‘ঘোড়েল’ পর্ব – আট

মুসা আলি
মুসা আলি
22 মিনিটে পড়ুন

প্রদীপের জন্য কুল্পির সভাতে যেতে পারে নি সুচরিতা, তা নিয়ে তার মধ্যে সীমাহীন সংকোচ তৈরি হয়েছে। সুবিমলবাবু যে যথেষ্ট খারাপ ভাবতে পারেন, সেই বোধ সুচরিতাকে বার বার ধাক্কা মারছে। জয়নগরে কর্মীসভায় যাওয়ার জন্যে জয়ের মাধ্যমে কোনো অনুরোধ পায় নি সে, শুধু সাধারণ আমন্ত্রণ পাওয়াতে মর্মে মর্মে বুঝল, সুবিমলবাবু তোষামোদে বিশ্বাস করেন না। তাতেই সুচরির মধ্যে অভিনব তাগিদ দেখা দিল, শুরুতে এ উপেক্ষা মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়, জয়নগরের কর্মীসভায় যাওয়ার জন্যে মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হল। এও ভাবল, প্রদীপের সঙ্গে আলোচনা করা ঠিক হবে না। ছেলেটার ওই এক দোষ, যে কোনো মূল্যে সুবিমলের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে চায়। বুঝতে চায় না, নেতৃত্ব হাতে না থাকলে জরুরি কাজ কিছুতেই হাসিল করা সম্ভব নয়। খেলার মাঠের তিক্ত স্মৃতি প্রদীপ আজও ভুলতে পারে নি, তা সুচরিতা ভালো করেই জানত। তাই ভাবতে বাধ্য হল, প্রদীপকে না জানিয়ে জয়নগরের কর্মীসভায় যেতে হবে। রাজনীতি করতে চাইবে না, আবার ফাঁকা মাঠে মাতামাতি করবে, এসব মেনে নিতে মন চাইল না সুচরিতার। সুবিমলবাবু তো চান, প্রদীপ রাস্তায় নেমে সংগঠন করুক, সেই প্রস্তাব তার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়াও হয়েছে। তাতে কেরিয়ার নষ্ট হবে বলে রাজি হয় নি। তাহলে প্রদীপের কারণে তাকে নিজের কেরিয়ার গড়া থেকে বিরত থাকতে হবে কেন? ব্যক্তিগত সম্পর্ক আর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা দুটো পৃথক প্রসঙ্গ যা প্রদীপ কিছুতেই বুঝতে চায় না। দুটো অনুসঙ্গকে সে এক করে দেখতে চায়। মনে মনে একটু হাসল সুচরিতা, বিড় বিড় করে বলল, পাগল ছেলে কোথাকার, ভুল বোঝাবুঝিতে পাকা ওস্তাদ হয়ে উঠেছে।
দুপুরের সূর্য গড়িয়ে পশ্চিমে ঢলে পড়ল, সুচরিতা ঘড়িতে চোখ রেখে দেখল, বিকেল তিনটে। আর দেরি করল না, ঘরের ভিতরে ঢুকে শাড়ি পাল্টাতে শুরু করল, কুল্পির সভাতে না যাওয়ার জন্যে একবার আনমনাও হল, মা এসে বলল, কোথাও বের হচ্ছিস নাকি?
জয়নগরে কর্মীসভা আছে, সেখানেই যেতে হবে।
সুবিমলবাবু যাচ্ছেন তো
উনিই যেতে বলেছেন।
তাহলে যা, রায়বাবুর সুনজরে থাকতেই হবে তোকে, দেখবি, চাকরি পাওয়া নিয়ে আর ভাবতে হবে না। মানুষ হিসেবে ওর তুলনা হয় না, বলেছেন যখন একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করবেন।
সুবিমলদা কী বলছেন জানো মা?
বল শুনি।
আমি নাকি নেত্রী হয়ে অন্যদের চাকরির ব্যবস্থাও করতে পারব।
সুচরিতার মা অবাক না হয়ে পারল না, তার মেয়েকে নিয়ে এত বড়ো মন্তব্য করেছেন সুবিমলবাবু?
