একজন সাধারণ নারীর উদ্দ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

জান্নাতুল মিকাহ্
জান্নাতুল মিকাহ্
6 মিনিটে পড়ুন

আমি জান্নাতুল মিকাহ্ লোপা, বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বাসিন্দা। আমি সোনার তরী নামক ফেইসবুক পেজের স্বত্বাধিকারী, কাজ করছি আমাদের সিরাজগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী তাঁত পন্য নিয়ে।

 আমি একজন নারী উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তাকে অনেকভাবে সংজ্ঞায়িত করা করা যায়। আমার মতে যে ব্যক্তি একটি নতুন ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু করে তাকে উদ্দ্যোক্তা বলা হয়।

আমার কাছে উদ্দ্যোক্তা মানে যে নিজে কিছু তৈরি করে বা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য গুলোকে আবার নতুন ভাবে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করে। আমার তৈরী বস্ত্র এবং হস্ত শিল্পে গামছাকে নতুন ভাবে ব্যবহার করছি যেমন গমছা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের গহনা তৈরি করছি, এছাড়া নিজস্ব নকশায় গামছা পাঞ্জাবি, কুর্তি, ব্লাউজ তৈরি করছি। যারা সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা থেকে বিভিন্ন পণ্যের উদ্ভাবন করে তারাই উদ্দ্যোক্তা। 

একজন চাকুরীজীবি অন্যের অধীনে একটি নিদৃষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে কাজ করে থাকেন। আর একজন উদ্দ্যোক্তা নিজেই নিজের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন সেই থাকে একাধিক ব্যক্তির কর্মসংস্থান করে দিতে পারেন। 

একজন উদ্দ্যোক্তা অনেক উদ্দ্যোক্তা তৈরি করতে পারে এবং অনেক অসহায় নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করে দিতে পারেন। 

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অন্যকে বস না বানিয়ে বরং নিজে বস হোন তাই চাকরি চিন্তা না করে একজন উদ্দ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করুন।”

একজন চাকুরীজীবির মতো একজন উদ্দ্যোক্তার ৯টা-৫টা বলে কোন কর্মদিবস নাই, বা সরকারি ছুটির মত তাদের কোন নির্দিষ্ট কর্মবিরতি নাই। উদ্দোক্তাদের জীবনের পঞ্জিকায় পুরোটাই পরিশ্রম, আর পরিশ্রম করলে সফলতা সুনিশ্চিত।

একজন নারীকে উদ্দ্যোক্তা হতে হলে সবসময় মানষিক ভাবে যে প্রস্তুতি টা নিয়ে রাখতে হবে সেটা হলো সবরকম বাধা কে উপেক্ষা করে এগিয়ে য়াওয়া। কারণ একজন নারী উদ্দোক্তার প্রথম বাধা আসে তার পরিবার থেকে। তাই একজন উদ্দ্যোক্তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হওয়া। অল্প পুঁজিতে উদ্দ্যোগ শুরু করা এবং প্রথমে  লোকসানের চিন্তা মাথায় রেখেই  উদ্দ্যোগ চালিয়ে যাওয়া।

একজন নারী যখন উদ্দ্যোক্তা হতে চায় তখন সমাজের নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। যেমন, আমাকে নানা রকম বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। অনেকে বলতো একটাও চাকরি জোটাতে পরেনি, তাই এখন কাপড় বিক্রেতা হয়েছে।আবার কেউ কেউ বলতো অনলাইনে পণ্যের ছবি না দিয়ে, মেয়ের স্কুলে নিয়ে গিয়ে পণ্য নিয়ে বসো অনেক বিক্রি করতে পারবে। এরকম আরো অনেক কথাবার্তা আমাকে শুনতে হয়েছে, কিন্তু কেউ আমাকে আমার লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি। তাই আজ আমি একজন সফল উদ্দ্যোক্তা। 

একজন সাধারণ নারীর উদ্দ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প
একজন সাধারণ নারীর উদ্দ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 39

