ঢাকায় যানজটে প্রতিদিন ক্ষতি ১৪০ কোটি টাকা

ঢাকা প্রতিনিধি
ঢাকা প্রতিনিধি
3 মিনিটে পড়ুন

ঢাকা শহরে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে প্রতিদিনই পোহাতে হয় অসহনীয় যানজট। যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। আর এতে দিনে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। এ বছর ঢাকার সড়কে প্রতিদিন ৮০ লাখের বেশি কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল দিনে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ক্রমবর্ধমান যানজটে সময় বেশি চলে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো কিংবা অন্যান্য কাজে সময়কে কমে যাচ্ছে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করছে।

ঢাকা শহরের বেশিরভাগ কর্মজীবীরা সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে মধ্যে অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত সাড়ে আটটার মধ্যে বাড়ি ফিরেন। ফলে রাজধানীতে এ সময়ে যানজট চরমে পৌঁছায়। রাজধানীর প্রায় ৬০ যানবাহন এই সময়ে রাস্তায় চলাচল করে।

গবেষণায় বলা হয়, ঢাকায় প্রতিদিন স্বল্প ও দীর্ঘ দূরত্বে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে প্রায় আড়াই কোটি ট্রিপ দেওয়া হয়, যার মধ্যে ৪৪% অফিসগামী যাত্রীরা।

বুয়েটের গবেষকরা বলেছেন, গত কয়েক বছরে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির ফলে যানজটের তীব্রতা বেড়েছে।প্রাইভেট কার, জিপ এবং মোটরসাইকেলের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে।যার ফলে গণপরিবহন সহজ হওয়ার পরিবর্তে যানজট সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

বুয়েটের দুর্ঘটনা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, “২০১৭ সালে যানজটে প্রতিদিন অফিসগামীদের ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হতো, এখন এটি ৮০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গণপরিবহন এড়িয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের পরিমান বেড়ে যাওয়া এর সবচেয়ে বড় কারণ।”

তিনি জানান, দুর্ঘটনা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট সকাল এবং বিকেলের সবচেয়ে ভিড়ের সময় প্রধান সড়কে ট্রাফিক প্রবাহের উপর ভিত্তি করে পরিসংখ্যান করেছে।

গবেষকরা বলেছেন যে স্কুলগুলি পুনরায় খোলা এবং করোনাভাইরাস রোধে জারি করা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরে যানজট মহামারির আগের সময়ের তুলনায় বেড়েছে।

অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন ,“মহামারির আগে একই লোকেরা যাতায়াত করত, তবে ট্র্যাফিক পরিস্থিতি এখনকার মতো খারাপ ছিল না। এখন যানবাহন শুক্র এবং শনিবারেও শামুকের গতিতে চলে।”

তিনি বলেন, “যানজট বৃদ্ধির প্রধান কারণ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন বাস কম নিবন্ধন হওয়া।”

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে নতুন বাসের নিবন্ধন ৩২.৩% কমেছে, একই সময়ে জিপ বিক্রি ৫৫%, প্রাইভেট কার ২৮% এবং মোটরসাইকেল ২৭ % বেড়েছে।

অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, “ব্যক্তিগত যানবাহনগুলি বাসের মতো দক্ষতার সঙ্গে রাস্তায় জায়গা দখল করে না। রাইড শেয়ারিং পরিষেবাগুলি মানুষকে মোটরসাইকেল কিনতে আরও উৎসাহিত করেছে, কারণ মানুষ দ্রুত চলাচলের জন্য মোটরসাইকেল পছন্দ করে।”

তিনি আরও বলেন, “এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২৩ সালের মধ্যে ঢাকা শহরের ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করতে চার বর্গকিলোমিটার প্রয়োজন হবে।”

বুয়েটের গবেষকরা দেখেছেন যে, ক্রমবর্ধমান যানজটের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে, বিশেষ করে সিগন্যাল পয়েন্টে এবং পিক আওয়ারে দুর্ঘটনা বেড়েছে।

হাদিউজ্জামান বলেন, “মৃত্যু, যানবাহনের ক্ষতি এবং আইনি সমস্যার কারণে আর্থিক ক্ষতির হিসাব করলে তা দৈনিক ১.৫৫ কোটি টাকার সমান।”

তিনি বলেন, “ঢাকা শহরের যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে থাকে, যানজটের চাপের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। এছাড়া এর আর্থিক ক্ষতির দিকটি তো রয়েছেই।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!