টাইঙ্গালে ৯ বছরের এক শিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে কিশোর গ্যাং-এর তিন সদস্যদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
গত ২৬ মে ওই শিশুকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই সাভারের এনাম মেডিক্যালে তার মৃত্যু হয়।
সোমবার (৬ জুন) দুপুরে টাঙ্গাইল জেলা পিবিআই-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন তিশার হত্যাকারীদের গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, গত ২৬ মে টাঙ্গাইলের বাসাইল থানার ভাটপাড়া এলাকায় ৯ বছরের ওই শিশুকে ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তার মা। একমাত্র কিশোর ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন মা। তিশাকে ঘরে রেখে মা ছেলেকে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে মেয়েকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন। তাকে অচেতন অবস্থায় প্রথমে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তিনি। বাসাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তাকে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে রেফার করে। সেখান থেকে তিশাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে মা ঢাকার দিকে রওনা হন। পরে তাকে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুদিন চিকিৎসা শেষে ১৮ মে শিশুটি মারা যায়।
মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা বাসাইল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে। ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত পাওয়ায় তিশার বাবা আবু ভূঁইয়া বাসাইল থানায় একটি হত্যা ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার আশরাফুল কবির তদন্ত করে তিন জনকে শনাক্ত করে। গ্রেফতার করা হয় গোবিন্দ মণ্ডল (১৯), চঞ্চল চন্দ্র মণ্ডল (১৭) ও বিজয় সরকার (১৬) নামে তিন জনকে। তারা বাসাইল এলাকায় বখাটে কিশোর হিসেবে পরিচিত।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। শিশুটিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার কথাও স্বীকার করে তারা।
পিবিআই জানিয়েছে, আসামি গোবিন্দ মণ্ডল পেশায় একজন পিকআপ ড্রাইভার, বিজয় সরকার তার সহযোগী। চঞ্চল চন্দ্র মণ্ডল একজন অটোমেকানিক। তারা পরস্পর বন্ধু।
ঘটনার দুই মাস আগেও শিশুটিকে উত্ত্যক্ত করেছিল তারা। বিষয়টি তার মাকেও জানিয়েছিল মেয়েটি। কিন্তু আসামিরা বখাটে প্রকৃতির হওয়ায় তার মা তাদের তেমন কিছু বলতে পারেনি।
আসামিরা সব সময় মেয়েটির মায়ের গতিবিধি অনুসরণ করতো এবং মেয়েটিকে বাড়িতে কখন একা পাবে, সেই সুযোগে থাকতো।
আসামিরা জানতে পারে যে, প্রতিদিন মেয়েটির মা বাড়িতে একা রেখে ছেলেকে স্কুল ছুটির পর আনতে যায়। তারা সেই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার দিন আসামিরা একে অপরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে আগে থেকে শিশুটির বাসার আশেপাশে ওতপেতে থাকে। ঘটনার দিন মা ছেলেকে আনতে যাওয়ার পরপরই তার মেয়েটির রুমে প্রবেশ করে এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
আসামিদের নির্মম পাশবিকতায় শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন আসামিরা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তার মায়ের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।