প্রতিদান

কামাল কাদের
কামাল কাদের
14 মিনিটে পড়ুন

গ্রামের নাম পলাশপুর। গ্রামটি নরসিংদী রেল স্টেশন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। নরসিংদীর আশেপাশের লোকজন অনেকেই ঢাকা শহরে গিয়ে চাকরি – বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে। এদের মধ্যে একজন হলো হালিম বিশ্বাস।হালিম বিশ্বাসের বাড়ী ওই পলাশপুর গ্রামে। রেল স্টেশনের কাছেই তার ছোটখাটো একটা মনহরি দোকান আছে। দোকানের মালপত্র কেনার জন্য অন্তত তাকে মাসে ২/৩বার ঢাকা শহরে যেতে হয়। রেলের বেশীরভাগ যাত্রী হলো হালিমের খদ্দের। নরসিংদীর আশেপাশের গ্রামের লোকজন পালাপার্বনে, ছেলে মেয়েদের জন্মদিনে, নানা রকম ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, অথবা কারো বাড়ীর নিমন্ত্রিত অতিথি হয়ে যাবার পথে হালিমের দোকানে ঢু মারে, কারণ তার দোকানে নানা রকমের নজর কাড়া উপহার সামগ্রী কিনতে পাওয়া যায়। দোকানের বেচাকেনা ভালোই হয়। গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এর চেয়ে সে এর বেশী আশা করে না। বিধবা মা এবং ছোট বোনকে দুইবেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারছে, তাতে সে সন্তুষ্ট। মনে মনে সৃষ্টি কর্তাকে হাজারবার শুকরিয়া জানায়।
ক্লাস নাইন পর্যন্ত হালিমের পড়াশুনা। ছাত্র ভালোই ছিল। হঠাৎ করে বাবা মারা যাবার পর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও টাকা পয়সার অভাবে লেখাপড়া আর চালাতে পারলো না। স্টেশনের সামনে ধলা মিয়ার চায়ের দোকানে কয়েক মাস কাজ করার পর তার একটা বড় রকমের অভিজ্ঞতা হলো। মনে মনে ভাবলো, অন্যের জন্য কাজ না করে নিজের জন্য কাজ করতে হবে। সে যদি নিজে একটা ব্যবসা দিতে পারে তাহলে তার জীবনটা বদলে যেত। কিন্তু ব্যবসার জন্য মূলধন কিভাবে যোগাড় করবে? হালিমের মাথার মধ্যে সেই চিন্তাই সর্বক্ষণ ঘুরপাক খেতে থাকে। মায়ের অনুমতি নিয়ে সে ধানের জমিটি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক দিয়ে একটা বড় রকমের ঋণ নিলো। ঋণের টাকা দিয়ে একটা ঠেলা রিকশাকে ভ্রাম্যমাণ দোকান দেয়। আর তাতে নানা রকম মনোহরি উপহার সামগ্রী জাতীয় জিনিষপত্র নিয়ে গ্রামে গঞ্জে বেচাকেনা শুরু করলো। ধীরে ধীরে রোজগার ভালো হচ্ছে। স্টেশনের কাছেই হালিম ছোটখাটো একটা দোকান ভাড়া নিয়েছে হালিম। ব্যবসার মালপত্র কেনার জন্য একাধিকবার হালিমকে ঢাকা শহরে যাতায়াত করতে হয়। ঢাকা শহর থেকে মালপত্র কিনে একই দিনে সে নরসিংদী ফিরে আসে। ঢাকা শহরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তার চাহিদা মতো জিনিষপত্র পাইকারী মূল্যে ক্রয় করতে পারে। ইতোমধ্যে হালিমের সাথে পাইকারী ব্যবসায়ীদের বেশ ভালো সখ্যতাও গড়ে উঠেছে। ব্যবসার উত্তরোত্তর উন্নতির জেরে হালিম তার দোকানে রকিব নামে ১৫/১৬ বছরের এক ছেলেকে খন্ডকালীন কাজ দিয়েছে। ব্যবসার সুবাদে হালিমকে নানা জায়গায় যেতে হয়। তার অনুপস্থিতিতে দোকান চালানোর ভার একমাত্র রকিবকেই দিয়ে যেতে হয়। বয়স কম হলেও ছেলেটির উপর হালিম ভরসা করতে পারে। গরীব ছেলেটিকে কাজ দিতে পেরে সে নিজেকে ধন্য মনে করে।
