ঈদে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ দিয়ে চলাচল করছেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে। তবে, গত ২৪ ঘণ্টায় পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশী মোটরসাইকেল পার হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ।
বিআইডব্লিউটিসি ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভোর সকালের দিকে বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল পার হয় ফেরিতে করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই চিত্র পুরো পাল্টে যায়। সরকারিভাবে মোটরসাইকেল পারাপারে বিধিনিষেধ থাকায় ও পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে মোটরসাইকেলের আধিক্য ব্যাপকভাবে কমতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পাটুরিয়ার তিন নম্বর ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকা গোল্ডেন লাইন পরিবহন বাসের যাত্রী ইব্রাহিম মুসার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, “এই ঘাট দিয়ে প্রতি ঈদে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে যাই। ফেরির নাগাল পেতে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হতো। অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হয়তো। তবে এবারের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। ঘাটে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের বহনকারী বাস ফেরিতে উঠেছে। এত দ্রুত ফেরিতে ওঠার সুযোগ পাবো ভাবিনি।”
পণ্যবাহী ট্রাকের চাপও ঘাট এলাকায় দেখা যায়নি। পাটুরিয়ায় দুটি ট্রাক টার্মিনালে পঞ্চাশটি পণ্যবাহী গাড়ি রয়েছে। যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি এসব পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে পারাপার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নির্মাণাধীন পাঁচটি পন্টুনের ১০টি পকেট দিয়ে যানবাহন লোড আনলোড হবে। ছোট গাড়ি (প্রাইভেটকার) পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের ৫ নম্বর পন্টুন দিয়ে পার হবে এবং বাকি পন্টুন দিয়ে যাত্রীবাহী পরিবহন লোড আনলোড হবে।
অন্যদিকে, আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লোকাল যাত্রীদের জন্য ৩৩টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আরিচা-কাজিরহাট নৌপথের জন্য শতাধিক স্পিডবোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় থানা পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশ সমন্বয় করে কাজ করবে। ঈদযাত্রায় শৃঙ্খলা রাখতে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে এক হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এই বাহিনীর সঙ্গে আরও থাকবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও আনসার সদস্যরা। অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের বিশেষ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।
বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, “আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের আগের ও পরের তিন দিন সাধারণ পণ্য বোঝাই ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। জরুরি সেবায় নিয়োজিত পণ্যবোঝাই যানবাহনগুলো পার হবে।”
তিনি আরও জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমেছে। বর্তমানে এই নৌপথে ২১টি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন পার করছে। ভোগান্তি ছাড়াই দ্রুত এবার ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহন নৌপথ পারাপার হচ্ছে।
পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান বলেন, “মহাসড়ক ও ঘাট এলাকায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমাদের পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত আছেন এবং ঘাট এলাকায় যাত্রী হয়রানির কোনো অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেবো।”