কবি প্রদীপ ঘোষের ছ’টি কবিতা

প্রদীপ ঘোষ
প্রদীপ ঘোষ
5 মিনিটে পড়ুন

সংগীত

দিনেদিনে ইঁটের পাঁজর থেকে খসে পড়েছে
অনবধানতায় কত না হইচই, জীবনের তাবৎ তৈজস।
ফুলের পাপড়ি ঝরে গেলে অন্তরঙ্গ যা কিছু
উন্মুক্ত, অনাবৃত। অলিন্দের খড়খড়ি,
কড়িকাঠ, দুয়ার, দেরাজে ছায়াছবির রিল ঘূর্ণমান
পরতে পরতে। ‘দেহপট সনে নট….’
বাড়ি-টি পোড়ো, আলতা পাতার অরণ্যে
চরণচিহ্ন মোহরে মোহরে।
কক্ষে কক্ষে, গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে শলা, রতি ও সম্প্রীতি।
ধুলোবালিতে চাপা পড়েও শুধু স্মৃতির
চিলেকোঠা অকপট। পুতুল খেলনাবাটিতে, ইত্যাদি
মেহুলি মেঘ নির্ঝরে কুলিক পাখিরালয়ের সারিগান
মন্দ্র মধ্য তার সপ্তক। উদারা-মুদারা-তারা
অনিমিখ হে বসুন্ধরা।
আসলে সুস্থ মনের সমস্যার অন্ত নেই
পীড়িতের শরীর অন্তপ্রাণ।

এইখানে, হ্যাঁ এখানে এখন সময়,
নিথর চলচ্ছক্তি রহিত। একদিন অনন্ত,
যে ঘুম ভাঙ্গে না আর, ….শয়ান।

জেমস্ ওয়েব

একচোট হাতাহাতির পরে,
তুই ক্যানো আমার টিফিন চুরি করে খেয়েছিলি
বললেই পারতিস দু’জনে একসঙ্গে খেতাম?
কিংবা মাঠে খেলতে খেলতে পড়ে গিয়ে
ছড়ে যাওয়ায় শুধু এটুকু বলা,
খুব লেগেছে না রে?
যন্ত্রণা আর ভালোবাসার অপরিমেয় বিভক্তি
ভাকরা নাঙ্গালের ওয়াটার গেট খুলে যাওয়ার জন্য
আর কী চাই?
প্রথম বড় পরীক্ষায় সাফল্য
প্রথম প্রেম
প্রথম জীবিকায় প্রবেশ, বিবাহের দিন
প্রথম পিতামাতার অনুভব, সন্তানের সাফল্য….

মুন-রে-কার? গোল্ড ফিঙ্গার, গোল্ড ফিঙ্গার
রজার মুর, শন কোনারি
লাইট-হাউস, গ্লোব, নিউ-এম্প্যায়ার
জেমস্ বণ্ড দেখে বড় হওয়া
এখন জেমস্ ওয়েবের কেরামতি-তে উপলব্ধি। স্মৃতি
আসলে-ই নক্ষত্রের টুইঙ্কল টুইঙ্কল
মহার্ঘ সময়ের গ্রন্থি ছিঁড়ে ফ্যালা
গতজন্মের আলো।

বন্ধুতা

তারপর হঠাৎ একদিন নদী পিছিয়ে গ্যালো অনেকটাই। আমি ভেবেছিলাম হয়তো বা অভিমানে। মান ভাঙ্গলে ফিরবে নিশ্চয়ই কখনও। অভিমান আমারও তো হয়, না কি? আষাঢ় শ্রাবণ এলেই ছোটবেলার ট্রানস্লেশন মনে পড়ে। নদীটি কানায় কানায় পূর্ণ, রিভার ইজ ফুল টু দ্য ব্রীম। তবু উল্টো পথে হেঁটে চলেছি, ফলত দূরত্ব বাড়ছে… বাড়ছে…..

কত না বর্ষাঋতু পেরিয়ে একদিন ভাবলাম দ্যাখা হোক, কষে খুব গালাগাল দেব। তারপর আবার জীবনের হুটোপুটি, হাপুস হুপুস প্রমত্ততা। যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি। দেরি করে ফেলেছি বড্ড বেশি। খবর পেলাম, নদীটা মজে গ্যাছে।

ভেল-ভেলে-টা

এক
কতকালের পুরোনো কথা। দু’দিকে বাঁশের
খুঁটিতে মাছ ধরার জাল শুকোতে
দিয়েছিলাম।
অনবধানতায় শালিখ পাখি-টা আটকে প’ড়ে
আঘাত না লাগে বহু কষ্টে ছাড়িয়ে দিলাম।
একবার কৃতজ্ঞতা টুকুও জানালো না
উড়ে চলে গ্যালো।
আমি আমার মতো ভেবেছি,
হয়তো ভয় পেয়ে ছিল বাছা।