জানো মা, সুবিমলদা বলেছেন যখন তখন আমি পারবই।
সুচরিতার মা কপালে হাত ঠেকিয়ে কায়মনোবাক্যে বিড় বিড় করে বলল, দুগ্গা দুগ্গা, মেয়ের ইচ্ছা যেন পূরণ হয়।
সুচরিতা হাসল মন খুলে। —সুবিমলদা আরও কী বলেছেন জানো? কঠোর পরিশ্রম আর যোগ্যতা দিয়েই নিজেকে গড়ে তুলতে হয়, রাজনীতিতে লেগে থাকার মূল্য সেখানেই।
বেশ তো, চেষ্টা করে দ্যাখ।
সুচরিতা হনহন পায়ে এগিয়ে চলল, অটোতে চেপে মথুরাপুর স্টেশনে পৌঁছালো। কাউকে দেখতে পেল না, তাহলে কী সুবিমলবাবু আগের ট্রেনে চলে গিয়েছেন? জয়দাও কী তাঁর সঙ্গে যেতে পারে? হতেই পারে, এক নম্বর সাকরেদ, সঙ্গে থাকাই স্বাভাবিক। সুযোগের সদব্যবহার করার ক্ষেত্রে জয়দার প্রশংসা করতেই হয়, তেমনি মানসিকতা তৈরি করেও ফেলেছে। প্রদীপের কথা একপলক মনে পড়ল, কিছু বলা হয়নি যখন, তাকে এখানে দেখতে পাওয়ার প্রসঙ্গই আসে না।
তখনও মেয়েটা জানতে পারেনি, প্রদীপ তার জন্যে কী করতে পারে আর কী করতে না পারে। যে খায় চিনি তাকে যোগায় চিন্তামণি, প্রদীপের মনের গভীরে লুকিয়ে ছিল তেমনি একটা বাসনা।
সুবিমল আগেই জানিয়েছিলেন, বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের কাছে কর্মীসভার আয়োজন করা হয়েছে কিন্তু ঠিক কোন জায়গায় তা নির্দিষ্ট করে বলেন নি। সুচরিতার ভাবনা, স্কুলের সামনে গেলে মাইকের শব্দ শুনে সভার সন্ধান পেয়ে যাবে। তাছাড়া দূর থেকে আগত সকলকে সভায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নিশ্চয় স্কুলের সামনে কেউ না কেউ থাকবেন। কাউকে জিজ্ঞেস করেও জেনে নেওয়া সম্ভব।
বিকেল চারটেয় সভায় পৌঁছাতেই সুবিমল পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, সকলে দ্যাখো, আজকের আসরে একজন নতুন অতিথি এসেছে, নিজের ক্যারিশমায় এ বছর কলেজ স্পোর্টসএ চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছে, খুব স্মার্ট, নিজের উদ্যোগে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী পালনের সময়ও মুন্সিয়ানা জানান দিতে পেরেছে। সকলের সাহচর্য পেলে সুচরিতা আমাদের সংগঠনে একজন ভালো কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
সকলে চেয়ে থাকল সুচরিতার দিকে। চোখের ভাষায় স্বাগত জানানোর যে আকুতি তা বুঝতে সুচরিতার কোনো অসুবিধা হল না। বিষযরস্তু ছিল, তপশিলী মানুষের সুখ-দুঃখে আরও বেশি সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয়তা। একটু আগে বক্তাদের তালিকা প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল।
সুবিমলবাবু হেসে বললেন, বক্তাদের প্যানেলে নাম না থাকলেও সুচরিতাকে অবশ্যই বলতে দেওয়া হবে। ওর অভিজ্ঞতা আছে যা প্রকাশ পেলে আমরাও চমকে যেতে পারি।
সকলে আরেকবার চোখ তুলে তাকালো, লজ্জিত হলো সুচরিতা।
সুবিমলবাবু এমন বাড়তি প্রশংসা করলেন যে তাকে চাপে পড়ে যেতে হল।
প্রথমে বক্তব্য রাখতে উঠল জয়দেব ঘোরামি।
একথা সত্য যে পিছড়ে বর্গের মানুষের প্রতি যতটা নজর দেওয়া উচিত ছিল, আজও তা আমরা পারিনি। আগামিতে সেই ঘাটতি পূরণের জন্য সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে।
সুবিমল বললেন, রাজিব বলো।
আমিও জয়দেবের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। সমাজের সকলকে সমানভাবে সামনে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমাদেরকে নিতে হবে। সার্বিক উন্নয়নের জন্যে এর বাইরে কোনো পথ নেই। অন্যভাবে ভাবা মানসিক বিকলতা ছাড়া কিছুই নয়।
