কবি সুচরিতা চক্রবর্তী’র ছ’টি কবিতা

সুচরিতা চক্রবর্তী
সুচরিতা চক্রবর্তী
3 মিনিটে পড়ুন
সাময়িকী আর্কাইভ

নপুংসক

এক জোড়া জীবন্ত স্তবকের জন্য
যেখানে বীজ বপনের বিছানা নেই
সেখানে আমি বুনেছি গদ্যের ঘাস,
অনন্ত এ ক্ষিদের দুনিয়ায় কবিতার চেয়ে
ঋতু ফসলের চাহিদা ঢের গুণ বেশি।

যে প্রবল সাহস মৃত্যুকে উপেক্ষা করে
জীবনের জন্য, সদ্য যুবক বাধ্য হয়
অন্ন অন্বেষণে ঘর ছাড়ে – হারায় ঠিকানা,
সে হয়তো তোমার আমার ভাই বোন না।

তবু জেনে রাখো নদী, বাল্য শিশুরা পোড়া রুটি দিয়ে চাঁদ বানাতে জানে। চারদিকে
এত জল! অথচ কোনো পানীয় নেই, তারপর…
সে কিশোর হয়ে হৃদয়ে বাঁশি নিয়ে চলে
যায় জলের সন্ধানে।

শূন্য জীবন

সোনার মোহমায়ায় জরানো তুলসী তলা
তিস্তার খুপরি ঘরে সুগন্ধেশ্বরী মাতা
বিকেলের রোদ্দুর যাকে ছুঁয়ে দিয়ে যায়,
উঠোনের বেলগাছ চালতা ফুল…
মায়াময় অন্ধকার চুয়ে চুয়ে পড়ে
হোগলা পাতা খেজুরের ঝুমঝুম ফল;
আলো আঁকে জোনাকির সংসার।
দাওয়ায় পা ছড়িয়ে বসে আছে মন
রাত জেগে কথা বলে চাঁদের সাথে,
শরীরে জরিয়ে থেকো হিম ভেজা শাড়ি
মায়ায় মায়ায় বেঁচে থাকে, একলা নারী।

শিকড়

দোরগোড়ায় শিকর চাপা পড়ে আছে
কি আশ্চর্য অমোঘ টানে আটকে পা,
মেরুদন্ডের মজ্জায় বংশগতির ছাপ-
ছেড়ে বেরোতে কেটে গেলো প্রজন্ম।
এ প্রজন্ম অবশ্য ভাবেনি তেমন,
শিকড় কাটতে জানে, জাল ছিঁড়ে
এগিয়ে যাওয়ায় যে পরম তৃপ্তি তা
বোঝা উচিৎ ছিলো আমাদের।
ছিটে বেড়া – রঙ চটা দেওয়াল- নুন আর ফ্যানের সামঝোতায় কাটিয়ে দিয়ে যাবো বাকি দিন; শিকড় আরো জড়িয়ে নাও আমায়।

বৃষ্টি

চাতকের ডানায় নেমে এলো তৃষ্ণা –
বহুদিনের কান্না জমাট বেঁধেছে
পাতায় জমে থাকা ধুলোর নীচে।
কবেকার কালিদাসের ইতিহাস
উড়ে যায় বকের ডানায় চড়ে,
এত মেঘ যদি জমা হয়ে থাকে
ভালোবাসা খুঁজি কোথায়!
চাতকেরা দল বেঁধে নেমে আসে
আকাশের বুক চিনচিনে ব্যাথা
চেটে নেয় সমস্ত বৃষ্টির স্বাদটুকু।

প্রিয় শহরের বুকে বাজতো পিয়ানো মধুর

প্রিয় শহর থেকে বিচ্ছিন্ন ক্রমশ সেঁধিয়ে যাচ্ছি ঘরে
যন্ত্রণা সাবলীল স্বকীয় ভঙ্গিমায় সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে টবের গাছে
দরজার কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ; জানলায় একটুকরো রোদ
সন্ধ্যের শহরে বেজে উঠতো পিয়ানো প্রাঞ্জল
কে যেন পরালো মৃত্যুর নৈঃশব্দ!
স্তব্ধতা ভেঙ্গে কে লিখবে স্বরলিপি
কে খুলবে দরজার কপাট!
সকাল সন্ধ্যে রাত্রি গোগ্রাসে গিলে নিচ্ছে সময়
ক্ষুধার্তের দৃষ্টি চেটে খাচ্ছে পোকা মাকড়
সারি সারি বাড়ি নিস্তব্ধ নিঝুম
সড়ক খুঁজে নিচ্ছে চাকার দাগ।
ইউক্যালিপটাসের ভারী মজা, ওকে ছোঁয়া দায়
পাঁজর ভাঙ্গা পিয়ানোর শব্দ শোনা যায়।
চার দেওয়াল বলো কবে সুস্থ হবে আমার শহর।

পরিকল্পনা

পৃথিবীতে বহু রাস্তা আছে, গলি পথ
মনোমুগ্ধকর হোডিং সাঁটা কোম্পানি
রাজনীতি বিজ্ঞানের ঢেঁকুর তুলছে
ঘুষখোর চিকনাই পাজামা পাঞ্জাবি।
স্টেশনের দিকে গেছে যে পথ…
কারা যেন পরিকল্পনার পলাশ লাল
সমতল ছুঁয়েছে স্বাধীন ভাবে।
কত পথ অবরোধ উলটে থাকা গাড়ি
তরুণ সম্পাদকের ধুকপুকে নাড়ী
হাবিজাবি এলোমেলো রেখাপাত
একটা নীল হরিণ খুঁজে যায় নদী।
হাতে আঁকা জঙ্গলের ছবি যতটা
নিরিবিলি হতে পারে আসলে তা নয়।
বড় বিপর্যয়!
চারদিকে মৃত্যু দন্ড সংক্রমণের আঁচ
নাইট ডিউটি সেরে নিচ্ছে শীতল রাত
অশ্রুহীন এত স্তব্ধ আলোড়ন।
পা টিপে রাস্তা হাঁটে কালো বিড়াল
জীবনকে ঘুড়িয়ে দিতে পারে ইন্দ্রজাল
যা কেবল চাপা পড়ে প্রাগৈতিহাসিক
হরোপ্পা মহেঞ্জোদারোর স্নান ঘরে
মাথায় ধাক্কা মারে আওড়ানো বুলি
আমরা বাঁচবো আমরা বাঁচতে চাই।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জন্ম ১লা জুলাই, রাজপুত বংশধর। প্রকাশিত চারটি কাব্যগ্রন্থ । পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয় কবিতা ও ছোট গল্প। প্রায় দশটি সংকলনে রচনা সংকলিত হয়েছে। বিভন্ন সম্মাননায় ভূষিতা কবি কবিতার মধ্যে প্রকাশ করেন জীবনের মূল্যবোধ।
১ টি মন্তব্য

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!