ফুটবল, নদ, উঠোনে এবং অন্যান্য কবিতা

অঞ্জলি দেনন্দী মম
অঞ্জলি দেনন্দী মম
4 মিনিটে পড়ুন
সাময়িকী আর্কাইভ

ফুটবল

বেশি খাই লাথি।
মাথাতেও উঠি।
মাঠে আমার মাতামাতি।
পায়ে পায়ে পায়ে ছুটি।
খেলোয়াড় প্রিয় সাথী।
গোলের কোলে করি লুটোপুটি।
ফুটবল খেলে বিশ্বের সকল জাতই।
খুব খ্যাত “গোল্ডেন বুট” ই।


গোষ্ঠ পাল, মেসি, মারাদোনা, পেলে –
অমর হলেন ফুটবল খেলে।
মেয়েরাও ফুটবল খেলে,
ঠিক যেমনটি খেলে
দুনিয়ার যত ছেলে।
খেলা চলে রেফারীর হুইসেলে।
দল খুশি শিল্ড, কাপ পেলে।


মনটা একটু খারাপ হয়, হেরে গেলে।
তবে কেউই পালায় না খেলা ফেলে।
ওদের বড় মনবল।
ওরা খেলোয়াড় দল!
খুব তেজী পদতল।
প্রিয় একখানি ফুটবল।

নদ

নদ বয়ে চলে।
কুলু কুলু কুলু ধ্বনি জলে।
এগিয়ে চলার কথা বলে।
আপন গতি – শক্তি – বলে,
ও ছুটে যায় অনন্ত আকাশ তলে।
মলয় মাখামাখি কল্লোলে কল্লোলে।
কচুরি পানা ভাসে দলে দলে দলে।
নদের বুকে, মৃতের চিতাও জ্বলে।
দাউ দাউ দাউ – তপ্ত অনলে।
দামোদর নদের তীরে সন্ধ্যা ঢলে।


চাঁদের প্রতিচ্ছবি নদের কোলে, টলটলে।
নদের পাড়ে জ্যোৎস্না হাসে সফলে।
মৎস্য সুখে থাকে জলের অতলে।
চাষী নদের জল দেয় ক্ষেতের ফসলে।
নদ-জল নৌকোর গায়ে ছলছলে।
কত কি যে শেষ হয় বন্যার কবলে!
তবুও কি দামোদর নদের হৃদয় গলে?

উঠোনে

আমাদের গাঁয়ের বাড়ির উঠোনে।
বোনের কথা চলছে ফোনে।
মাদুর পেতে বসে, খুশি মনে,
হাসে, কথা বলে সকলে মিলে।
পিসিমা চটের আসন বোনে।
ছড়া পড়ে চার বছরের ভাই বিলে
ঢোঁক গিলে গিলে গিলে।
জেঠিমা পান খায়।
ঠাকুমার ফাটা পা’য়
আলতা পরায় নাপিত খুড়ি;
ঠাকুমা সত্তর বছরের বুড়ি।


কাকিমা ছাড়ায় মটরের খোসা।
পাশে বসে বাঘা, কুকুর ওসে পোষা।
গাঁয়ের একান্নবর্তী পরিবার।
বড় প্রিয় এ সংসার, আমার বাবার।
এ সংসার প্রাণাধিক, আমার মা’র।
আমি এক সদস্য তার।
ক্ষেতে চাষ করি – ফসল ফলাই।


নাম আমার বলাই।
রাতে আমি বাজাই সেতার।
আমরা সকলেই সুখী এখানে।
শহুরে দূষণ নাই যেখানে,
আমরা শুদ্ধ শ্বাস নিই সেখানে।
আমাদের মাটির উঠোন বড়োই সুবোধ।
হাওয়া খেলে এখানে ঘুরে ঘুরে।


পাখি কত করে আমোদ,
গায় আপন সুরে সুরে সুরে,
বসে উঠোনের গাছে গাছে গাছে।
আনন্দে ডালে ডালে ডালে নাচে।
অমূল্য এ উঠোন আমাদের;
ও যে আমাদের বড় সাধের।

ফুটবল, নদ, উঠোনে এবং অন্যান্য কবিতা
ফুটবল, নদ, উঠোনে এবং অন্যান্য কবিতা 41

ভার

পৃথিবীর ভার
হয় তো কেউ বহন করছে!
বাসুকী!
হয় তো বা হারকিওলিক্স!
কি জানি?
হয় তো বা কেউই বহন করছে না!
ঐ যে স্টেশনের মুটে,
সে তো ভার বহন করেই।
আবার ঐ যে নদীর বুকে
ঝুলন্ত সেতুটি;
ও তো কত ভারই না বহন করছে।
হাওয়াই জাহাজ, জল জাহাজ;
কত কত ভার বহন করছে।