তাৎক্ষণিক বক্তব্য রাখার জন্যে ইতিমধ্যে প্রতাপ সেন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তার সরস বক্তব্যে ভাষার প্রাঞ্জলতায় সকলে মুগ্ধ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। চাপা স্বরে বলতে শুরু করল প্রতাপ,— এভাবে আলোচনার হেডিং ঠিক করা যথাযথ হয় নি বলে আমার মনে হয়েছে। সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গীকে সংকীর্ণ করে তোলার পিছনে কী যুক্তি থাকতে পারে, তা আমার মাথায় আসছে না। বরং সার্বিক মঙ্গলের জন্যে আলোচ্য বিষয় নির্বাচিত হলে সমাজের সকলের কাছে সমান মঙ্গলবার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হত, অবশ্য আলোচনার শেষে সকলের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্তকে মান্যতা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার আগে কোনো দ্বিমত ছিল না, আজও নেই।
অনেকে হতচকিত না হয়ে পারল না প্রতাপ সেনের বক্তব্য শুনে। বিশেষ করে সমবেত তফশিলি সম্প্রদায়ের মানুষ কেমন যেন বিচলিত হল। পিছড়ে বর্গের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ আগে কখনো শোনে নি তারা কিন্তু মুখের ভাষায় প্রতিবাদ করতে পারল না। উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্যে সুচরিতা মনে মনে প্রস্তুত হল। পরবর্তীতে বেশ কিছু বক্তা মূল কেন্দ্রবিন্দু থেকে সরে গিয়ে সংগঠনের নানাপ্রসঙ্গ নিয়ে কিছু সময় বক্ বক্ করল। সুবিমল হাত ঘড়ির দিকে চোখ রেখে ভিতরে ভিতরে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। থানায় জরুরি কাজ রয়েছে, অনেকেই তাঁর জন্যে অপেক্ষায় থাকবে। একটু বেশি সপ্রতিভ হয়ে বললেন, যাদের বক্তব্য শুনলাম, সবাই পরিচিত মুখ, আগে বহুবার নিজেদের সুচিন্তিত মতামত দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করে তুলেছে। নিশ্চয় এতক্ষণ অনেকেই সুচরিতার কথা শোনার জন্যে উন্মুখ হয়ে উঠেছে। সেই ইচ্ছা পূরণে সুচরিতাকে অনুরোধ করছি নিজস্ব মতামত জানাবার জন্যে।
একটু হেসে সুচরিতা উঠে দাঁড়ালো, পুরুষের মানসিক ভুবন জয় করার জন্য তার হাসিটুকু যথেষ্ট, সুচিন্তিত বক্তব্য উপরি পাওনা মাত্র। আরেকবার মিষ্টি হেসে থমকে দাঁড়িয়ে থাকল। সকলের চোখ তার দিকে। থেমে থেমে বলতে শুরু করল, ভারতীয় সংবিধান পিছড়ে বর্গের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে বার্তা দিতে চেয়েছে, মানুষে মানুষে আর্থিক বৈষম্য থাকলে সামাজিক বৈষম্য কিছুতেই দূর করা সম্ভব হবে না। প্রাকস্বাধীনতার সময় থেকে ভারতীয় চেতনার মধ্যে সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য রয়ে গেছে। তা দূর করার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে যে আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে, আয়োজকরা সেজন্যে অবশ্যই ধন্যবাদ পেতে পারেন। আলোচ্য বিষয়ের হেডিং নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা আদৌ ঠিক নয়। সাম্প্রদায়িক তকমা লাগিয়ে ভারতীয় সমাজকে একসূত্রে গাঁথার প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়া এক ধরণের বিরোধিতা ছাড়া কিছুই নয়। এ পদক্ষেপ বেড়ে চললে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো কখনো সামনে আসতে পারবে না। আমরা ভুলে যেতে পারি না, রাজনীতি হল সবচেয়ে বড়ো সামাজিক সংগঠন যার মূল দায়িত্ব হল সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।
