রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বাড়ছে ডলারের দাম

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন
সম্প্রতি বাংলাদেশ আমদানির ক্ষেত্রে ডলার সাশ্রয় করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ফাইল ছবি

রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি। রেমিট্যান্সের গতি কম। ফলে বাড়তি চাহিদার কারণে বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম। এতে করে মান হারাচ্ছে দেশীয় মুদ্রা টাকা।

সবশেষ গত বুধবার (২৩ মার্চ) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে দাম প্রতি ডলারে আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় উঠেছে। তবে খোলাবাজার ও নগদ মূল্যে ডলার আরও বেশি দামে ৯১ থেকে ৯২ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করেও দামের ঊর্ধ্বমুখীর লাগাম টানতে পারছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিক প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স গত তিন মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। আবার প্রত্যাশা অনুযায়ী আসছে না রপ্তানি আয়। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দেশে আমদানির চাপ বেড়েছে। এর দায় পরিশোধে বাড়তি ডলার লাগছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দি‌য়ে‌ছে। এতে করে টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলারের দাম। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রয়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর গত আগস্টে হঠাৎ টাকার বিপরীতে বাড়তে শুরু করে ডলারের দাম। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই থেকেই ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল ডলার। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। এরপর ৩ আগস্ট থেকে দু-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায়। এরপর গত ৯ জানুয়ারিতে এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে যায়। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। পরে গত মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংকে আরও ২০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ গত সাড়ে ৭ মাসে প্রতি ডলারে দর বেড়েছে এক টাকা ৪০ পয়সা বা এক দশমিক ৬৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যখন বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেশি ছিল তখন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন সরবরাহ কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছে। সবশেষ ২৩ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের চাহিদার বিপরীতে ৩৭৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার শুরুর দিকে প্রবাসী আয়ের চাঙাভাব থাকলেও গত বছরের জুন থেকে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সবশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৪৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে পাঠানো প্রবাসী আয়ের এ অংক আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ কম।

একইভাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ের রপ্তানি আয় করেছে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ খরচ হয়েছে চার হাজার ৬৬৭ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং আমদানি বেড়েছে ৪৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এসব কারণে ডলারের চাহিদা বাড়ছে।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো চাইলেও বাড়তি ডলার নিজেদের কাছে রাখতে পারে না। বৈদেশিক মুদ্রা রাখার বিষয়ে প্রতিটি ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা আছে, যাকে এনওপি বা নেট ওপেন পজিশন বলে। যদি কোনো ব্যাংকে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার মজুত থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রি করতে হয়। আর না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সীমার বাইরে ডলার নিজেদের কাছে ধরে রাখলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়। জরিমানার হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যাংকগুলো বাজারে ডলার বিক্রি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক তার মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই তাকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে।

এদিকে ডলারের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে পণ্য আমদানিতে। বাংলাদেশ খাদ্য সামগ্রী আমদানি ও সরবরাহকারী সমিতি (বিএএফআইএসএ) সাধারণ সম্পাদক ও মাওলা ট্রেডার্সের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮৬ টাকা ২০ পয়সা বললেও আমদানি এলসি করতে আমাদের ৮৬ টাকা ৭০ থেকে ৮০ পয়সা নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এতে করে খাদ্যপণ্য আমদানি ব্যয় বেশি পড়ছে বলে তিনি জানান।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!