অয়ন ঘোষের ছয় কবিতা

অয়ন ঘোষ
অয়ন ঘোষ
3 মিনিটে পড়ুন
সাময়িকী আর্কাইভ

ভালোবাসার স্বরলিপি

যে সুরে জীবন পোড়ে
সম্পর্ক হেঁটে যায় দু’হাত তফাতে
তারই মাঝে আটকে আছে
আমাদের স্বরলিপি
সা থেকে ওপরের সা-এ।
এখন শীতকাল
বাতাসে ওম নেই
রোদ্দুর ছুটি নিয়ে ফিরে গেছে
কমলালেবুর শহরে।
তোমার কপালে বরফকুচি অভিমান
চোখে ঘুম ভাঙা নদী
আমি হায়রগ্লিফ-এ প্রেমপত্র লিখে
রেখে এসেছি নেফারতিতির সমাধিতে।

যে-নদী ঝুলছে পাখির ঠোঁটে
তাকে ‘শুভেচ্ছা’ জানাইনি
শাড়িতে শ্রাবন রঙ – বড্ড আদর –
মধুক্ষরা পদাবলী
দীর্ঘ সরীসৃপ জাগে মাটির শরীরে
বৃদ্ধ প্রেমের পাশে ভালবাসা আজও অষ্টাদশী।

চন্দ্রাহত তৃতীয় প্রহরে

ফুল থেকে গান হলে
রোজ ভোরবেলা একটা করে
সুর রেখে আসা যেতো
ঘুম আর স্বপ্নের মাঝে থাকা
মানুষের জন্য।

এখন ভরসা কেবল রোদবালিশ
যার শিমুল তুলোর পরতে
আমি রেখে দিয়েছি অনেক জলকথা।

ওই দেখো ছায়ারা পাড়ি দিচ্ছে
চিবুক ছাড়িয়ে
কোন নিষিদ্ধ তিলের ডাকে।
সূর্য রঙের ব-দ্বীপ মাতোয়ারা
ফসলের একতারায়
চাঁদধোওয়া জলে
সদ্য মুখ দেখছে নবীন কৃষক
চন্দ্রাহত তৃতীয় প্রহরে।

গোপনে বলছি তোমায়

এই লিপিবদ্ধ সংকেতের নীচে জলের কোলে মাথা রেখে
ঘুমিয়ে পড়েছে বাতাস। ডানায় আর কোন কম্পন নেই।
লক্ষ্য থিতু হয়েছে বনস্পতির ছায়ায়। ঋষিকল্প
মেঘ অ – মৃত মন্ত্রে বেঁধেছে আকাশ ও মাটি।

পেতে রাখি করতল এই ফুল্লভূমে
বিছিয়ে রাখি চীর-বসন এই দর্শনে।

তথাগতসম সমিধ, পুড়ল যত পোড়ালো ততোধিক
দাহ গাঢ় হলো মন হবনে।

নিক্তি মেপে এসেছিল যে প্রেম, তার বিদায়ে ছিল না
কোন অদৃষ্ট লিপি, ছিল না সমারোহ গান।
জানি গতরাতে নক্ষত্র আলোয়
ঘুমিয়ে পড়েছিল ভোরের স্বপ্ন। সেকথা আর পাঁচকান করিনি, তোমায় জনান্তিকে বলব বলে।

বন্ধক

বিবেক বন্ধক রেখেছি আমি, তাই
তাকাতে পারছি না শিশুর নিষ্পাপ চোখের দিকে
মায়ের কান্নার প্রতিশব্দ থেকে পালাতে গিয়ে
পৌঁছেছি গণ-কবরের দেশে।

দমকা হাওয়ায় উড়ল সাদা কাফন
কালো অঙ্গার দেওয়ালে দেওয়ালে আগুন অক্ষরে লিখল

আমার প্রতিদিনের হেরে যাওয়ার কথা
বামন হয়ে ওঠার কাহিনী
শিরদাঁড়া বিক্রি করে দেওয়ার গল্প

উষ্ণতা

আগামী অসুখে একটু পাশে এসে বোসো
তৃষ্ণার্ত চাতক সমুদ্র খোঁজেনি কখনো
এক দু’ফোঁটাতেই সে সুখী
তবু বোশেখ কাটেনা, শ্রাবণ তো অনেক দূর
নিরিবিলি দৃষ্টি পেলে একটু হাত পা ছড়িয়ে
বসতে ইচ্ছে হয়, হেরে যাবার ভয় নেই,
কথা কম হোক, কম হোক বার্তা
আলাপ হোক শব্দহীন।
শুধু দাহ তীব্র হোক, জ্বলে পুড়ে শীতল হোক
এ রুহু চন্ডালের হাড়, এবার কিছু একটা ঘটুক, নিদেনপক্ষে একটা ঋতু পরিবর্তন
থার্মোমিটার ছাড়িয়ে উষ্ণতা বাড়ছে শহরে

তুই নেই বলে আমার এখন জ্বরও হয় না…

দেহকথা ও শরীরের আলাপ

করতলে একটি পালক রেখে বললে, এর নাম দাও
প্রতিপদের চাঁদ তখনই ডুবে গেলো, লোনা জলে
ভীষণ কামার্ত বা অংশত বুভুক্ষু
আমরা হরিণ শিকারে মেতে উঠলাম।

শিশুরা গুলঞ্চের ছায়ায় বসে, বাতাসে ভাসিয়ে দিয়েছে
কলতান
নিয়তির কাছে বারবার হেরে, শরীরের পদ্য
অন্ধলিপির মধ্যে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে।
তুমি যদি বিশ্বাস হয়ে ওঠো
আমি প্রিয় অক্ষরটি অঞ্জলি দেবো
তোমার বিষাদ গোপনে।

দেখো, শরীর পার হয়ে ছুটছে লকলকে আগুন
আরো আহুতি চাইছে বেপরোয়া সমিধ
নিষেধ জলে ব্রহ্মস্নান
মধু নাভি ঘিরে জেগে ওঠে সহস্র কমল
পদ্মদীঘির কালো জলে শরীর জুড়োলে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: অয়ন ঘোষ
অয়ন ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পড়াশোনা ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। বর্তমানে হুগলী জেলার একটি সরকারি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যুক্ত। মূলত কবিতার সঙ্গেই তাঁর ঘর বসত। কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য ও অনুবাদের কাজ করে থাকেন। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৬ টি।  এছাড়া একটি মুক্ত গদ্যের বইও প্রকাশিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত লিখে থাকেন। আকাশবাণী সহ বিভিন্ন সাহিত্য সভায় কবিতা পড়েছেন। কবিতার জন্য পেয়েচেন আত্মদ্রোহ সাহিত্য কৃতি সম্মান, হুগলী কবিতা একাডেমী পুরস্কার ও বাংলাদেশ থেকে নন্দিনী সাহিত্য পদক।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!