‘ঘোড়েল’ পর্ব – পাঁচ

মুসা আলি
মুসা আলি
13 মিনিটে পড়ুন

ভোর থেকে সুবিমল স্বপ্ন আর কঠোর বাস্তবের দ্বন্দে এত বেশি ক্ষতবিক্ষত হতে থাকলেন যে কিছুতেই নিজেকে স্থির করে রাখতে পারছেন না। মনের দৌড়ে ক্লান্ত হতে হতে ভিতরের শেষ ক্ষমতাটুকু হারিয়ে ফেললেন। দুদিকেই সমান বিপদ—ডাঙায় বাঘ জলে কুমির অবস্থা। মনে মনে শুধু কম্পিত হলেন না, দুই বিপরীত টানে কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে আসতেই পারলেন না।
সকাল হলেও জানালাগুলো না খুলে বিছানায় পড়ে ছিলেন। কাজের মেয়ে চা করতে এসে বাইরে দাঁড়িয়ে বারকয়েক ডাকাডাকি করলেও সুবিমল সাড়া না দিয়ে যেমন শুয়েছিলেন, তেমনই শুয়ে থাকলেন। বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হল কাজের মেয়ে। বিছানায় লেপটে থেকে অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে বেশ লাগছে। কুড়িবছর আগেকার একটা স্মৃতি ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে মনের পটে। সাদাত হোসেনের হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। কূটনীতির চত্বরে পা রেখে বুঝতে পেরেছিলেন, ঠিকমতো গুরু না ধরতে পারলে এত জটিল দুর্গম পথে খুব বেশি এগোনো সম্ভব নয়।
সুবিমল সাদাতকে যত কাছ থেকে দেখেছেন তত বেশি অবাক হয়েছেন। রাজনীতির ঘুঁটি সাজানোর ক্ষেত্রে কী দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছিলেন তিনি। একটা সূত্র পেলেই হল, তা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ষোলো আনা করে পাবলিকের চোখে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন একম অদ্বিতীয়ম। দেখতে দেখতে আবেগে গদগদ হয়েই সুবিমল তাঁকে গুরু হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। লোকটা নিজস্ব মন্ত্রশক্তিতে এত কঠিন ছিলেন যে কিছুতেই কোনো অবস্থাতেই নিজের আদর্শ রক্ষা নিয়ে এতটুকু সমঝোতা করতেন না। প্রায় হুকুমের স্বরে তাঁকে অনেকবার বলেছেন, শুনে নাও সুবিমল, কূটনীতি কোনো কাজে আসবে না যদি না নিজের সততা ধরে রাখতে না পারো। এই পুঁজিটুকুই আসল, না থাকলে মানুষের কাছে সূক্ষ্ম কূটনীতির কোনো মূল্য নেই।
সেই বজ্রকঠিন গুরুদেব ক্যানসারে কয়েক মাস ভুগে চিরদিনের মতো সরে পড়তেই সুবিমল নিজেকে ধীরে ধীরে পাল্টে নিতে শুরু করেছিলেন। মজ্জায় মজ্জায় বুঝেছিলেন, নতুন যুগে কেবলমাত্র আমমানুষের মঙ্গল নিয়ে পড়ে থাকলে রাজনীতিতে খবু বেশি সাকসেস পাওয়া সম্ভব নয়, শঠতাকে সততার মুখোশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
সময় পার হতে থাকল পলে পলে। গুরুর দীক্ষার সঙ্গে নিজের পছন্দের দ্বন্দ্ব বার বার উপলব্ধি করেও শেষ পর্যন্ত বুঝলেন, মানুষ নিজেকেই বেশি ভালোবাসে। তাই নিজের পথে চলে অগ্নি পরীক্ষার মুখোমুখি হতে চাইলেন। তাঁকে জিততেই হবে, প্রয়োজন হলে গুরুর সব নির্দেশ উপেক্ষা করে। পারিপার্শ্বিক অবস্থানে নতুন উদ্দীপনা খুঁজে পেলেন নতুন পদে হাঁটতে গিয়ে। নিজের চোখে বহুবার দেখেছেন, কূটনীতির স্থানীয় ঘোড়েলরা সিঁদেল চোরের মতো খুচরো সুযোগ নিতে কেমন করে ছোটো ছোটো গর্তে ঢুকে পড়ছে। আদর্শ রক্ষার কোনো বালাই নেই, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধিই শেষ কথা। যে কোনো মূল্যে নিজস্ব সুযোগ সুবিধে ধরে রাখার দৌড়ে যে যার মতো ছুটে চলেছে। লাগালাগি