আর মা – সে যে গর্ভে তার
সৃষ্টির সেরা ভারটি বহন করছে।
তবে কি জানো?
হে জীবন!
সবচেয়ে ভারী ভার কি?
বাবার হাতে করি থেকে কেটে
নামানো ঝুলন্ত, যুবক,
একমাত্র ছেলের মৃত দেহ।


বৃদ্ধ মায়ের কোলে শুয়ে থাকা
ছয় ফিট লম্বা, সি, এ. পাস
সেই পুত্রটির নিথর, শ্বাসহীন শরীর।
পিতার সত্তর বছর বয়সী কাঁধে
ত্রিশ বছরের সুপুত্রের ডেড বডি।
প্রাণহীন ছেলের দেহের ভার
সবথেকে ভারী, তার বাবা, মা’র।

ফুটবল, নদ, উঠোনে এবং অন্যান্য কবিতা
ফুটবল, নদ, উঠোনে এবং অন্যান্য কবিতা 42

বাচ্চাবোল-বাব্বোল

এমন সব সৃষ্টি হয়
মন-খ্যাপামির গাছে ।
খিলখিলিয়ে হেসে তার ডালে
মজার মজার দুস্টুমী সব নাচে।
পায়ে তার বৃষ্টি-নূপুর বাজতে রয়।
তবলা বাজায় বজ্রপাত
ভয়ঙ্কর ছন্দ, তালে।


বিদ্যুৎ চমকে দেয় তারে সাথ।
সেই গাছে পা ঝুলিয়ে বসে বসে
কিম্ভুত আর কিমপেত্নী যত
কেঁদে বাসায়, নদীর বন্যার মত।
স্বপ্ন-কুঁড়ি, ফুল আর ফল হয়ে ফলে
সেই অদ্ভুত গাছে।
সেই সে গাছ, সব মনেতেই আছে।
লোভীর জিভের জলে
সেই গাছ বেঁচে থাকে।
শিকড় তার আকাশের দিকে বাড়ে।
সেই গাছটি তার পাতা যত
নিচের দিকে রাখে।


সেই গাছের কোটর থেকে উঁকি মারে
রাতের নক্ষত্র কত কত কত।
চাঁদ সে গাছের টং-এ বসে গায় গান।
সে ফেলে হেঁচ্ছ, গাইতে গাইতে।
সে গাছের শাখায় নাও বাইতে বাইতে
ব্যাঙ আর সাপ দেয় স্লোগান।
“আমরা বন্ধু, এক মন, এক প্রাণ।”


সে গাছের ফুলের ওপর উবু হয়ে বসে,
ঝিঁঝিঁ পোকা রাঁধে নানান স্বাদের পিঠে।
কোনটা নোনতা, কোনটা আবার মিঠে।
সে গাছের ফলের ওপর পড়ে খসে
দিনের বেলায় সূর্য বুড়োর দাঁত।
সেই সব যত দাঁত
ফলের বীজ হয়।
বীজ-সংখ্যা অগণিত, কত কত কত।
সেই সব বীজ যত,
আগামী- ফাজিল-হাসির সঞ্চয়।

ফুটবল, নদ, উঠোনে এবং অন্যান্য কবিতা
ফুটবল, নদ, উঠোনে এবং অন্যান্য কবিতা 43

স্রোত

পর্বত চূড়া থেকে নেমে আসে
বিষন্নতার স্রোত আপন গতিতে।
সেই বিষন্ন স্রোতে অনায়াসে ভাসে
গগণের আলো নিজ জ্যোতিতে।
বিষন্নতার স্রোত মিলনানন্দে হাসে।
এ যেন সঙ্গম – সতী ও পতিতে।
চাওয়া পাওয়ার অনন্ত উল্লাসে।
সৃষ্টির শুদ্ধ মতিতে।


বিষণ্নতা যে আনন্দকে ভালোবাসে।
ভবিষ্যৎ, বর্তমান ফেরে না অতীতে।
তবুও অতীত মিশে থাকে অসীমাকাশে।
সদা উপস্থিত থাকে সর্বহিতে
অদৃশ্য স্রোতে, ধরার অশেষ বাতাসে।
আনন্দ-বিধন্নতার স্রোত থাকে চিতে।
ওরাই অন্তরে বাসে।
স্পন্দিত হয় হৃদ-গীতে।


রাশে রাশে রাশে…
তাই তো এ পৃথিবীতে
নব নব নব আশে
উজাড় করে দিতে দিতে দিতে
প্রেম-স্রোত বয় জাগতিক শ্বাসে শ্বাসে শ্বাসে…
যুগের পর যুগ আসে দিতে আর নিতে।
না থামাকে বাঁধে সম্পর্কের বন্ধন-পাশে।
হারা বিষন্নতার স্রোত যায় জিতে।
দেওয়া নেওয়ার অবকাশে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!