আমার উদ্দ্যোক্তা হওয়ার শুরুর গল্পটা ছিল একটু আলাদা, কারণ আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে আমি একজন উদ্দ্যোক্তা হতে পারি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। মা ছিলেন একজন সরকারি চাকুরীজীবি। তাই পরিবার থেকে সবসময় সবাই চাইতো ভালো একটা সরকারি চাকুরী পেলেই জীবনটাকে সুন্দর ভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।  আমিও সেই ভাবেই চেষ্টা করেছিলাম। বিভিন্ন সরকারি চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। তারপর এক সময় আমার সরকারি চাকরির বয়স চলে গেল কিন্তু চাকরি হলো না। পরিবারের সবার নেগেটিভ কথাবার্তা আমাকে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। 

সেই কঠিন মুহূর্তে আমাকে ডিপ্রেশনে থেকে বের করে আনার কেউ ছিলোনা। হঠাৎ একদিন নিজেই চিন্তা করলাম আমাকে বাঁচতে হবে এবং বাঁচতে হলে আমাকে কিছু একটা করতে হবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একজন  উদ্দ্যোক্তা হবো এবং কাজ করবো আমাদের সিরাজগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী তাঁত পণ্য নিয়ে। সেই থেকে শুরু হলো আমার পথ চলা। 

ফেসবুকে একটা বিজনেস পেইজ খুললাম আর তার নাম দিলাম “সোনার তরী” যেতেতু আমি শাহজাদপুর উপজেলার মেয়ে। 

আমরা সবাই জানি এখানে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়ি অবস্থিত এবং উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে বড় তাঁতের কাপড়ের হাট বসে আমাদের শাহজাদপুরে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সোনার তরী কাব্যগ্রন্থটিও আমাদের শাহজাদপুরেই লিখেছিলেন। তাই আমি আমার উদ্দ্যোগের নাম দেই সোনার তরী এবং কাজ শুরু করি আমাদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত পণ্য নিয়ে। কাজ করতে করতে দেখা পাই দেশি পন্যের একটা প্লাটফর্ম যার নাম Women and E-Commerce Trust (WE), এই উই এর দেখা পাওয়ার পর থেকে আমার জীবনের একটা নতুন মোড় খুঁজে পেলাম। উই দেশি পণ্য এবং উদ্দ্যোক্তা তৈরির একটা প্লাটফর্ম। উই এর হাত ধরে আমি ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করতে শুরু করলাম। বিভিন্ন গ্লোবাল ট্রেনিং, মাস্টার ক্লাস, সফ্ট স্কিল ট্রেনিং এর মাধ্যমে এগিয়ে যেতে শুরু করলাম নিজের লক্ষ্যের দিকে। নিজেকে নতুন করে চিনতে শুরু করলাম। উই ১৩ লক্ষ সদস্যের একটি পরিবার যেখান থেকে অনেকের সাথে পরিচিত হতে থাকলাম। নিজের পরিচয় তৈরি হলো উই এর হাত ধরে। আজ আমি আমার নামের পাশে একটা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছি উই এর কারণে। আজ আমি উই এর একজন সাবস্ক্রাইবার এবং তৃতীয় বারের সিরাজগঞ্জ জেলা সহ প্রতিনিধি। উই থেকে পেয়েছি সন্মাননা নবম উইন্সপায়ার গ্রান্ট যেটা ছিল সিরাজগঞ্জ জেলার প্রথম। পেয়েছি স্মার্ট নারী উদ্দোক্তা গ্র্যান্ড। আজ আমি গর্বিত  কারন আমি একজন সফল নারী উদ্দোক্তা। এটা আমার পরিচয়। 

একজন নারীকে এই সমাজে টিকে থাকতে হলে তার নামের পাশে একটা পরিচয়ের খুব প্রয়োজন। একজন নারীকে সাবলম্বী হতে হলে উদ্দোক্তা হওয়া উচিৎ। 

নতুন উদ্দ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য বলতে চাই আপনার উদ্দ্যোগকে আপনি নিজের সন্তানের মতো করে ভালোবাসুন। সততার সাথে ধৈর্য ধরে পরিশ্রম করুন। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হোন যেন কোন বাধা আপনাকে থামিয়ে দিতে না পারে। কাজ করুন দেশি পন্য নিয়ে এবং হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য গুলোকে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। ইনশাআল্লাহ সফলতা আপনার কাছে আসবেই।

✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একজন উদ্যোগতা
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!