আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একাল সেকাল

পাভেল আমান
পাভেল আমান
4 মিনিটে পড়ুন

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একাল সেকাল

“বিশ্বের কিছু মহান সৃষ্টি চির যা কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর” -বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনায় নারীর বীরত্বগাঁথায় কোন বাহুল্য নেই।

নারীর ভূমিকা সমাজ সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে সমন্তরাল। সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষের পারিপার্শ্বিক নারীর ভূমিকা কোন অংশে কম নয়। বলা যায় একে অপরের পরিপূরক। মানবচক্রের যে মাধ্যমে আমাদের এই পৃথিবীতে আসা, তার একটি অন্য মাধ্যম এই নারী। এই নারী কখনো আমার মা, কখনো আমার বোন আবার কখনো সহধর্মিনী। হাজার সম্পর্কের মাঝে তাদের সঙ্গে আপনার আমার সম্পর্ক অন্যতম।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একাল সেকাল
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একাল সেকাল

সভ্যতার সৃষ্টি লগ্ন থেকেই এই অনাবিল, মধুর, আত্মিক সম্পর্ক প্রবাহমান ও গতিশীল। প্রতিমুহূর্তে নিজেকে অন্যের সুখে হাসতে হাসতে বিলিয়ে দিতে পিছপা হন না এই নারী। তাই হয়তো একাই ভালোবাসে সমস্যা ও সমাধানের সমস্ত দায়-দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেই। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার করেই চলে এই নারীর জীবন। যার জন্য উৎসর্গ করা যায় বছরের প্রত্যেকটি দিন। তাকে উদ্দেশ্য করে যা-ই করা হয়, তা-ই হয়তো তার করা কাজের কাছে কম। তাই তার উদ্দেশ্য করে আর তাকে সম্মান জানাতে বিশ্বে একটি দিন পালিত হয় নারী দিবস হিসেবে। সেই দিনটি হল ৮ মার্চ। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন ৮ মার্চ তাদের শ্রদ্ধা সম্মান এর প্রতি নিবেদিত।

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় এর পশ্চাতে ও আছে নারীর এক বিশাল আন্দলনের গল্প। নারী দিবসের ইতিহাসের গোড়ার কথাটি হল, শ্রমিক নারীর কাজের সময়, ছুটি, সম্মানজনক বেতনের দাবিতে আন্দোলন। ১৮৫৭-র ৮ মার্চ আমেরিকার বস্ত্রশিল্পের নারী শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে লড়াই পশ্চিমি দুনিয়ায় আলোড়ন তোলে। পরবর্তী কালে যুক্ত হয় মেয়েদের ভোটের অধিকারের দাবি। এই সমস্ত দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে ১৯১০ সালে কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মহিলা সম্মেলনে ৮ মার্চ নারী দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয় এবং ১৯১১ থেকে তা পালন শুরু হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একাল সেকাল
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একাল সেকাল

ভারতেও পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে মেয়েদের অর্থনৈতিক, সামাজিক অধিকারের দাবিতে নারী দিবস পালন শুরু হয়। এর পাশাপাশি পণ, ধর্ষণ, মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গার্হস্থ্য হিংসা, পরিবারে মেয়েদের অবস্থান ইত্যাদি বিষয় নারী আন্দোলনের দাবির অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে এবং প্রতি বছর এই সব দাবি আদায়ের আওয়াজ তোলা হয় নারী দিবসে।

বর্তমান অতিমারির সংকটে চারিদিকে যখন মানবজাতি বিপর্যস্ত, ছত্রভঙ্গ, বিধ্বস্ত, শংকিত ঠিক তখনি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নারী জাতির আর্থসামাজিক কাঠামো অবনমন এর দিকে। অতি মারির দুর্বার ছোবল তাদের প্রগতি, ঐক্য, বিকাশ, লড়াই, প্রতিবাদ, আন্দোলন, সংহতি সমস্ত কিছুকে যেন নড়ে দিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী নারী দিবস উদযাপন এবং নারী দিবসের গুরুত্ব। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একাল সেকাল
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একাল সেকাল

আমরা সবাই বুদ্ধিজীবী, প্রগতিশীল, মুক্তমনা, নারীবাদী চেতনা জাগরণ নিয়ে অনেক বড় বড় গালভরা কথা বলি কিন্তু বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও তাদের উত্তরণের অভিমুখে পূণ করিনা। সবকিছুতেই আমাদের বিশাল ফাঁকফোকর। শ্রেণী, লিঙ্গ, শ্রম ও বৈষম্য, বিভাজন চারিদিকে ঘটে চলেছে তবুও খুব একটা এর বিরুদ্ধে আমাদের সুশীল সমাজের মধ্যে প্রভাব, প্রতিরোধ প্রতিবাদ চাক্ষুষ হয়না

আন্তর্জাতিক নারী দিবস সেদিন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে যখন আমরা প্রতিটি নারীর দুঃখ কষ্ট জ্বালা যন্ত্রণা, ব্যথা বেদনা, চাহিদা সমস্ত কিছুকে আমাদের আন্তরিক অনুভূতি, টান, নিষ্ঠা, মহানুভবতা, কর্মমুখী মানসিকতা দিয়ে উপলব্ধি করব। সেই পরিকল্পনার সফল রূপায়নে আমাদের সর্বপ্রথমে আবশ্যিক গতানুগতিক, রক্ষণশীল, সেকালের একপেশে পুরুষতান্ত্রিক ভাবনাকে ঝেড়ে ফেলে সাম্য, মানবিক, দায়বদ্ধতার জাগরণ ঘটিয়ে প্রকৃত মনুষ্যত্বের গুণাবলীতে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের যথাযোগ্য প্রাসঙ্গিকতা গুরুত্বের বার্তা সমগ্র নারীজাতির পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক সমাজেও প্রকৃত উপলব্ধি করণে ছড়িয়ে পড়বে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ইংরেজিতে স্নাতক। পেশা শিক্ষকতা। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখির প্রতি আকর্ষণ। বিশেষত কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ বিভিন্ন ফিচার লিখতে অভ্যস্ত। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় উদার আকাশ পত্রিকা। এরপর শব্দসাঁকো, জিলিপি, শারদীয়া আগন্তুক, আলেখ্য, আখর কথা, পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত। আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রতিদিন, উত্তরের সারাদিন, পুবের কলম, দিনদর্পন, সাত সকাল প্রভৃতি পত্রিকায় প্রবন্ধ চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এখনো ভালো লাগে কলমটাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীলতায় ভেসে গিয়ে ভাব জগতে বিচরণ করে কিছু না কিছু লিখতে। লেখালেখিটা অনেকটা জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। ক্রমশই অনুভূত লেখনিই আমার জীবনের অবশ্যিক অভিব্যক্তি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!