কবি রুমা পারভীনারা’র ছ’টি কবিতা

রুমা পারভীনারা
রুমা পারভীনারা
4 মিনিটে পড়ুন

আমার বাগানে সূর্য

কাক ভোরের নিস্তব্ধতায় বিদীর্ণ করেছে শত ক্লান্তি।
নদীর চরার বালুকাতে তখনও চিকচিক করছে জ্যোৎস্নার শালুকভরা আর্তি।
নেমে আসো পৃথিবী এ ধূ ধূ প্রান্তরে।
হাতছানি দিয়ে বলে দাও তোমরাও আছো।
তোমরাও বাঁচতে চাও।।
চরের চিকমিকি বালিতে মাছের মতো খাবি খেয়েও বাঁচার জন্য হাপুস হুপুস।
হৃদয়েতে তখনও বাঁচার উজ্জ্বল শ্বাসপ্রশ্বাস।
সারারাত ধরে পাখা খসা শব্দ আসছে মরিবার তরে ওড়া পিপিলিকার।
তবু্ও পিপিলিকা উইল করছে পরবর্তী দিনের সম্পদ গোছানোর তৎপরতায়।
কাক ভোর থেকে রানার ছোটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দিনের বেলার সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়ার সঠিক খবর বড়ো বাবুদের।
তখনও ওলোট পালোট হয়ে পড়ে থাকা সূর্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আমার ছাদ বাগানে রশ্মি মেলে দেওয়ার জন্য।

বন্ধ করো

বন্ধ করো তোমার সচল মুষ্টি।
কিছুক্ষণ নিস্তেজ করো তোমার হস্ত স্নায়ু।

কিছুক্ষণ নিজেকে নিস্তব্ধ করো
এ ব্যস্ত পৃথিবীর রাজপথে।
গভীরভাবে ঝিল্লি মুখরিত ঝাঁঝাঁ রৌদ্রে।
তোমার হস্ত আগল কিছুটা দৃঢ় করো।
গভীর রাতের গভীরতায় ঐক্যতা আনো।
একটু আপন করে ভালোবাসো ডেস্কের শেষ উপপাদ্যটাকেও।

একটু বিস্তার করো বিশ্বাসের খেলায় মাতানো জগৎকে।
বন্ধ করো!একটু ভালোবাসো তোমার প্রতীক্ষার ললনাকেও।

অর্ধ নগ্নতা

আব্রুতার রূপক আজ ঘিরেছে।
পৃথিবীর দেহজ পানে।।
যেথায় সবই উলঙ্গ হয়েও।
হয়নি সমাজ অর্ধনগ্ন।।
যদিওবা প্রজার চোখে সবই আবৃত।
অভুক্ত তিতিক্ষার চিত্রে সবইতো মুখাপেক্ষী।
রাজার সামান্য ছিঁটেফোঁটার তীব্র আকাঙ্খায়।
সবই কেমন রূপক অন্ধত্বের আড়ালে নিমজ্জিত রয়।
তবুও তারই মাঝে কারও দীপ্ত সত্য উদ্ঘাটন।
শিশুবাচ্যের উবাচ্চে তাহা ঘোষিত হলো-
“এ রাজা তোর কাপড় কই?”

ফিরে আসবো

নদী নাম্নী বালিকার পোশাকের মাধুর্য।
সাদা রঙের মুক্তা জড়ানো ঢেউ খেলানো ঘাগরা।
কানে তার কানছাবি–
ভেসে যাওয়া স্মৃতির ডালপালা।
গলে তার স্বর্ণ খচিত চকচকে মুক্তার বালুকা।
হস্তে তার চূড় সম বিশাল পর্বতের টুকরো।
পদ্মে তার নিক্কণ সম ফেলে আসা স্মৃতির মালপত্র।।

আপন গতিতে চলে নদী।
কলকল সঙ্গীতের তালে তালে।
যেথায় যায় নিয়ম মতো আশাবাদী করে বলে যায়।
ফিরে আসবো ঠিক সময়ে একটু অপেক্ষা করো।

এই নদী নারীর বড়ো ভূষণ তার দুই মুখ নির্মিত।
এক মুখে শুরু হয়ে অন্য মুখে শেষ হয়।
তবুও হতাশ করেনা সে সমাপ্তির মাঝেও।
ফিরে আসে হাতে নিয়ে শত শত স্মৃতির ডালি নিয়ে।

এ নদীর বহর অনেক গভীর।
যেথায় যায় নিয়ম করে দেয় আর নেয়।
কখনও কারও প্রেমে মজে দিচ্ছে দুকুল ভাসিয়ে।
কখনও কারও প্রেমের ব্যার্থতায় দিচ্ছে চড়া বালির তপ্ততা।

