নিয়মিত তদারকীর অভাব
শাহজাদপুরে ভেজাল গো-খাদ্যে বাজার সয়লাব

শামছুর রহমান শিশির
শামছুর রহমান শিশির
4 মিনিটে পড়ুন

নিয়মতি তদারকীর অভাবে দেশের দুগ্ধশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু ও নিউজিল্যান্ড খ্যাত জনপদ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অনুমোদনবিহীন নিম্নমানের ভেজাল গো-খাদ্যে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে।

শাহজাদপুর পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নের হাটবাজারে অবাধে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে এসব ভেজাল গো-খাদ্য। সব ধরনের গো-খাদ্যের বস্তায় উৎপাদন তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখসহ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য থাকার নিয়ম থাকলেও তা না মেনে অনেক গো-খাদ্য বিক্রেতা নিজের ইচ্ছেমতো বস্তায় নিম্নমানের নানা ভেজাল গো-খাদ্য ভরে তা বাজারে বিক্রি করছে। দীর্ঘদিন ধরে খামারিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে এ রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। শাহজাদপুরসহ বাঘাবাড়ী মিল্কশেড এরিয়ায় লাখ লাখ গবাদীপশু থেকে দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার দুধ উৎপন্ন হয় যা মিল্কভিটাসহ বেসরকারি বিভিন্ন ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারের মাধ্যমে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। দুগ্ধশিল্পের রাজধানীখ্যাত শাহজাদপুরের হাজার হাজার গো-খামারিরা নিরূপায় হয়ে অধিক মূল্যে এসব অনুমোদনবিহীন নিম্নমানের ভেজাল গো-খাদ্য কিনে গরুকে খাওয়ানোও গরুর দুধ উৎপন্নের হার কমে যাচ্ছে। সেইসাথে গবাদীপশু অপুষ্টিতে ভোগাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দেখার কেউ নেই!

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে গড়ে ওঠা ধান ভাঙ্গানো মিল ও রাইস মিল থেকে খুদ, ভূসি, কুঁড়া ও চালের পঁচা ব্রাণ, মেয়াদোত্তীর্ণ ময়দা সংগ্রহ করে তা নামী দামী নানা কোম্পানীর বস্তায় ভরে ভেজাল গো-খাদ্য তৈরি করে অবাধে শাহজাদপুরে বিক্রি করে আসছে একটি অসাধু চক্র। আবার অনেক ধান ভাঙ্গানো মিলে ভ্্ুট্টা ভাঙ্গিয়ে ভুট্টার গুঁড়ার সাথে গবাদীপশুর জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর মাছের খাবার ডলোমিট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে গো-খাদ্য তৈরি করে তা বস্তায় ভরে বাজারজাত করছে। অনেকে আবার নিম্নমানের ভেজাল গো-খাদ্য নতুন নতুন বস্তায় ভরে উৎকৃষ্টমানের গো-খাদ্য হিসেবে তা বেশি দামে বিক্রি করছে। এছাড়া ডিএলএস লাইসেন্সবিহীন অসংখ্য বেনামী কোম্পানীর ক্যাটল ফিডেও বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। মানহীন এসব গো-খাদ্য ও দানাদার গো-খাদ্য গবাদীপশুকে খাওয়ানোয় শাহজাদপুরের হাজার হাজার গো-খামারিদের আর্থিক ক্ষতির হার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।

শাহজাদপুর উপজেলার করতোয়া কলেজ সংলগ্ন তালগাছী বাসষ্ট্যান্ডের পাইকারী ও খুচরা গো-খাদ্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুদ ট্রেডার্স’র দোকান ও ২টি গোডাউন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে শত শত বস্তা গমের ভূষি, খেসারী ভূষি, মশুরের ভূষি, সয়াবিন ভূষি, লাল ও সাদা এংকার, ডিএলএস লাইসেন্সবিহীন নানা বেনামী কোম্পানীর ক্যাটল ফিড, তিলের খৈল, বাদামের খৈল, মাশকালাই ও ছোলার ভূষি, ধানের গুুঁড়া, ভূট্টার গুঁড়া, মটরের ভূষিসহ ভারতীয় আমদানীকৃত নিম্নমানের আকাশ ছোকার নামের গো-খাদ্য মজুদ রয়েছে যার সিংহভাগ বস্তায়ই নেই উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ। আবার অসংখ্য গো-খাদ্যের বস্তায় নেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম। কিছু কিছু বস্তায় আবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নামের পাশে উৎপাদন তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঘর থাকলেও তা কবে উৎপাদন করা হয়েছে বা কবে এর মেয়াদ শেষ হবে তা উল্লেখ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স মাসুদ ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী খোদা বক্স প্রামাণিক ও তার ছেলে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা বাইরে থেকে যেসব কোম্পানীর কাছ থেকে এসব গো-খাদ্য কিনে এনেছি তাদের সাথে কথা বলেন।’ তবে শত শত বস্তায় উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ নেই কেনো? ক্যাটল ফিডের বস্তায় ডিএলএস লাইসেন্স নাম্বার নেই কেনো? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তারা দিতে পারেন নি।

বিষয়টি মুঠোফোনে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমানকে অবহিত করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘পরে গোপনে খোঁজ খবর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

অপরদিকে, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা’কে মুঠোফোনে বিষয়টি জানানো হলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দেন।#

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!