকে হয়রানি ও আটকের তীব্র প্রতিবাদে” ডাকা সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, প্রতিবাদের মুখে গতকাল মধ্যরাতে থানা কর্তৃপক্ষ সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে ছেড়ে দিলেও মাঠ রক্ষায় তিনি আর আন্দোলন করবেন না বলে বেআইনিভাবে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রীন, আমরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সোসাইটিসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইকবাল হাবিব।

তিনি বলেন, “আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে, কোনো আনুষ্ঠানিক আইনি অভিযোগ ছাড়াই সৈয়দা রত্না ও তার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে আটক করা আইন ও সংবিধানের চরম লঙ্ঘন।”

রবিবার (২৪ এপ্রিল) অনেক চেষ্টা করেও কেন কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে পৌঁছানো যায়নি তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও দাবি করেছেন অধিকারকর্মীরা।

রবিবার তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী রত্না খেলার মাঠের বাইরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় প্রতিবাদ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিম করার সময় তিনি এবং তার ছেলে আটক হন। পরে কলাবাগান থানায় সৈয়দা রত্নার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করে। মামলায় রত্নার বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এছাড়া, নির্মাণ কাজে বাধা দেওয়ার জন্য রত্না কিছু শিশুকে নিয়োগ করেছিলেন। একই সঙ্গে সৈয়দা রত্না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। সৈয়দা রত্নার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানোর কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা করা হতে পারে বলে জানানো হয়।

অধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে প্রায় ১৩ ঘন্টা আটক থাকার পর মুচলেকা নিয়ে সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, “সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে দুপুরের দিকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে রত্না মুচলেকা দেন তিনি পুলিশের কাজে আর বাধা দেবেন না। পরে রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।”

এর আগে এ মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় এবং নির্মাণকাজের ভিডিও ধারণ করায় রবিবার বেলা ১১টার দিকে সৈয়দা রত্নাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁর ছেলেকেও ধরে নেওয়া হয়। দুজনকে রাখা হয় কলাবাগান থানায়।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজের প্রতিবাদে রত্না ও তার ছেলের জোরালো ভূমিকার কারণে তাদের আটক করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে ৫০ জনের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় গত ৩১ জানুয়ারি থানা নির্মাণের জন্য খেলার মাঠের জমিটি ডিএমপির কাছে হস্তান্তর করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল মাঠ থেকে শিশুদের সরিয়ে কাঁটাতার দিয়ে জায়গাটি ঘেরাও করে দেয়।

এরপরে এলাকার বাসিন্দারা সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং খেলার মাঠ ধরে রাখার আশা ছেড়ে দিতে অস্বীকার করে। তাদের দাবি, মাঠটি আগের মতোই রাখা উচিত। এলাকার শিশুরা যাতে সেখানে খেলাধুলা করতে পারে সেজন্য তারা কয়েক মাস ধরে খেলার মাঠ রক্ষায় বিক্ষোভ করে আসছে।

সোমবার এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “বিকল্প একটা খোঁজার জন্য মেয়রকে বলেছি, সবাইকে বলেছি। যদি না পাওয়া যায় তাহলে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীতে এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!