এ নদী নাম্নী নারীর বড়োই ভেলাকি।
বুঝিয়ে দেয় যখন তার মানসপটে জেগে ওঠে-
শত শত স্মৃতির পাতাটি।।
তবুও আশাবাদী করে রাখে –
হ্যাঁ ফিরে আসবো।
কখনও দুকুল ভাসিয়ে।
কখনওবা তপ্ত বালুকা হয়ে।।

প্রবাসী জীবনের ডেরা

দূর দিগন্তের নীলিমা রেখায়
আজও তোকে অনেক মনে পড়ে।
যেদিন তুই আদর করে চুম্বন এঁকেছিলিস
আমার এই নধর ওষ্ঠখানিতে।
আর বলতিস আমায় ছেড়ে কখনও দূরে চলে যাবে না।
কথা দাও।
আমি তোকে বাহানায় ভর করে বলতাম
হ্যাঁ যাবো! অনেক দূরের দেশে যাবো।
সেদিন আমার হেঁয়ালিতেও
তুই অবুঝ পাগলি না বুঝে
আমায় জড়িয়ে কান্না করতিস।
সত্যি তখন কত মজা নিতাম।
কিন্তু হায়! আজ সেই দূর দেশ তেপান্তর
হলো অনেক অনেক দূরের দেশ।
যেখানে চাইলেও তোর কাছে
না পারি ছুঁটে যেতে।
জানিস পাগলি!আজ তোর কান্নাটা আমার চোখের ধারা হয়ে গেছে।
এখন ঘুমের ঘোরে হাতড়েও তোকে
না পাই দেখিতে।
এখন স্বপ্নেও তোকে ভাবি
হয়তো তুই আছিস পাশেই।
ঘুুমের স্বপন ভেঙেই দেখি একাকি।
সবই হাহাকারের মাঝে শুধুই দেখি
নিঃসঙ্গেরা দিচ্ছে বিদ্রুপের হাসি।
এখন আমার তকমা।
আমি বিদেশি – পরবাসী।
দূর দেশে একলা জীবন।
আমিই পরবাসী।
তোর স্পর্শ আমায় আজ কেমন অনুভূতি জাগায়।
মন করে এখনি তোর কাছে ছুঁটে পালাই।
তারই মাঝে তোর আকুতি ফোনের ওপারেতে।
আসবে কবে স্বদেশেতে তোমার পাগলির বন্দরেতে।
যেথায় সে বন্দর খাঁ খাঁ করে।
আপন অঙ্গের বিচ্ছিন্নতাতে।
তুই যে কস কবে ফিরবে বলে।
জানিস পাগলি পড়ে আছি আমি এখানে।
মনটা তোর হৃদয়েতে।
আসব আমি বাড়ি!
এমন কথার বৃথা চেষ্টায়
তুই ধ্যৈর্য হারাস।
রেগে অভিমানে বলিস তুইু।
থাকো সেথা আর ফিরোনা বাড়ী।

বাকরুদ্ধ পৃথিবী

আমার এক চিলতে আঙুলের ডগায় যদি কখনও ধর্মঘট ডেকে যায়।
তবে তুমি সবাক কন্ঠ হয়ে তা ভেঙে দিও।
এক বাকরুদ্ধ পৃথিবীকে সবাক করো।
নীল অমানিশাকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখো।
ভাঙা আয়নার আরদালিটা যত্নে তুলে রেখো।
যেখানে প্রতিনিয়ত তোমার স্পর্শে নব রূপে ধরা দেবে প্রতিদিন প্রাক্ সকালে।
তবুও তুমি খুব যত্ন করতে একটুও না ভুলো
এই আকন্ঠ মদ মত্ততায় উন্মাদিনীকে।
খুব যতনে রেখো তোমারই শয়ন কক্ষে।
যেখানে আছে এক নিষ্পলক চাহনির নিবিড় ঘন প্রশান্তি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
১৯৯৩ সালে জন্ম কলকাতায়। বর্তমান নিবাস উত্তর ২৪ পরগণা, কলকাতা। তিনি একজন লেখক, সাংবাদিক ও বাচিক শিল্পী। ছোটবেলায় লেখায় হাতেখড়ি এবং তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা "হাওয়ায় উড়িয়ে দাও" উদিচী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। তিনি ভোরের সূর্যদয় পত্রিকা থেকে সেরা লেখনী সম্মাননা, মুক্ত বিহঙ্গ সাহিত্য পত্রিকা থেকে সেরা লেখনী সম্মাননা, কলম সাহিত্য পত্রিকা থেকে সেরা লেখনী সম্মাননা, প্রাণের আলাপণ থেকে সম্মাননা, "প্লাসেন্টা প্রত্রিকা" থেকে "প্লাসেন্টা সম্মাননা",বঙ্গীয় সাহিত্যিক অনুসন্ধান সমিতি" থেকে "বঙ্গীয় সাহিত্য স্মারক সম্মান সহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!