বাস পাশাপাশি চাষ— সুবিমলও চুপ করে থাকতে পারলেন না, একান্ত বাস্তব তাড়নায় সেভাবে থাকা সম্ভবও ছিল না। রাজনীতিতে লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে ফেললে তাঁর জন্যে অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না। এক অভিনব প্রসঙ্গের ভিতরে ঢুকে একুল সেকুল হতে থাকলেন, সুবিমল নতুন পথে মনপ্রাণ দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলেন, স্থানীয় ছোটো মেজো সেজোর চেয়ে অনেক বেশি জোরে। টেক্কা মারার জন্যে এ দৌড় বাস্তবিক অর্থে খুব প্রয়োজন ছিল।
গুরুদেবের স্মৃতি ভুলে কঠোর বাস্তবকে উপেক্ষা করে সুবিমল স্বপ্ন রাজনীতিক হয়ে উঠলেন। অন্যের স্বপ্ন চুরি করে নিজের স্বপ্নকে বড়ো করে তোলাই জীবনব্রত হয়ে উঠল। সমাজ নয়, সমগ্র মানুষের ভাবনা নয়, অন্যের উপকারের প্রসঙ্গ নয়, কোনো কিছুতে হাত দিলে সবার আগে মনে পড়ত নিজের কথা। ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে তো সমাজ নয়। সেই অর্থে নিজের ভাবনার মধ্যে কোনো ভুল খুঁজে পেলেন না। এমন কী স্ত্রী সুজাতার নৈতিক বাধা অতিশয় তুচ্ছ বলে মনে হল। মেয়ে মানুষের কথায় কান দিলে নিজের সফলতায় অনেক পিছনে পড়ে যেতে হবে। তা ছাড়া সুজাতা কে? নিছক একটা মেয়ে ছাড়া তো কিছুই নয়। রাতের প্রেয়সীকে রাতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, তার বাইরে কোনো অধিকার থাকা উচিত নয়।
কয়েক মাস পরে সুজাতার অকাল মৃত্যু হলে সুবিমলের জীবনে আর কোনো বাধাই থাকল না। নৈতিকতার প্রশ্ন নেই, জীবনে গুরুর স্মৃতি নেই, সামাজিক ভাবনা নেই, সুবিমল শুধুমাত্র নিজের জন্যে নতুন মানুষ হয়ে উঠলেন। অবশ্য রাত এলে নতুন একটা বিপত্তি তাঁকে অভিনব খাদের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকল, হাজার চেষ্টা করেও শরীরের অবাঞ্ছিত কামড় থেকে নিজের শরীর মনকে রক্ষা করতে পারছিলেন না। বিশেষ করে ভোর রাতে জেগে উঠলেই ভিতরের পশুটা ভীষণ জ্বালাতন করতে শুরু করল। শরীরের কানায় কানায় টনটনে কামনার আগুন যা ভুলে থাকতে আরও বেশি অর্থ রোজগারে মন দিয়েও নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। সুজাতার কাল্পনিক শরীরে ভোগের আগুন সুবিমলের শরীরে উপছে পড়তে লাগল। এক অদ্ভুত সময়ের টান, সেই স্রোতে ভেসে সুবিমল কীভাবে বেডরুমটাকে স্বপ্নের বেডরুমে পরিণত করতে পেরেছিলেন, সেই স্মৃতি বার বার ধাক্কা দিতে থাকল।
খবরের কাগজে একটা চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন বের হয়েছিল। প্যানেল তৈরির কাজ চলছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হবে। স্থানীয় রাজনীতির ঘোড়েলদের উপর প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য কিছু যুবককে চাকরি দিয়ে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা, গ্রামাঞ্চলে উপকৃত সাকরেদের হাত ধরে আম-মানুষের উপর দলীয় প্রভাবকে আরও শক্তিশালী করে তোলা।
সেই পথে কপাল খুলে গিয়েছিল সুবিমলের। নির্দিষ্ট দিনক্ষণ আজ আর ঠিক ঠিক মনে পড়ে না। খুব সম্ভব শনিবার, সন্ধের পরে চেয়ারে বসে গুম মুখে চা খাচ্ছিলেন, সদর গেটের সামনে কে একজন এসে থমকে দাঁড়ালো। সুবিমল ভিতরে ভিতরে হিল্লোলিত না হয়ে পারলেন না। হামিদুল ছেলেটাকে পাঠায় নি তো? গলার স্বর উঁচু করে বললেন, কিছু বলবে?
আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
তাহলে ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে এস, কোন্ অঞ্চল থেকে আসছ?
শঙ্করপুর থেকে।
হামিদুলকে চেনো?
চিনি স্যার।
একই গ্রামে বাড়ি?
কাকুর পাশের বাড়িতে থাকি।
তাহলে তো চিনবেই, কীজন্যে এসেছ বলো।
কাকু আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।
আগেভাগে তা বললে না কেন?
ভুল হয়ে গেছে স্যার।
স্যার বলছ কেন? রাজনীতিতে এ সম্বোধন ভালো নয়। সবাই আমাকে সুবিমলদা বলে ডাকে, তুমিও সেই ভাবে…।
তোমার নাম কি?
মতিবুর।
কী করো?
পড়াশোনা করে বসে আছি।
কতদূর পড়েছ?
গত বছর গ্রাজুয়েট হয়েছি।
অনার্স ছিল?
ছিল।
কোন বিষয়ে?
বাংলায়
কেমন নম্বর পেয়েছ?
বাহান্ন শতাংশ।
ফলাফল বলছে, বেশ ভালো ছেলে তুমি, কীজন্য এসেছ বলো?
কাকু বললেন, প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক নেওয়া হবে, প্যানেলের কাজ চলছে, আপনার নাকি হাত রয়েছে।
এত ভালো ফল নিয়ে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতে যাবে কেন? বড়ো সুযোগের কথা ভাবছ না? এ রেজাল্ট নিয়ে দিব্যি হাই স্কুলে চাকরি পেয়ে যেতে পারো। এস এস সি দিয়েছ?
দিয়েছি স্যার।
তাহলে নিশ্চয় সুযোগ পেয়ে যাবে।
তা কী বলা যায়?
এভাবে ভাবছ কেন?
আমার মতো রেজাল্ট নিয়ে অনেকেই বাড়িতে বসে আছে। পরের বছর বি এড ছাড়া কাউকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না। সেজন্য বলছি, যদি কিছু করা সম্ভব হয়।
হামিদুল পাঠিয়েছে যখন, অবশ্যই ভেবে দেখব। আমাদের পার্টিটার্টি করো তো?
কী বলছেন স্যার? কাকু যখন যেখানে ডাকেন, যাই।
একটা ভালো প্রসঙ্গ শোনালে ছোকরা, তবুও তোমাকে আরেকটা ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে হবে।
খুলে বললে চেষ্টা করতে পারি।
অবশ্য হামিদুলের কথা ভেবে তোমার রেট অনেকটা কমে যাবে। ওকে মোবাইল করে ব্যাপারটা জেনে নেব কী? আই মিন তোমাকে নিয়ে কী ভাবছে, তা জেনে নেওয়া খুব প্রয়োজন।
বেশ তো, তাই করুন।
সুবিমল বারান্দা থেকে দ্রুত ঘরের ভিতরে ঢুকে ফোন করলেন হামিদুলকে, সব তথ্য জেনে নিলেন, আবার বারান্দায় ফিরে এসে বললেন, তোমার চাকরির জন্যে হামিদুল strong recommend করল।
খুশি হল মতিবুর, দুচোখ স্থির করে চেয়ে থাকল সুবিমলের দিকে। —স্যার, আমার জন্যে একটু অনুগ্রহ করতেই হবে।
‘অনুগ্রহ’ শব্দটা মাথায় লাগল হে ছোকরা। এভাবে বলা যায় নাকি? আমাদের দল করো তুমি, সেটাই সবচেয়ে বড়ো সার্টিফিকেট, অবশ্য বলতে পারো, শুধু ভাত গালে ওঠে না।
মোট কত দিতে হবে বলুন?
দশ থেকে তিন কমিয়ে দিলাম।
একটু বেশি লাগছে স্যার, এত সংগ্রহে নেই।
তোমার কাছে এখন আছে কত?
লাখ দুই হতে পারে।
ওতে হবে না হে, ডিমাণ্ড অনেক বেশি। অন্য কোনো অবলম্বন থেকে কী সংগ্রহ করা যায় না?
বিঘে দুই জমি আছে স্যার।
তাহলে এত ভাবছ কেন? ওখানে কেমন দাম চলছে?
