মাত্র ৯ সেকেন্ডেই ধুলায় মিশে গেল ভারতের টুইন টাওয়ার

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের নয়ডাতে মাত্র ৯ সেকেন্ডের নিয়ন্ত্রিত এক বিশাল বিস্ফোরণে দেশটির টুইন টাওয়ার-খ্যাত জোড়া ‘সুপারটেক’ ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধুলার মেঘ তুলে মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ে ভবন দুটি।

গ্রেটার নয়ডা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে জোড়া এই বহুতল ভবনের বিভিন্ন টাওয়ারে ভর্তি করা হয়েছিল ৩ হাজার ৭০০ কেজি বিস্ফোরক। তা দিয়েই উড়িয়ে দেওয়া হয় অ্যাপেক্স এবং সিয়েন— সুপারটেকের দুই ভবন।

জোড়া বহুতল ভবন ভাঙার মুহূর্তের ভিডিওতে মাত্র ৯ সেকেন্ডের মধ্যেই অ্যাপেক্সের ৩২ তলার সঙ্গে মাটিতে মিশে যেতে দেখা যায় সিয়েনের ২৯ তলা ভবন। এই দুই ভবনে মোট এক হাজার ফ্ল্যাট ছিল।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ভবন দুটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও এখন কর্তৃপক্ষের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করা। এই অভিযানের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ভবন দুটি ভেঙে ফেলায় সেখানে ৫০ হাজার টন আবর্জনা তৈরি হবে। আর এসব আবর্জনা পরিষ্কারে সময় লাগতে পারে অন্তত তিন মাস।

বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে নয়ডার ওই এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বিস্ফোরণে আশপাশের ভবনের যেন কোনও ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সকাল থেকেই ওই এলাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া যেকোন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়।

এনডিটিভি বলছে, টাওয়ার দুটিতে ৩ হাজার ৭০০ কেজি বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল। ভবন দুটির সব পিলারে প্রায় ৭ হাজার গর্ত করে বিস্ফোরক ঢোকানো হয়। এর পাশাপাশি এটি যাতে মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে মিশে যায় সেজন্য ২০ হাজার সার্কিট বসানো হয়। বহুতল এই দুই ভবন যাতে সরাসরি নিচের দিকেই ভেঙে পড়ে সেটি নিশ্চিত করার জন্য ‘জলপ্রপাত কৌশল’ অনুযায়ী বিস্ফোরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

রোববার সকালের দিকে ওই এলাকার ৭ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। বহুল আলোচিত এই টাওয়ার ভবন ধ্বংসের আগে আশপাশে সব ভবনের গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকে ওই এলাকায় গ্যাস এবং বিদ্যুতের সংযোগ পুনরায় চালু হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এলাকার বাসিন্দারা ফিরতে পারবেন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। এলাকায় ফেরার পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বাসিন্দাদের বাসার ভেতরেও মাস্ক পরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ

ভারতীয় ১০০ কোটি রুপি ইন্সুরেন্সের আওতায় ভবন দুটির ধ্বংসযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে। আশপাশের কোনও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই অর্থ থেকে সেগুলো মেরামত করে দেওয়ার নির্দেশ ছিল আদালতের। ভবন ধ্বংসের পুরো ব্যয় সুপারটেককে বহন করতে হয়েছে। এই কাজে ২০ কোটি রুপির কিছু বেশি ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুম্বাই-ভিত্তিক কোম্পানি এডিফিস ইঞ্জিনিয়ারিং টাওয়ার দুটি ভেঙে ফেলার দায়িত্ব পেয়েছিল।

২০০৪ সালে নয়ডায় সুপারটেক এমারেল্ড কোর্ট নামে একটি হাউজিং সোসাইটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য নয়ডা অথোরিটি সেক্টর ৯৩-এর চার নম্বর প্লটে ৪৮ হাজার ২৬৩ বর্গ মিটার জায়গা বরাদ্দ করে। ২০০৫ সালে নয়ডা অথোরিটি এমারেল্ড কোর্ট নামে এই হাউজিং সোসাইটিতে ১৪টি টাওয়ার বা বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। অনুমোদন অনুযায়ী, ভবনগুলো ১০ তলা হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে ১৪টি টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

পরে ২০০৬ সালের জুন মাসে সুপারটেককে লিজ দেওয়া জমির পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৪ হাজার ৮১৯.৫১ বর্গমিটার করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে ভবনগুলো ১০ তলার পরিবর্তে ১২ তলা করার অনুমতি দেয় নয়ডা কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ওই আবাসন প্রকল্পে অতিরিক্ত দুটি টাওয়ার এবং একটি শপিং মল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়।

গত বছরের আগস্টে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দুটি ভবনের মধ্যে ন্যূনতম জায়গা ছাড় না রাখার অভিযোগে টুইন টাওয়ার ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশ আবাসন আইন অনুসারে ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতি ছাড়াই বেআইনিভাবে ভবন দুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই বেআইনি কাজের জন্য নয়ডা কর্তৃপক্ষ এবং সুপারটেকের মধ্যে আঁতাত তৈরি হয় বলেও রায়ে মন্তব্য করেন আদালত।

পরে ভবন দুটির ফ্ল্যাট মালিকদের অনেকে আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল, ২০২২ সালের মে মাসে ভবন দুটি ভেঙে ফেলা হবে। পরে সুপ্রিম কোর্ট ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। কিন্তু টেকনিক্যাল জটিলতা এবং আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কথা মাথায় রেখে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!