আরজি কর মামলায় প্রকৃত দোষীদের সাজা চেয়ে সরব প্রতিবাদীরা
প্রায় পাঁচ মাস আগে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আন্দোলনের ঝড় উঠেছিল। রাস্তায় নেমে বিচার চেয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। “জাস্টিস ফর আরজি কর” স্লোগানে দেশব্যাপী প্রতিবাদ জোরালো হয়। সঞ্জয় রাইকে সোমবার শিয়ালদহ আদালত আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেছে। তবে, এই মামলার আইনি প্রক্রিয়ার সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে নানা মতামত উঠছে।
প্রতিবাদীদের দৃষ্টিকোণ
রাত দখলে রাস্তায় নেমে আন্দোলনকারীরা বলছেন, বিচারের আশায় তারা রাস্তায় নেমেছিলেন, কিন্তু এখন তাদের অনেকেরই মনে হচ্ছে যে তারা কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন না। এক প্রতিবাদী, মৌ মাইতি জানান, “আশা করেছিলাম, দৃষ্টান্তমূলক কিছু হবে, কিন্তু এটি হতাশাজনক।”
সৌম্য গাঙ্গুলি, হাওড়ার এক বাসিন্দা, জানালেন, “এই আন্দোলন শুধুমাত্র আরজি করের ঘটনা নয়, বরং নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে ছিল। আমরা মনে করেছিলাম যে আন্দোলনের কারণে কিছু পরিবর্তন আসবে, কিন্তু সেটা হয়নি।”
আন্দোলনের প্রভাব এবং আদালতের রায়
শিয়ালদহ আদালতের রায়ের পর, রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী জানিয়েছেন, তিনি দোষীকে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষপাতী, এবং তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, “এটা শেষ নয়, সুপ্রিম কোর্টে নতুন দিক খুলে যেতে পারে।”

অভিযোগ ও অসন্তোষ
অথচ আন্দোলনকারীরা অভিযোগ তুলেছেন যে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর গাফিলতির কারণে পুরো ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়নি। ড. অনিকেত মাহাত জানিয়েছেন, “কেন শুধু সঞ্জয় রাইকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে? সিবিআই কেন প্রমাণ দিতে পারল না?”
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, আরজি কর আন্দোলনটি সিস্টেমের বিরুদ্ধে জনসাধারণের সংগ্রাম ছিল। অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, “এটি আরজি কর আন্দোলনের ব্যর্থতা নয়, বরং সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের শক্তি। আন্দোলনটা শাসকদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার একটা বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছিল।”
সামাজিক সাফল্য
সামাজিক কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, “এটি কোনও ব্যর্থতা নয়। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গের ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনমূলক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। তবে, এই আন্দোলন মেয়েদের এগিয়ে আসতে প্রেরণা দিয়েছে, যা বড় সাফল্য।”
আন্দোলনকারীরা বলছেন, “আমরা বিচার পাব, তবে আমাদের লড়াই চলবে।”