কলেজ স্পোর্টস-এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে সুবিমলদার আন্তরিক আশীর্বাদ ছিল বলেই আজকে প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারপর বুঝেছি, সামনে আসতে গেলে নেতৃত্বের উপযুক্ত মনন কত বেশি কার্যকরী হতে পারে। বিপরীত দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। উপযুক্ত প্রার্থীর অভাব দেখিয়ে ডি-গ্রুপের চাকরির প্যানেল বাতিলের অজুহাত খবরের কাগজে বের হয় অথচ চোখের সামনে দেখি গন্ডায় গন্ডায় পিছড়েবর্গের শিক্ষিত যুবকরা বেকার হয়ে ঘুরছে। এজন্যে নির্বাচকমণ্ডলীতে উপযুক্ত সংখ্যায় পিছড়ে বর্গের প্রতিনিধি থাকা একান্ত প্রয়োজন, তাহলে অন্তত উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে প্যানেল ক্যানসেল করার দৃষ্টান্ত খবরের কাগজে আসবে না। পিছড়ে বর্গের শিক্ষিত যুবকরা এ খবর পড়ে যেসব মন্তব্য করে, তা ভাবলে অজুহাতবাদীদের কিছুতেই ক্ষমা করা চলে না। আমার দাবির পিছনে যে সামাজিক প্রয়োজন রয়েছে, তা কাউকে ব্যথা দিয়ে থাকলে নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন।
হাততালিতে জমে উঠল অনেকেই, কেউ কেউ প্রকাশ্যে বাহবা দিল। সুকুমার বলল, যুক্তির ধার ধারালো ছুরির মতো, অমলের মন্তব্য, প্রথম দিনেই মাত করে দিল। সমরেশ বলল, লেগে থাকলে অনেক দূর যেতে পারবে। সত্তর বছরের প্রভঞ্জন সমাদ্দাবের মন্তব্য, সুচরিতার সামাজিক বোধ নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত হওয়া যায়। ব্রাভো সুচরিতা, নির্ভয়ে এগিয়ে চলো।
সুবিমল উঠে দাঁড়ালেন সকলের বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার জানাতে, বললেন, নানা দিক নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে, আজকের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য সুচরিতার সূচালো বক্তব্য। আশা করব, তার মহতি প্রচেষ্টায় মহিলা সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
সুচরিতা কম্পিত না হয়ে পারল না, মনের গভীরে ভালো লাগার যাদু, শিরশিরে বাতাসে কাঁপা কচি কলাপাতার মতো।
সন্ধে সাতটা, সভার কাজ শেষ, সুচরিতা সুবিমলের পাশে পাশে হেঁটে চলল, বেশ লাগছিল। প্রথম দিনের সাফল্যে সত্যি সত্যি খুশি। সুবিমল ভাবছিলেন ট্রেনে বসে সংগঠনের মূল কাজগুলো বুঝিয়ে দেবেন সুচরিতাকে, বললেন, প্রপার মথুরাপুরের সাংগঠনিক দায়িত্ব তোমার উপর ছেড়ে দেব বলে ভাবছি। প্রয়োজন হলে আমার প্রত্যক্ষ সাহায্য পাবে, জয়কে যখন তখন ডেকে নিতে পারবে। একটু আধটু বিচ্যুতি দেখা দিলেও কেউ টুশব্দ করতে পারবে না, তোমার পক্ষে পর্যায়ক্রমে আরও পোক্ত হয়ে ওঠাও সম্ভব হবে। ট্রেন আসতে এখনও মিনিট কুড়ি দেরি আছে, স্টেশনের স্টলে চা খাব দুজনে। তারপর ট্রেন এলে কম্পার্টমেন্টে উঠে বসে সংগঠনের প্রাথমিক অবস্থানগুলো তোমাকে বুঝিয়ে দেব। একটু সমঝে চলতে পারলে দু’তিনমাসের মধ্যে তোমার পক্ষে নেত্রী হয়ে ওঠা একেবারে অসম্ভব নয়।
কয়েক পা গেলেই প্লাটফর্ম। সুচরিতা একটু হাসল, বাড়তি আনুকূল্য পাওয়ার জন্যে কৃতজ্ঞতায় ভেসে যাচ্ছিল সে।
এ্যাই, এ্যাই সুচরি— হাসির ফোয়ারা মুখে নিয়ে প্রদীপ এসে সামনে দাঁড়ালো। সন্ধের আগেই শুনে ফেলেছিল, সুচরিতা জয়নগরের কর্মীসভায় গিয়েছে অথচ সে চায় না সুবিমলের সঙ্গে সুচরিতা চলাফেরা করুক। একান্তভাবে বিপত্তি সৃষ্টির তাগিদে এতদূর ছুটে আসতে হয়েছে তাকে। সুচরিতা দোলাচলে দুলতে লাগল, কর্মীসভার সাফল্য মাথার ভিতরে ঘুরছে। সুবিমলকে ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছে না কিন্তু প্রদীপকে দেখে হৃদয়ের ঢেউ চলাচলের সামনে দাঁড়িয়ে কেমন যেন বিহ্বল হয়ে পড়ছে। সুবিমলও তা স্পষ্ট বুঝতে পারলেন, বললেন, তাহলে কী তুমি এখন?