একদিন হালিম ঢাকা থেকে মালপত্র কিনে নিয়ে ট্রেনে চড়ে গ্রামে ফিরছিল। টি,টি (Ticket Tester) সাহেব তার কাছ থেকে টিকেট দেখতে চাইলো; তখন সে পকেটে হাত দিতে গিয়ে দেখে যে , তার অন্যমনস্কতার দরুন কোন এক সময়ে এক ধুরন্দর পকেটমার তার মানিব্যাগ নিয়ে উধাও। যার ভিতর হাজার খানিক টাকা এবং ট্রেনের টিকেট খানাও ছিল। সে মহাবিপদে পড়ে গেলো। ভয়ে ও রাগে সে রীতিমতো ঘামতে শুরু করে দিলো। টি টি সাহেবকে সে ব্যাপারটা বোঝাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু টি টি সাহেব ব্যাপারটিকে কোনই গুরুত্ব না দিয়ে বিরক্ত ভরা কণ্ঠে বললেন, ধরা পড়লে তোমরা সবাই সেই একই কথা বলো। হালিম বলল, আমাকে বিশ্বাস করুন, আমি টিকেট করেছিলাম, পকেটমার আমার সবকিছু নিয়ে গেছে…
হালিম তার জামার কাটা পকেট দেখিয়ে বললো, আমি ঠিকই টিকেট কিনেছিলাম স্যার, দেখুন আমার এই নুতন জামার পকেট কেটে পকেটমার আমার মানিব্যাগ নিয়ে চম্পট দিয়েছে, আমি মোটেই টের পায়নি। এখন আপনি যদি আমার প্রতি সদয় না হন, তাহলে আমি আমার এ সমস্ত মালপত্র নিয়ে পথে বসবো। ঢাকা শহরে আমার আপনজন বলতে কেউ নেই। সারা রাত আমি কোথায় থাকবো আর রাত্রের খাবারের পয়সাটুকুও নেই, কি যে করি কিছুই মাথায় আসছে না।
টি টি সাহেব কিছুটা নরম হয়ে বললেন, তোমাদের মতো সব যাত্রী যদি সেই একই কথা বলে, আমি টিকেট কিনেছিলাম, হারিয়ে ফেলেছি অথবা চুরি হয়ে গেছে তাহলে রেল কোম্পানীর দশা কি হবে, একবার কি ভেবে দেখেছো? রেল কোম্পানী তো দেউলিয়া হয়ে রসাতলে ডুবে যাবে। যুক্তির খাতিরে তুমি হয়তো বলবে, আমি একজন টিকেট না কিনলে রেল কোম্পানীর কি আসবে যাবে! এরকম সবাই ভাবলে রেল কোম্পানীর অবস্থাটা ঠিক লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড় হয়ে যাবে অর্থাৎ কম্বল আর কম্বল থাকবেনা। যাকগে ওসব কথা,তোমাকে জরিমানা দিতে হবে, তা নাহলে তোমার সাথে যে সব মালপত্র রয়েছে সেগুলি ক্রোক করা হবে।
হালিম শেষ রক্ষা হিসেবে কাকুতি মিনতি করে বললো, স্যার, আমাকে রক্ষা করুন। আমি একজন গরীব মানুষ। ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছি। সাথে থাকা মাওল্পত্রগুলোই আমার মূলধন। এগুলো নিয়ে নিলে আমার মেরুদন্ড ভেঙে যাবে; আমি আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবোনা। বিধবা মায়ের জমি বন্ধক দিয়ে টাকা যোগাড় করেছি, আমাকে দয়া করুন স্যার।
হালিম যে ভাবে শেষ কথাটি বললো আমাকে দয়া করুন স্যার, তাতে টি টি সাহেবের মন গলে গেল। তিনি বললেন, তোমাকে আমি বিশ্বাস করছি। এই বিশাল ঢাকা শহরে রাত্রিটা একা অভুক্ত অবস্থায় কিভাবে কাটাবে সেটা চিন্তা করে তোমার এই বিপদ থেকে ছাড় দিলাম। টি টি সাহেব কিছুক্ষন থেমে একটু ক্ষোভের সাথে বললেন, আমাদের দেশে অনেক বিত্তশালী লোক নিজেদেরকে মন্ত্রী, এম পি সহ আরো কত নামি দামী প্রভাবশালী লোকের পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেলে ভ্রমণ করে বেড়ায় তার কোনো হিসাব নাই। তাই ভাবলাম তোমাদের মতো খেটে খাওয়া সৎ লোকের এরকম বিপদে না হয় একটু সাহায্য করলাম। জানিনা আমার কাজের কোনো গাফলতি হলো কিনা! তবে খুব সাবধানে থাকবে তোমার গন্তব্যস্থান না আসা পর্যন্ত।