রাস্তার পাশের প্লট, পাঁচ লাখের উপর দাম পাব।
এক কাজ করো, যা সংগ্রহ আছে, কাল দিয়ে যাও। হামিদুলের কথা ভেবে আরও এক কমিয়ে দিলাম।
থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, প্রায় সব খুইয়ে আপনার হাতে তুলে দিচ্ছি, একটু দেখবেন স্যার।
সুবিমল আজও কারুর সঙ্গে তঞ্চকতা করে নি।
হামিদুলকাকু সেকথাই জোর দিয়ে বলেছেন।
আমার লাইফস্টাইল ও অনেক আগে থেকেই জানে।
প্রশংসা করে আরও অনেক কথা বলেছেন।
পূব দিকে সূর্য ওঠে, এ নিয়ে কারুর মনে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়, আমাকে নিয়ে হামিদুলের ভাবনা তেমনই।
দারুণ উপমা দিলেন স্যার, সারা জীবন মনে রাখব।
এ উপমা নয়, আমার রাজনৈতিক জীবনের চরম অভিজ্ঞতা, কাল কটার মধ্যে আসছ বলো?
স্যার, নটার মধ্যে।
পারলে হামিদুলকে সঙ্গে নিয়ে এস, ওর সামনেই সব কথা সেরে ফেলব।
স্যার, আপনাকে একটুও অবিশ্বাস করছি না।
বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রসঙ্গ তুলছ কেন? তুমি হামিদুলের সূত্র ধরে আমার কাছে এসেছ, হামিদুলের উপস্থিতিতে সেই নির্ভরতা আরও গভীর করে তুলতে চাই। একটা কথা মনে রেখো মতিবুর।
বলুন স্যার।
চাকরি পাওয়ার পরে পার্টি তোমার জীবনে অন্নদাতার ভূমিকায় চলে আসবে। জীবনে কোনোদিন সেই কৃতজ্ঞতাটুকু ভুলে যেও না।
কী যে বলেন স্যার, অন্নদাতাকে কেউ ভুলতে পারে নাকি?
থ্যাঙ্ক ইউ মতিবুর, তোমার সামাজিক বোধে গর্বিত হলাম কিন্তু একটা কথা এখনও রাখলে না।
কী বলুন?
আমাকে সুবিমলদা বলে ডাকতে পারলে না।
তাতেই খুশি হবেন?
আমি গণভাবনার কথা বলছি। রাজনীতি করি মানুষের স্বার্থে, সুবিমলদা ডাক যত কমন হবে তত বেশি তাদের মধ্যে নিজেকে মেলে ধরতে পারব। তুমি কী জোর করে সেই সূত্র থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাচ্ছ?
ফিক করে হেসে ফেলল মতিবুর।
এভাবে হাসলে যে? গম্ভীর হলেন সুবিমল।
আপনার গণচেতনায় উদ্বুদ্ধ হলাম।
আমিও তোমার মঙ্গল কামনা করি।
হামিদুলকাকু আপনার উদারতার কথা আমাকে অনেকবার বলেছেন।
অত্যন্ত খুশি হলেন সুবিমল।
মতিবুর বারান্দা থেকে সামনের চত্বরে নামল, পায়ে পায়ে এগিয়ে চলল। একটা বাঁকা প্রসঙ্গ বার বার চক্কর মারছে মাথার ভিতরে। জনসেবার নামে নানা চমকপ্রদ কথা বললেও লোকটা আসলে পাকা ধেড়ে শুয়োর।
নিজেই চমকে উঠে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। কেউ শুনে ফেললে কত বড়ো বিপদ হতে পারে, তা ভেবে স্তম্ভিত হল। পাশে চেয়ে দেখল, কে একজন হন্‌হন্ পায়ে এগিয়ে আসছে। মতিবুরের বুকের গভীরে ঢিপঢিপ শব্দ শুরু হল। লোকটা শুনে ফেলে নি তো? চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত একটাও বিরুদ্ধ শব্দ উচ্চারণ করা যাবে না। মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হল মতিবুর।
