ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারির বিষয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত বা বিশ্ব আদালতের মতামত চেয়েছে জাতিসংঘ। এ বিষয়ে আইনি পরিণতি কী হতে পারে সে বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও জাতিসংঘের কড়া সমালোচনা করেছে ইসরায়েল। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবটির পক্ষে পড়ে ৮৭ ভোট, বিপক্ষে ২৪ এবং ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে ৫৩টি দেশ।
রাশিয়া ও চীন এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। আর ভোট দান থেকে বিরত ছিল ফ্রান্স।
হেগ ভিত্তিক আইসিজে, বিশ্ব আদালত নামেও পরিচিত। জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত এটি। এর রায়গুলো বাধ্যতামূলক। তবে রায় বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা নেই আইসিজের।
জাতিসংঘের এই শীর্ষ আদালতের প্রধান কাজ স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আইন বিষয়ে পরামর্শ মতামত দেয়া। এর রায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ যদিও আইসিজে কোনো রাষ্ট্রকে তাদের রায় বাস্তবায়নে বাধ্য করতে পারে না।
জাতিসংঘের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি নেতারা। দেশটির সিনিয়র নেতা হুসেইন আল-শেখ বলেছেন, “এই প্রস্তাবনা ফিলিস্তিনি কূটনীতির বিজয়কে প্রতিফলিত করে।”
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেছেন, “ইসরায়েলের আইনের অধীন একটি রাষ্ট্র হওয়ার ও আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে চলমান অপরাধের জন্য দায়বদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে।”
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, “কট্টরপন্থী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার গঠনের এক দিন পরেই জাতিসংঘ থেকে এই প্রস্তাব পাস হলো।”
এদিকে ভোটাভুটির আগেই জাতিসংঘের কড়া সমালোচনা করেছেন সেখানে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “নিজ ভূমিতে ইহুদিরা দখলদার কি না, সেই সিদ্ধান্ত কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা নিতে পারে না।
তিনি বলেন, “আদর্শগতভাবে দেউলিয়া ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট জাতিসংঘের এই প্রস্তাব পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং অবৈধ।”
ব্রিটিশ কূটনীতিক টমাস ফিপস বলেন, “আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি রেফারেল পক্ষগুলোকে সংলাপে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক বলে আমরা মনে করি না।”
তিনি বলেন, “এটি যুক্তরাজ্যের অবস্থানও যে উভয় পক্ষের সম্মতি ছাড়া আদালতকে একটি দ্বিপাক্ষিক বিরোধের বিষয়ে পরামর্শমূলক মতামত দিতে বলা অনুপযুক্ত।”
১৯৬৭ সালে গাজা স্ট্রিপ, পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল। বর্তমানে অঞ্চলটিতে ৫ লাখ ইসরায়েলি বসবাস করছে। পশ্চিম তীর অন্তত ২৫ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করছে। এসব ফিলিস্তিনিদের গতিবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে প্রায়ই ইসরায়েলিদের গুলিতে প্রাণ হারায় ফিলিস্তিনিরা।