ঠিক আছে স্যার, আপনার আদেশ মান্য করে চলবো, আমার এই বিপদের সময়ে আপনি যে দয়া দেখালেন, তা আমি জীবনে কোনোদিন ভুলবোনা। স্যার, আমার কাছে মনে হলো আমি এক নুতন জীবন পেলাম- হালিম কৃতজ্ঞতার সুরে টি টি সাহেবকে জানালো।
সময় এবং নদীর স্রোতের গতি চিরদিন বহমান এমনি করে সময় গড়িয়ে চলছে, সাথে সাথে হালিমের ব্যবসাও উন্নতির সোপানে ধাবিত হচ্ছে। বেশ কিছুটা মূলধন হাতে জমা হওয়ার ফলে সে ঢাকা শহরে কোথাও নুতন একটা দোকান খোলার চিন্তা ভাবনা করছে। সুযোগ জুটে গেল। সে বিশিষ্ট সূত্রে জানতে পারলো, পুরানো ঢাকার সদরঘাটের চৌরাস্তার মোড়ে একটা দোকান ইজারা (lease) দেয়া হবে। দোকানের মালিক বৃদ্ধ হয়েছেন, অবসরে যেতে চান। ছেলে মেয়েরা কেউ পিতার ব্যবসার দিকে নজর দিতে চাইছে না। বৃদ্ধ দোকান মালিক ক্রেতা খুঁজছেন। হালিম সুযোগটা লুফে নিলো। তার ধারণা বিধাতা সদয় হয়ে এই দোকানটির খোঁজ দিয়েছেন।
অবশেষে একদিন যথাসময়ে দরদাম করে হালিম দোকানটি কিনে নিলো। সেদিনই উকিল আর এজেন্টের সহায়তায় চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর দুপুরে খাবারের জন্য সে কমলাপুর রেল স্টেশনের কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। সারাদিন কাজের ব্যস্ততায় চা আর বিস্কুট ছাড়া কিছুই পেটে পড়েনি। ঢাকায় আসলে সে এই রেস্টুরেন্টে বরাবরই ঢু মারে অর্থাৎ রেগুলার কাস্টমার, সেই সুবাদে রেস্টুরেন্টের সবাই তাকে কম বেশী চেনে। রেস্টুরেন্টে খাবারের অর্ডার দিয়ে একটু ভাবনায় পড়লো। যদি নরসিংদীর দোকানটি সে দেখাশুনা করে তাহলে ঢাকার দোকানের জন্য একজন ফুল টাইম বিশ্বস্ত লোকের প্রয়োজন হবে। আজকাল যে দিন পড়েছে, বিশ্বস্ত লোক পাওয়া বেশ কঠিন। তার ভাবনায় ছেদ পড়ল। দোকানের বাইরে সে হৈ চৈ শব্দ শুনতে পেলো। একটু আগ বাড়িয়ে দেখলো রাস্তার মাঝে বিক্ষোভ মিছিল চলছে। হন হন করে ছুটে চলছে সহস্র মানুষের ঢল। হাতে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার সহ আরও কত কি! তার কিছুক্ষন পরই প্রতিপক্ষ দুই দলের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেলো। অবস্থার বেগতিক দেখে পুলিশ বাহিনীকে ডাকা হলো। উশৃংখল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য ঢাল হাতে লাঠিচার্জ ছাড়াও পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ব্যাবহার করতে বাধ্য হলো। পথচারীদের মধ্যে অনেক নিরীহ লোক এই সংঘর্ষের শিকার হল। যে যেখানে পারছে সামনের দোকানগুলিতে ঢুকে পড়ছে। এরই মধ্যে কিছু কিছু লোক কাঁদুনে গ্যাসের কবলে পরে রাস্তার আসে পাশে চিৎ পটাং হয়ে ঢলে পড়লো। হালিম যে রেস্টুরেন্টে খাবার খাচ্ছিলো সেখানে আহত কয়েকজন