সুবিমল বারান্দায় বসে মনে মনে হামিদুলকে শুধু ধন্যবাদ দিলেন না, নিজের ইচ্ছাশক্তিতে বুঁদ হয়ে থাকলেন। আরও কয়েকজনকে এভাবে খুঁজে পেলেই সহজে নিজের মিশনে সফল হতে পারবেন। তা না হলে যে টার্গেট পূরণ করা যাবে না। কলকাতায় গিয়ে নেতাদের চোখ ধাঁধানি বিল্ডিং দেখে ভিতরে ভিতরে এতদিন যে লজ্জায় পড়েছিলেন, সেই দুঃখ ঘোচানোর ইচ্ছায় আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন। আনমনে সামনে চেয়ে দেখে আরও চমকে উঠলেন। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও দুচোখ কচলে নিয়ে সাদর আপ্যায়ন জানিয়ে বললেন, অশেষ ধন্যবাদ সুচরি, এলাকার নাম উজ্জ্বল করেছ তুমি।
স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।
তোমার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে আমার কোনো ভূমিকাই ছিল না।
উৎসাহ দিয়েছিলেন বলেই তো এত বড়ো সম্মান লাভ করা সম্ভব হয়েছে।
এলাকার গৌরব বাড়াতে এটুকু খুব দরকার ছিল।
সেজন্যে হ্যাণ্ডসেক করতে এলাম স্যার। হাত বাড়িয়ে দিল সুচরিতা। শরীরের টানে সুবিমলের হাত সামনে চলে এল। দুহাতের তালু জমে গেল মুহূর্তে। বেশ লাগছিল সুবিমলের। হাত সরিয়ে নিতে মন চাচ্ছিল না। দুচোখ খাড়া করে একবাব দেখে নিলেন বাড়ির সামনের চত্বরটা। কাজের মেয়েটা আবার ফিরে আসবে না তো? বুকের গভীরে আবেগের ঢেউ চলতে থাকল, সুচরিতা বার দুই অস্ফুটে স্যার বলে ডাকল। শুধু উঁ বলে রায়বাবু চুপ করে থাকলেন কিন্তু হাত সরিয়ে নিলেন না। হারিয়ে যাওয়া সুজাতার শরীরের কম্পন, আমেজ, ইমেজ, শিরশিরানি উপভোগ করতে লাগলেন সুচরিতার হাতের উষ্ণতায়।
আবেগ বিহ্বল সুবিমলের ভিতরের দর্শন টের পেয়ে সুচরিতা মুখ নীচু করে বসে থাকল। ভীষণ কাঁপুনি, অভিনব ঝাঁকুনি, কম্পিত স্বরে রায়বাবু বললেন, চলো না ভিতরে গিয়ে বসি। পাশের বাড়ির পটলাকে বললেই মিষ্টি নিয়ে আসবে, তুমি আমি মিলে….
ওসবে দরকার নেই স্যার।
তাহলে সত্যি বসবে না?
আবার আসব স্যার।
কবে আসবে বলে যাও।
স্যার, পরশু দিন।
আজকের মতো সকালে?
বলছেন যখন….।
মিস করো না সুচরি, মিষ্টি আনিয়ে রাখব।
সদর্থক মাথা নেড়ে সুচরিতা বারান্দা থেকে সামনের চত্বরে নামল, লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে চলল। সুবিমল পলক না ফেলে চেয়ে থাকলেন সুচরির ছন্দময় শরীরের দিকে, নিজের ভিতরের উষ্ণতা কমছে ধীরে ধীরে, কেমন যেন লজ্জা এসে ঢেকে দিচ্ছিল তাঁকে। স্রেফ শরীরের টানে সামাজিক প্রতিপত্তির বাইরে গিয়ে হঠাৎ করে যা করলেন, সেই লজ্জা থেকে কিছুতেই পালানোর পথ খুঁজে পেলেন না। সুজাতা মরে গিয়ে তাঁর শরীরটাকে যে কত গভীর খাদে ছুঁড়ে দিয়ে গেছে, সেই ভাবনায় ডুবে থাকলেন, ভিতরের উগ্র পশুটা দ্রুত ঠান্ডা হতে শুরু করল।

চলবে…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মুসা আলি
শিক্ষক জীবনের ৫৫ বছরে এসে সাহিত্যচর্চা শুরু। ইতিমধ্যে পঞ্চাশের বেশি উপন্যাসের মনসবদার। গল্প উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে দীর্ঘ জীবন পরিক্রমায় কঠোর বিশ্বাসী। এখন বিদগ্ধ পাঠক শুধুমাত্র কাহিনি বা চরিত্র খোঁজেন না বরং তার ভিতরে লেখক এর নিজস্ব গভীর মনন আবিষ্কার করতে চান। ঔপন্যাসিক মুসা আলি দীর্ঘ জীবন পরিক্রমার জাদুতে তার নিজস্ব মনন দিয়ে বাঙালি পাঠককে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ করে তুলতে বদ্ধপরিকর।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!