সুচরিতা অসহায় চোখে তাকালো সুবিমলের দিকে। তার ভিতরে দ্বিধাদ্বন্দ্বের তীব্র বিড়ম্বনা, সুবিমল বুঝলেন, অন্ধমোহে প্রদীপের ডাকে সাড়া দিলেও মেয়েটা অনেকখানি অনুগত হয়ে উঠেছে, মানসিক দোলাচলের সূত্র সেখানেই।
প্রদীপের কাব্যিক তাগিদ, চলো, আবার থমকে থাকলে কেন?
সুচরিতা পায়ে পায়ে প্রদীপের সঙ্গে চলতে শুরু করল। সুবিমল বুঝলেন, প্রদীপের মোহ থেকে সুচরিতা সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে নি। একটু হাসলেন আপন মনে। মাত্র কদিনেই যে সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে, তাও আশা করেন নি সুবিমল। তবুও সভায় টেনে আনা সম্ভব হয়েছে, সেই সাফল্যের মূল্যায়ন নিয়ে ট্রেনে উঠে বসলেন। প্রদীপের মুখে বীরত্বপূর্ণ হাসি যা সুবিমল দেখতেই পেলেন না। ট্রেনের কামরায় বজ্রকঠিন মুখে বসে থাকলেন। এট্টুখানি ছেলের এত বাড়াবাড়ি আর মেনে নিতে পারছেন না। খড়কুটোর মতো তুচ্ছ হয়েও তার উপর টেক্কা মারতে চাচ্ছে? এত স্পর্ধা পাচ্ছে কোথা থেকে? মথুরাপুর স্টেশনে নামতেই জয়ের সঙ্গে দেখা, সুবিমলের আন্তরিক প্রশ্ন, কর্মীসভায় গেলি নে কেন? নতুন কোনো খবর?
এক্ষুণি আপনাকে ঘোষাল পাড়ায় যেতে হবে।
এত রাতে!
সবে তো আটটা।
তা না হয় বুঝলাম, এত জরুরি কেন বলবি তো?
ভিতরের খেলা বেশ জমে উঠেছে সুবিমলদা। তা জানাতে আমাকে স্টেশন পর্যন্ত আসতে হল। আপনি গেলেই তা আরও জমজমাট হয়ে উঠবে।
কী ব্যাপার বল্ তো?
এখনও কেউ জানতে পারে নি, রঘু ভোল পাল্টে আপনার পক্ষে চলে এসেছে। বরং সকলের ধারণা, পিছনে দেবনাথের সমর্থন না থাকলে রঘু এত বড়ো কাণ্ড ঘটাতে পারত না। আমার মনে হয়েছে এতেই আপনার অনেকখানি সুবিধা হয়ে যাবে। গেলেই সরজমিনে সব কিছু বুঝতে পারবেন, তখন নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজিয়ে নিতে পারবেন।
সুবিমল মৃদু হাসলেন, সিগার ধরালেন, জয়কে বললেন, চা খাবি তো? একটা ভালো প্লট চোখের সামনে তুলে দিতে পারলি তুই, কোনোক্রমে এ সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। হ্যাঁরে, ভালো করে খোঁজখবর নিয়েছিস তো?
সারা দিন এই নিয়েই পড়েছিলুম, যেজন্যে কর্মীসভায় যেতে পারলুম না। অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ কেউ গায়ের জ্বালা মেটাতে খিস্তিও দিয়েছেন, একজন তো ‘কীসের বাচ্চা’ বলে গাল দিল আমার সামনে।
ভালো প্লট তৈরি হয়েছে রে, একটু সাজিয়ে নিতে পারলে জমে খির হয়ে যাবে।
আমিও তা বুঝতে পেরেছি।
আমার পাশে শান্ত হয়ে বোস, অত ছটপট করিস নে। অনেক দিন পর সত্যি সত্যি একটা সাজানো প্লট এনে দিতে পারলি।
জয়শংকর পলক না ফেলে চেয়ে থাকল সুবিমলের মুখের দিকে। এক আশ্চর্য মানুষ। পরিপূর্ণ সুযোগ এলে নাওয়া খাওয়া ভুলে শুধুমাত্র সিগারের সুখটানে জয়লাভের আগাম বার্তা উপভোগ করতে থাকেন। মানসিক স্ফুর্তির তালে দুতিনটে সিগার পর পর পুড়িয়ে ফেলেন, তারপর সময় হলেই শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে দাঁড়ান। মুখের ভাষায় সুতীব্র আস্ফালন, ব্যাটার ছেলে জানে না কত সহজে গুঁড়িয়ে দিতে পারি।
দু’একদিনের মধ্যে দিব্যি প্রলয়কাণ্ড ঘটে যায়। আজও সেই আশঙ্কায় দুলছে জয়। সুবিমলের মুখে আগাম জয়লাভের সেই হাসি, পরপর সিগার পুড়িয়ে চলেছেন, ভাবছেন আর মৃদু মৃদু হাসছেন, যেন সব কিছু হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। জয়কে বললেন, ডজন খানেক সিগারের প্যাকেট কিনে নিয়ে আয়।
এত কেন?