লোককে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ধরাধরি করে নিয়ে আসা হলো। তাদের মাঝে এক মধ্যে বয়স্ক লোককে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে তার কাছে চেনা চেনা মনে হলো। লোকটির কাছে এসে সে কিছুক্ষন গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকার পর লোকটিকে চিনতে পারলো। উনিই সেই টি টি সাহেব যিনি কয়েক বছর আগে ট্রেনের টিকেট দেখাতে না পেরে তাকে রেহাই দিযেছিলেন। তৎক্ষণাৎ হালিম তার খাবার থালা রেখে উঠে গিয়ে ভদ্রলোকের চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিল; বুকে -পিঠে ম্যাসেজ করতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে ভদ্রলোকের জ্ঞান ফিরলো। হালিম ভদ্রলোককে তার পরিচয় জানালো। কিন্তু ভদ্রলোক কিছুতেই তাকে স্মরণ করতে পারছেনা। তার সুদীর্ঘ চাকরীর জীবনে অনেক পেসেঞ্জারের সাথে তো দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে, সবার কথা কি মনে রাখা যায়! তিনি কিছুতেই হালিমকে মনে করতে পারছেনা। হালিম বেশী কথা না বাড়িয়ে ভদ্রলোককে অতি বিনয়ে সাথে জিজ্ঞাসা করলো, স্যার, আপনি এখানে কি করছিলেন? মানে কোনো জরুরী কাজে এসেছেলিন কি না। ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, ঢাকায় এসেছিলাম রেলওয়ের হেড অফিসে আমার পেনশনের জন্য ধর্না দিতে আর তার সাথে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটা উঠাতে। টাকা তো পেলামই না বরং আজ যে বিপদ থেকে বেঁচে গেলাম সেটা ভাবতে গেলে এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। বেশ কয়েক মাস ধরে টাকার জন্য রেলওয়ের সদর দফতরে ঘুরাঘুরি করছি, বিশেষ কোনো ফল পাচ্ছিনা। অনেকে বলছেন, ধরাধরির লোক নাইতো তাই টাকাপয়সা খরচ করতে হবে। বর্তমানে আমার কোনো চাকরি নেই, তাছাড়া এই বুড়ো বয়সে কেউ চাকরি দিতে চায় না। মেয়ের উপার্জনে চলছি। বলুন ওদেরকে ঘুষ দেয়ার জন্য টাকা কোথায় পাবো? তাছাড়া আমার নিজের পরিশ্রমের জমানো টাকা টাকা থেকে আমাকে পেনশন দেবে, এর জন্য ঘুষ দিতে হবে কেন? কবে নাগাদ টাকা পাবো আল্লাহ মালুম। হালিম কথাগুলি শুনে বললো, আমিও তাই ভাবছি, দেশের নৈতিকতা এতদূর নেমে গেছে যে আমরা আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। হ্যাঁ, ভালো কথা, আপনাকে দেখে মনে হয় না তো আপনার পেনশন নেবার বয়স হয়েছে! সে আর এক ইতিহাস, কোনো এক প্রতাপশালীর অদৃশ্য চক্রান্তে আমার চাকরীটা খোয়া গেছে। ব্যাপারটা আপনাকে খুলেই বলি। টি টি সাহেব একটু দম নিয়ে শুরু করলেন উনার কাহিনী- ঢাকা টু নরসিংদী এবং নরসিংদী টু ঢাকা এই হলো আমার টিকেট চেকিং করার রুট। একদিন ঢাকা থেকে নরসিংদী যাবার পথে আমার কর্তব্য অনুযায়ী টিকিট চেক করে যাচ্ছিলাম। ফার্স্ট ক্লাস কম্পার্টমেন্টে তিনজন ভদ্রলোক আমাকে টিকেট দেখাতে ব্যর্থ হলেন। ফ্রি ভ্রমণের পাস বা অন্য কোনো ডকুমেন্টস তাদের কাছে আছে কিনা, তা জানতে চাইলাম। একজন অত্যন্ত রাগ দেখিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তরে বললেন, তারা এক সরকারী নাম করা অফিসারের আত্মীয়, সে জন্য তাদের ভ্রমণের জন্য কোনো টিকেট বা পাসের প্রয়োজন হয় না। আরো বললেন, তোমার তো সাহস কম না আমরা টিকেট করেছি কি না তা দেখতে চাইছো? আমি উনাদের শুধু এইটুকু বললাম স্যার, আমার কাজ টিকেট পরীক্ষা করা। আমি যদি টিকেট না দেখি তাহলে আমার কাজের অবহেলা হবে এবং যে কোনো লোক আপনাদের মতো সাফাই গাইতে পারে। আমার কথাটি শুনে মনে হলো উনারা আরো রেগে গেছেন। আমি আর কি করি, ছা-পোষা লোক! যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি কম্পার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে গেলাম। ওই ঘটনার কয়েকদিন পর নোটিশ এলো, আমার বড়সাহেব আমাকে তলব করেছেন। আমার হাতে নোটিশ দিয়ে জানালেন, কোনো এক সময়ে আমার কাজের misconduct ধরা পড়েছে তাই আমাকে বরখাস্ত করা হলো with immediate effect। আপীলের কোনো সুযোগ দেয়া হলো না। কোথায় ,কি কারণে আমার মিসকন্ডাক্ট হয়েছে জানা গেলোনা, তবে বুঝতে পেরেছি এই কুচক্র লম্বা হাতের সূত্র কোথা থেকে এসে আমার জীবনটাকে তসনস করে দিয়েছে। আমার আর কিছুই করার ছিলোনা, আমি শুধু মনে মনে আল্লাহর কাছে এর বিচার চেয়েছি। এই বলে টি টি সাহেব থামলেন।
কিছুক্ষন নীরব থেকে বললেন, মেয়েটি কলেজে বি এ পড়ছিলো। সংসারের আয়ের কোনো উৎস না থাকায় মেয়েটির লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেলো। বর্তমানে পাড়ার এক বেসরকারী স্কুলে তার মাস্টারি করা উপার্জনে আমরা সংসারটিকে কোনোমতে টিকে আছে। কথাটি জেনে হালিমের নিজের জীবনের বাস্তবতার কথা মনে পরে গেলো। সে টি টি সাহেবকে বলল, আপনার সাথে দেখা হয়ে মনে হয় ভালোই হলো। আপনি কোনো চিন্তা করবেননা। আমি সদরঘাটে একটা দোকান নিয়েছি; অচিরেই ওটা চালু করবো। একজন বিশ্বাসী লোকের প্রয়োজন ছিল, আপনাকে পেয়ে আমার সে চিন্তাটা দূর হয়ে গেলো। আপনার যদি অমত না থাকে, তাহলে আমার দোকানটি দেখাশুনা করতে আপনাকে অনুরোধ করছি। আজও আমার মানসপটে আপনার সেই দয়ার কথা সময়ে অসময়ে ভেসে উঠে। আশাকরি আপনি আমার এই অনুরোধ টুকু রাখবেন। হালিমের কথাটি শুনে টি টি সাহেব একেবারে বাকরুদ্ধ। এ দুঃসময়ে উনার ভাগ্যে যে এমন ভাবে সুপ্রসন্ন হবে সেটা তিনি ভাবতেই পারছেন না। উপরওয়ালা যে একজন আছেন এবং এই পৃথিবীটা চালাচ্ছেন, তার প্রমান তিনি হাতেনাতে পেয়ে গেলেন। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে যায়; কিন্তু আমরা মানুষেরা কোনো কোনো সময়ে সেটার মূল্য দিতে জানি না।
হালিমের অনুরোধে এবং উদারতায় টি টি সাহেব হালিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাবটা গ্রহণ করলেন। হালিমের মুখ মন্ডল পরিতৃপ্তির হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। রোদ পড়ে আসছে।
হালিম আকাশে দিকে তাকালো। আকাশ যে এতো সুন্দর তার কাছে আগে কখন ও কোনো মনে হয় নি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!