আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস পালনের প্রাসঙ্গিকতা

পাভেল আমান
পাভেল আমান
4 মিনিটে পড়ুন

শিক্ষা শিক্ষক শিক্ষালয় শিক্ষার্থী সমস্ত শব্দগুলো একে অপরের সঙ্গে পরিপূরক। বলতে গেলে সবকিছুতেই প্রয়োজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের। এক সমাজ দেশ রাষ্ট্র প্রগতিশীলতা ও উন্নয়নের অভিমুখে এগিয়ে যায় পরিপূর্ণ শিক্ষার চেতনার মধ্যে দিয়ে। সেই কাজ কি সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যায় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীরাই শিক্ষা গ্রহণের মধ্যে দিয়ে আগামীতে হয়ে ওঠে দেশ গঠনের কারিগর নাগরিক এবং সম্পূর্ণ মানুষ। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সদার্থক মনোভাব জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষা ও অন্বেষণ তাদের প্রকৃত মনুষ্যত্বের পরিস্ফুটন ঘটাতে যথার্থ ভূমিকা পালন করে। সেই শিক্ষার্থীদের কার্যকরী থাকে স্মরণ করে প্রতি বছর ১৭ নভেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৩৯ এর শেষদিকে স্বাধীন চেকোস্লোভাকিয়া প্রজাতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্রদের মধ্যে ১২০০ ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ও পরে বিনা বিচারে নজন ছাত্র এবং শিক্ষককে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই ঘটনাকে স্মরণ করে ছাত্রদের সংগ্রামী মানসিকতাকে কুর্ণিশ করার জন্য এবং আরও নানা ক্ষেত্রে তাদের কর্মতৎপরতাকে, প্রতিভা ও মেধাকে সম্মান জানানোর জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।

ছাত্রদল দেশের ভবিষ্যৎ। শিক্ষালাভের জন্য বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে যে পরিশ্রম এবং লড়াই করতে হয়, অবশেষে দেশের উন্নতিতেই তা সাহায্য করে। পড়াশুনার জন্য পদে পদে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয় কত ছাত্রকে। এই লড়াই ছাত্রজীবনের সঙ্গে একীভূত হয়ে আছে। এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, অন্যায়ের প্রতিবাদে ছাত্রদের সক্রিয় অবদানের কথাও উল্লেখযোগ্য। ১৯৩৯ এর শেষদিকে স্বাধীন চেকোস্লোভাকিয়া প্রজাতন্ত্রের দাবিতে ও জান অপলেটাল এবং শ্রমিক ভ্যাক্লাভ সেদেলেকের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ স্বরূপ প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ নভেম্বর বিক্ষোভ জমায়েত কর্মসূচী গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছাত্ররা। বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু হলে জার্মান নাৎসি বাহিনী সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ঘিরে ফেলে নয় জন ছাত্রনেতাকে হত্যা করে এবং ১২০০ ছাত্রকে শচসেনহাউসনে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে তাদেরকেও হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যা একপ্রকার নৃশংস ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। মানুষকে স্তম্ভিত এবং হতবাক করে দিয়েছিল।

১৯৪১ সালে লন্ডনের আন্তর্জাতিক ছাত্র সংস্থা এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ১৭ নভেম্বর তারিখটিকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিল৷ ২০০০ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ এই দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়।শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা সামাজিক আঙ্গিনায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে নানাবিধ ক্যাম্পেইন ও জাগরণ তৈরি করতে হবে। সকলের মাঝে এ বার্তা পৌঁছাতে হবে যে, তাদের জীবনকে উন্নত করার একমাত্র উপায় হল শিক্ষা। শিক্ষার মাধ্যমেই সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণী থেকে শিশুদেরকে সমাজের মূল স্রোতের অংশ হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবসের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা শিক্ষার্থীদের জীবনে অপরিসীম। শিক্ষার্থীরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তারা অকুতোভয়। তারা যে কোন অন্যায় অবিচার অত্যাচারের প্রতি রুখে দাঁড়াই। যেকোন বিপ্লব সংগ্রামে মিটিং মিছিলে তারা একেবারে প্রথম সারিতে। শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্বের অভিমুখে রওনা হয়। পাশাপাশি তাদের মধ্যে জেগে ওঠে সাহসিকতা উদারতা সহমর্মিতা দেশাত্মবোধ সর্বোপরি মানবতা। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস পালনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত শিক্ষার্থীর মধ্যেই শিক্ষার চেতনা সামাজিকতা দায়বদ্ধতা কর্তব্য নিষ্ঠা বিজ্ঞানমনস্কতা আপোষহীনতা সর্বোপরি প্রকৃত মনুষ্যত্ববোধের সঞ্চার ঘটুক। তারা উপলব্ধি করুক শিক্ষার্থী জীবনের গুরুত্ব। তাদের নিবেদিত প্রাণ মানসিকতা প্রাণশক্তিতে টগবগ উন্মাদনা পাল্টে দিতে পারে যে কোন দেশের গতিপথ। শিক্ষার্থী দিবস প্রতিটি ছাত্র জীবনের মধ্যে বয়ে আনুক শৃঙ্খলা সহানুভূতি সহমর্মিতা সহিষ্ণুতা দেশাত্মবোধের শাশ্বতবার্তা। পাশাপাশি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বকে আপামর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও নিবিড়ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। তার কারণ শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা নিয়ে মুক্তি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ইংরেজিতে স্নাতক। পেশা শিক্ষকতা। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখির প্রতি আকর্ষণ। বিশেষত কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ বিভিন্ন ফিচার লিখতে অভ্যস্ত। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় উদার আকাশ পত্রিকা। এরপর শব্দসাঁকো, জিলিপি, শারদীয়া আগন্তুক, আলেখ্য, আখর কথা, পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত। আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রতিদিন, উত্তরের সারাদিন, পুবের কলম, দিনদর্পন, সাত সকাল প্রভৃতি পত্রিকায় প্রবন্ধ চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এখনো ভালো লাগে কলমটাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীলতায় ভেসে গিয়ে ভাব জগতে বিচরণ করে কিছু না কিছু লিখতে। লেখালেখিটা অনেকটা জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। ক্রমশই অনুভূত লেখনিই আমার জীবনের অবশ্যিক অভিব্যক্তি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!