ভালো সন্ধিক্ষণ রে, অন্তত প্যাকেট পাঁচেক তো লাগবে। সিগারের ধোয়ায় সলতে পাকাতে না পারলে প্লটটা পাকা করবি কী করে?
জয় আর কথা বাড়ালো না, চটজলদি পাঁচ প্যাকেট সিগার কিনে এনে বায়বাবুর হাতে দিল।
সুবিমলের মুখে মিষ্টি হাসি।
এভাবে হাসছেন?
তোকে অসীম ধন্যবাদ।
কী এমন করতে পারলাম?
এটুকু কজন পারে বল্ তো?
ভালো ভেবেছিস বলেই তো খবরটা দিতে স্টেশন পর্যন্ত আসতে পারলি। দেখছি, সংগঠন বাড়ানোর উপলব্ধি তোর মধ্যে বেশ গভীর হয়ে উঠেছে। আজকের সভায় গেলে সুচরির সঙ্গে তোর দেখা হয়ে যেত। তা জেনেও তুই পড়ে থাকলি ঘোষাল পাড়াতে। এর নাম সাংগঠনিক ভালোবাসা। তবে মেয়েটা ভুলে যায় নি তোকে, একবার জিজ্ঞেস করল তোর কথা। ভাবছি, মথুরাপুর মহিলা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করে দেব। তুই কী বলছিস? মানে প্রচারে থাকল, ভুলচুক হলে সামলে দিতে পারবি। ভালো মনে করলে যেখানে সেখানে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবি।
কী যে বলেন গুরু।
আচ্ছা, এসব কথা পরে হবে, এখন ঘোষাল পাড়াতে চল্, ঘুরে দেখি কতটা কী করতে পারলি।
আগেই কী রঘুর বাড়িতে যাবেন?
এভাবে বলছিস কেন?
ওইখানেই সকলকে পেয়ে যাবেন, বিকেলে দেখে এসেছি, সবাইকে নিয়ে জাঁকিয়ে বসে আছে ছেলেটা।
তাহলে তাই চল্। সুবিমল সাইকেলে উঠে বসলেন, জয়শংকরও। রায়বাবু ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছেন, পিছনে জয়। সুবিমলের মস্তিষ্কে একটাই প্রসঙ্গ বারবার ধাক্কা মারছে। তার বিরুদ্ধে নামার জন্যে জয়ন্ত দেবনাথ এত রসদ পাচ্ছে কোত্থেকে? ও জানে না, তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি কতদূর বিস্তৃত, এলাকায় এলাকায় তাঁর নেতৃত্বের গুরুভার কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বত্র তাঁর নিজস্ব ভাবশিষ্য গড়ে উঠেছে। খটিরবাজার, লালপুর, রানাঘাট, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, কাশিনগর, কোম্পানির ঠেক, রায়দিঘী— সব জায়গায় সুবিমল নিজের লোকজন তৈরি করতে পেরেছেন। বিষ্ণুপুর থেকে দাদপুর, গুঞ্জিরপুর, দয়ারামপুর, কুল্পী, কাকদ্বীপ, বুলারচক, ঢোলা, ডায়মণ্ডহারবার, সাগর, মগরাহাট, সরিষা, উস্তি, আমতলা, মহেশতলা, গার্ডেনরিচ, ভাঙড়, ক্যানিং— যেখানেই বড়ো জনসভা হোক, তাঁর ডাক পড়বেই। কুয়োর ব্যাঙ জয়ন্ত দেবনাথ সে খবর রাখে কিনা তা জানা নেই সুবিমলবাবুর। রঘুর বাড়ির সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেন সুবিমল, হ্যাঁরে, ভিতরে আছিস?
হন্তদন্ত পায়ে রঘু বাইরে এসে বলল, আমাকে খবর দিলে তো নিজেই চলে যেতাম।
জরুরি কথা ছিল বলেই আসতে হল। একটা ভালো প্লট পেয়েছি, সেটাই কাজে লাগাতে হবে।
রঘু একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল সুবিমলের দিকে।
পাড়ার সকলে তোর পক্ষে আছে তো?
কী যে বলেন, ঘোষাল বাড়ির মেয়েকে ঘরে তুলতে পেরেছি বলেই গতরাতে গ্রামের সকলে মিলে গ্রাণ্ড ফিস্টের ব্যবস্থা করেছিল। খুব নাচা গানা হল, আমি নাকি পাড়ার সকলের সম্মান অনেকখানি বাড়িয়ে দিতে পেরেছি।
আমাকে ডাকলি নে কেন?
দাদা, ভুল হয়ে গেছে।
সকলকে সঙ্গে নিতে খুব ভালো লাগে রে।
বিয়ের অনুষ্ঠান তো হবে, সেদিন না হয় আরেকবার।
ভোর রাতে তোকে একটা কাজ সারতে হবে।
ঠিকঠাক প্ল্যান দিলে কোনো অসুবিধে হবে না।
সেই বিশ্বাস আছে বলেই তো তোর কাছে এলাম।
বলুন শুনি।
চাপাস্বরে সুবিমলের জিজ্ঞাসা, ভোল্টে কী বাড়িতে আছে? কেল্টে এখন এই পাড়াতে থাকে? দুজনের বেশ তো হাত চলে, ওরা তোর পক্ষে আছে কী?
কী যে বলেন দাদা।
তাহলে আর তোকে স্পটে যেতে হবে না, ওদের পাঠিয়ে দিলে কাজ সেরে আসতে পারবে। ঘোষাল পাড়ার তমাল লোকজন নিয়ে ওদেরকে সাহায্য করবে। Action-এর সময় তোকে অবশ্যই গ্রামের বাইরে অপেক্ষায় থাকতে হবে। আরেকটা কথা, এই যে আমি তোর সঙ্গে কথা বলতে এসেছি, এ কথা কাউকে বলবি নে। সব বড়ো কাজ গোপনে সারতে হয়।
বলছেন যখন….
হ্যাঁরে, সংসারযাত্রা ভালো চলছে তো?
ওই জোর জবরদস্তি করে।
সরল হতে সময়তো লাগবেই।
খুব করে বোঝাচ্ছি সুবিমলদা।
সময় হলে শান্ত না হয়ে পারবে না, মানুষের জীবনেও ঋতু পরিবর্তন রয়েছে, চক্র পূরণের জন্যে সময় দিতে হবে।
সেই আশায় রয়েছি রায়দা, ওকে ডাকব, একটু কথা বলবেন?
ওসব পরে হবে, আগে সরল হতে দে। সরল অঙ্ক মানে তাতে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ সবই থাকে। আসছি রে। সাবধানে থাকিস, যেন দেবনাথ এতটুকু টের না পায়। জয়কে বললেন, সাইকেলে উঠে বস্, আর দেরি করা চলে না, বিষ্ণুপুর শ্মশান পার না হওয়া পর্যন্ত একটু জোরে যেতেই হবে।
শীতের রাত, হাতঘড়িতে নটা বেজে পাঁচ মিনিট, সুবিমলের বুকের ভিতরে ভয়ের রেশ, পথে কোনো বিপদ অপেক্ষা করে নেই তো? মোরাম রাস্তায় এগিয়ে চললেন তিরের ফলার মতো, পিছনে জয়। অনেকটাই রাস্তা, মথুরাপুর রেলগেট পার হতে পারলে আর কোনো বিপদ থাকবে না।
রঘু ঘরের ভিতরে একা একা পায়চারি করতে শুরু করল, ঘোষাল বাড়ির মেয়ের প্রশ্ন, কোনো বিপদ আপদের কথা ভাবছ নাতো? উত্তর দিল না রঘু। কাজটা যে কত কঠিন, তা নিজের শরীরের টের পাচ্ছিল। শীতের রাত হলেও গ্রামের মাঝে ঢুকে…। একজনকে পাঠিয়ে ভোল্টেকে ডেকে নিল, কেল্টে এল তার সঙ্গে। সব বুঝিয়ে বলল রঘু। কেল্টের মন্তব্য, তুমি সঙ্গে গেলে ভালো হত।
জানিস তো, বাড়িতে একটা ল্যাটা রয়েছে, জানতে পারলে আবার…।
তা বলেছ ঠিক।
আমি বরং কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাইরে অপেক্ষায় থাকব, একান্ত বেগতিক দেখলে এ্যাকশনে যাব।
তাহলে আর দুশ্চিন্তা নেই।
দুজনে বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়গে যা, সময় মতো ডেকে নেব।
কেল্টে ভোল্টে চলে যাবার পরেও রঘু চোখের দুপাতা এক করতে পারল না। ঘুমিয়ে পড়লে নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে সুবিমলদার কাছে মুখ দেখানো কঠিন হয়ে উঠবে। তাকে কম উপকার করেন নি, পাশে না থাকলে এতদিন হাজতে বসে দিন গুণতে হত, দুর্ভাগ্যের শেষ থাকত না। সুবিমলদা সেই দুর্যোগ আসতে দেন নি। দেওয়াল ঘড়িতে ঢং করে শব্দ হল। রাত একটা, রঘু ঘর থেকে বের হয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলল, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ডাকল, হ্যাঁরে জেগে আছিস?
