শীতের বিকেল

মিতা নাগ ভট্টাচার্য
মিতা নাগ ভট্টাচার্য
3 মিনিটে পড়ুন

শীতের বিকেলে কেমন একটা বিষন্ন বাতাস নীরবে খেলা করে যায়। ধৃতি বিকেলকে কম সময় দ্যায়। মনে হয় বিকেলটা চট করে এগিয়ে যাক।
সব কাজ সেরে বিকেলে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা সারাদিনে ওটুকুই ছিল শান্তি। মা আর নেই পৃথিবীতে ।বড্ড ফাঁকা লাগে।
সামনে পঁচিশে ডিসেম্বর়। কোথাও একটু বেড়িয়ে আসতে প্রান চায়। শুধু ছুটি বলে নয়। শরীর ঠিক না থাকলে বেড়াতে যাওয়া সম্ভব নয়।দিন দিন তো বয়স বাড়বে।
ধৃতির এখন বাষট্টি। চৈকরি থেকে অবসর। কতদিন এ পৃথিবীর সঙ্গে চলাফেরা করতে হবে কে জানে।
পাশের সুমনাদি, একা থাকেন। ছেলে মেয়ে বাইরে থাকে। বিকেল বেলাটায় ধৃতি চলে আসে সুমনাদির কাছে। একটু সঙ্গ দিলে সুমনাদির ভালো লাগবে।পথ চেয়ে থাকে সুমনাদি।মানুষের জন্য যেটুকু করা যায়। ধৃতি সুমনাদির কাছে গেলে আয়া মেয়েটি একটু বারান্দায় গিয়ে দাড়াঁয়। একদিন তো বলেই ফেলল,
দিদি আপনি রোজ আসেন, তাই আমি একটু ছাড়া পাই। দুদন্ড কথা বলি।
রাতে ঘুম খুব কম হয় আজকাল ধৃতির।কেবলি মনে হয় অনেকটা পথ তো পেরিয়ে গেল, কীই বা করতে পারল মানুষের জন্য।
নিজের দুই মেয়ে,তারা নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ধৃতি অযথা তাদের বিরক্ত করে না। জামাই দুজন চলনসই। খুব কিছু ঝামেলা মেয়েদের নিয়ে পড়তে হয় নি ধৃতিকে। মেয়েরাও বুঝে চলে। সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ধৃতির সবসময়। কিন্তু নিজের জীবন নেয়া এতটাই ছুটতে হয়েছে পরের জন্য কিছু করার উপায় নেই। এখন কাজ থেকে ছুটি। তাই অন্য কাজে ইনভলভ হতে মন চায়। কিন্তুবয়স্ক মানুষকে কাজ দিতে ভরসা পায় না কেউ। ঘরে বসে কত রকম কত কাজ করতে মন উচাটন হয়।
ফোন বাজে। সুমনাদির কাজ করে মেয়েটির ফোন।
দিদি আপনি একটু আসবেন আমাদের এখানে… খুব দরকার।
ধতি এসে দাঁড়াতেই সুমনাদি মুখর,
ঐ তো ধৃতি এসে গেছে,তুমি চট করে তোমার কাজ সেরে এসো।
একটা ফোন আসার কথা। কিন্তু সে কথা বলা যায় না। মেয়েটি যেন একটু অস্হির।কোনো পেশেন্টের বাড়িতে আর্জেন্ট দরকার।
দুদিন পর। বিকেলের বিষন্ন মুহূর্তে একা বসে ধৃতি। কলিং বেল।
মাসিমা, আপনাকে ভরসা করে। অন্য কাউকে রেখে যাবার কথা বললে উনি মত দেবেন না। আমি ইনজেকশন দেব আর চলে আসব। অটোতে যাব, সময় বেশি লাগবে না। মাত্র মিনিট কুড়ি।
মেয়েটা উদ্বিগ্ন তাকিয়ে। কিছু টাকা আয় হবে ওর। ধৃতি তো কিছু একটা কাজ করতে চায়। মন্দ কী! তবে দুজনেই বয়স্ক। তবু সুমনাদির চেয়ে ধৃতি বেশি সচল। অত ভাবলে কাজে এগোনো যায় না। রাজি হয়ে যায়।
মেয়েটির দুচোখে জল।
দিদি আপনি আমার বড় উপকার করলেন। এইটুকু সময়ের কাজটা ধরতে পারলে মনের ওষুধ কেনার টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। সুমনাদি রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু কাউকে ওর ভরসা হয় না। আপনার কথা উনিই বললেন।
মেয়েদের কিছু জানায় নি ধৃতি। যা হবার হবে। মানুষের একাকীত্বে পাশে থাকতে পারলে সে তৃপ্তি আলাদা। সুমনাদির কাছে বসে ওষুধ খাইয়ে দিল।আজ কতদিন পর সুন্দর মন ভালো করা এক বিকেল।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
পেশায় শিক্ষক। বেলঘরিয়া, কোলকাতা। বহু বছর ধরে দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলা ও ইংরেজিতে তিনি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী লিখছেন। স্মৃতি থেকে গল্পপথ লেখিকার নিজস্ব নিবেন। বি,সি,এম পাবলিকেশন থেকে সেরা ছোটগল্পের জন্য সাহিত্য রত্ন পুরুস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!