তখন শালিখ টা ভাবছিল
ক্যামন ফাঁকি দিয়ে ফুড়ুৎ। বোকাটা
ধরবে বলে ফাঁদ পেতেছিল…

দুই
এতকাল পরে ; ঝালিয়ে দেখি তো একবার
মুখে কালিঝুলি মেখে, গোবেচারা, দাঁড়ালাম। যাতে
চিনতে না পারে।

আয়না! বল তো আমি কে?
মুরুব্বি তো খুব। একটা হাঁদারাম, সারাজীবন
ফাঁকি দিয়ে গেলি শুধু নিজেকে-ই
না যাপন বুঝেছিস, না পাখির অভিনয়।

“জুড়াইতে চাই কোথায় জুড়াই?
কোথা হতে আসি কোথা ভেসে যাই।”

রঙ্গশালায় নটশিল্পীর জীবন আমার অন্তত নয়….

ঝড়

মেঘেরা বললো যেভাবে বৃষ্টি হয়ে ঝরি, হ্যাঁ এটাই কবিতা
পাহাড়ে-রা বললো মেঘেদের কথা বাদ দাও; যেভাবে কলকল ঝর্না প্রসব করি, হ্যাঁ এটাই কবিতা। নদী বললো দ্যাখোনি যেভাবে পাথর কেটে স্রোতোস্বিনী! বয়ে যাই পাহাড় উজিয়ে গ্রাম থেকে নগর ! মেঘ পাহাড়ের কথা বাদ দাও; হ্যাঁ এটাই কবিতা। ফুলেরা বললো আরে ছোঃ মেঘ পাহাড় নদীদের কথা বাদ দাও। তুমি তো দেখেছো কীভাবে ফুটে সুন্দরতায়, সুবাসে সকলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই! হ্যাঁ এটাই কবিতা। পাখিরা বললো বাদ দাও তো ওদের কথা ; দ্যাখোনি আমরা ক্যামন গান গাই রুনুকঝুনুক ! আমরা-ই, যদি বলতে হয়, এখান থেকেই সৃষ্টি; হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই আসলে কবিতা, আমরা সুর ও দি-ই। গাছেরা বললো পৃথিবীর সমস্ত প্রাণকে আমরা যেভাবে বাঁচিয়ে রেখেছি, আগলে রেখেছি লয়ে ছন্দে! আসলেই তা কবিতা। বাদ দাও তো ওসব বেআক্কেলে-দের কথা।

আমি ঝড় কে বললাম তুমি কিছু বলবে?

ঝড় বললো শোনো ছেলে ! তুমি তো কবি নয়, তাই তোমাকে-ই বলি। খেউড় দেখে এলে তো! চেনা চেনা লাগছে না বলো? তোমাদের বাংলাবাজারের মতো? তা যাক, তোমরা তো আবার আমার নিন্দে মন্দ করো, সকলে মিলে চলার পথে এতো যে বাধার সৃষ্টি করো ! দ্যাখো অকূল সমুদ্রের হৃদয় কতো বড়, কখনো আমার দোষ ধরেনি। সদাই আনন্দে উচ্ছল।

তুমি মেঘ পাহাড় ঝর্না ফুল পাখি নদীর, আহ্লাদের চর্বিত চর্বণ করতে দেখেছো ; কবিতা লেখে সমুদ্র। আমি মাঝে মাঝে তোমাদের শোনাতে যাই। আসলে কবিতা কী! তোমরা কেউ-ই বুঝতে-ই পারোনি। কবিতা আসলে বুক পুকুরের ঝড়, দুর্মর।

অভিশপ্ত

যে ছুরিতে লঙ্কা কাটো, আপেল কাটতে নেই
ঝাল লাগবে, ভুলের মাশুল গোনা এভাবেই।

যদি কোনো দিন দেখো পাথরে ফুল ফুটেছে
..কোনো দিন আকাশ মাটিতে নেমে এসেছে
সেদিন বলো অহম ব্রহ্ম, আবাম, বয়ম ব্রহ্ম
জগতের সব নশ্বর,ভালো থাকা মানে নির্মোহ।

যে আলোয় তুমি আলোকিত হও বারবার
যে আলোর উৎস আগুন! শীতের উষ্ণতার
সে আগুন তোমায় অক্লেশে পোড়াতে পারে
আমি জোনাক; জীবন হাতড়াই অন্ধকারে।

“মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জন্ম কোলকাতায়। 'দেশ' পত্রিকা সহ অন্যান্য বিবিধ লিটল ম্যাগাজিন, ওয়েবজিন, ই-ম্যাগে স্বরচিত কবিতা প্রকাশিত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক পরবর্তীতে আইন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। এছাড়াও তিনি জর্জ টেলিগ্রাফ ইনস্টিটিউট থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা (সিওপি)।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!