কে, রঘদুা?
জাগিয়ে দিতে এলুম, কেল্টে কই?
এই তো আমার পাশে শুয়ে আছে।
আর দেরি করিস নে। গ্রামে ঢোকার মুখে কালভার্টের উপর ঘোষাল পাড়ার তমাল অপেক্ষা করে আছে। মাটির দিকে নিচু করে টর্চ মেরে গেলে বুঝতে পারবি। খুব সাবধানে যাস। মিনিট পাঁচেক পরে আমি যাচ্ছি। জনা পাঁচেক সঙ্গে নিয়ে কালভার্টে অপেক্ষা করব।
একটু পরে ভোল্টেরা চলে গেল বাজপাখি হয়ে। রাস্তার উপর নিথর পায়ে দাঁড়িয়ে থাকল রঘু। পিস্তলটা কোমরের লুঙ্গিতে জড়িয়ে নিল, বাকি চারজন এলেই হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বাইরে চলে এল। উত্তুরে হাওয়ায় গাছের পাতায় মৃদু কম্পন। রঘুরা কালভার্টে বসে কান খাড়া করে থাকল। মিনিট কুড়ি পরে নারীকণ্ঠে কান্নার রোল ভেসে এল। রঘু বুঝল, এ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। আত্মরক্ষায় ব্যস্ত মেয়েরা এভাবে চীৎকার করছে। রঘু অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ডান হাত উঁচু করে সজোরে বাতাসের বুকে ঘুসি চালিয়ে দিল, বিড় বিড় করে বলল, ব্যাটার শালা বুঝুক, রঘুর বিরুদ্ধে গেলে কত বেশি টানা-হ্যাচড়া হতে পারে। দাঁতে দাঁত রেখে মজা উপভোগ করতে লাগল।
নতুন সকাল এল আরও কয়েক ঘন্টা পরে। তার আগে জয়ের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল, একবার শরীরে শিউরে উঠল। এতক্ষণ নিশ্চয় সেই মারাত্মক ঘটনাটা ঘটে গেছে। কিছুতেই ভিতরের টেনশন চেপে রাখতে পারল না। দ্রুত জামা প্যান্ট পরে সাইকেলে মথুরাপুর থানার দিকে ছুটল। চা দোকানের পাশে সাইকেল রেখে এক পলক ভেবে নিল, সামনে চেয়ে দেখল, জয়ন্ত দেবনাথ মারাত্মক আহত হয়ে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে অটোতে মথুরাপুর থানায় ঢুকছেন ডায়েরি করতে। সারা মুখে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ, ফর্সা মুখশ্রীর মানুষটাকে ঠিকমতো চেনা যাচ্ছে না। শুধু জয়ন্ত দেবনাথ নয়, তাঁর সমর্থকদের আট দশটা বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারাও ডায়েরি করতে এসেছে মেসিন ভ্যানে চেপে। জয় আরেকবার চমকে উঠল সুবিমলের গুরুমশাইগিরি দেখে। কেউ জানতেই পারল না, তার গুরু কত সহজে এত নিচে নামতে পারলেন।

চলবে…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মুসা আলি
শিক্ষক জীবনের ৫৫ বছরে এসে সাহিত্যচর্চা শুরু। ইতিমধ্যে পঞ্চাশের বেশি উপন্যাসের মনসবদার। গল্প উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে দীর্ঘ জীবন পরিক্রমায় কঠোর বিশ্বাসী। এখন বিদগ্ধ পাঠক শুধুমাত্র কাহিনি বা চরিত্র খোঁজেন না বরং তার ভিতরে লেখক এর নিজস্ব গভীর মনন আবিষ্কার করতে চান। ঔপন্যাসিক মুসা আলি দীর্ঘ জীবন পরিক্রমার জাদুতে তার নিজস্ব মনন দিয়ে বাঙালি পাঠককে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ করে তুলতে বদ্ধপরিকর।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!