জার্মানিতে রুশ ভাষাভাষীদের নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন

ইউক্রেনে হামলার পর থেকে জার্মানিতে রুশ বংশোদ্ভূত এবং রুশ ভাষাভাষীদের নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে৷ রাস্তায় শিশুরা হামলার শিকার হচ্ছে, হামলা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া শিক্ষকদের রোষানলেও পড়ছে রুশ ভাষাভাষী শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, জার্মানিতে রুশ ভাষাভাষীর সংখ্যা লাখের মতো। রুশ ভাষাভাষীদের বেশিরভাগই জার্মান৷ তাদের পূর্বপুরুষরা এক সময় মধ্য ইউরোপের জার্মানভাষী বিভিন্ন দেশে ছিলেন। মূলত আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে তারা রুশ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে গেলেও প্রথমে ১৯৫০-এর দশকে এবং পরে ১৯৯০-এর দশকে পশ্চিম জার্মানিতে চলে আসেন। তাদের বর্তমান প্রজন্ম জার্মান হলেও তারা রুশ ভাষা এবং সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে৷ তবে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে সেই রুশ ভাষা এবং সংস্কৃতির মানুষেরা বিপদে পড়েছে।

জার্মানির কোলনের কোরভাইলার জেলার সমাজকর্মী ফ্রিডরিশের জন্ম রাশিয়ার ওমস্কে৷ তার দাদী ছিলেন ইউক্রেনীয়৷ সমাজর্মী হিসেবে ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য কিছু করা তাই একান্ত কর্তব্য মনে করেছেন এবং সে কারণে গেল কিছুদিন ধরে তাদের সহায়তায়ই ব্যস্ত রাখছেন নিজেকে৷রাশিয়ার হামলার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া ইউক্রেনীয়দের পাশাপাশি রুশ ভাষাভাষী এবং রুশ বংশোদ্ভূতদের জীবনে নেমে আসা আকস্মিক সংকটও ব্যথিত করছে ফ্রিডরিশকে৷ পুতিনের ইউক্রেন হামলার জন্য জার্মানিতে বসবাসরত রুশ ভাষাভাষী এবং রুশ বংশোদ্ভূতদের নানাভাবে হয়রানির কিছু ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “একটা স্কুলে এক রুশ শিক্ষার্থীকে শিক্ষক বলেছেন উঠে দাঁড়িয়ে পুতিনের নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলতে- এই ঘটনাটা শুনে আমি হতবাক!”

ফ্রিডরিশ মনে করেন, এখনেও খুব ব্যাপক পরিসরে না হলেও ঘরের বাইরে স্কুল, বাস-ট্রেন-ট্রামসহ বলতে গেলে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে রুশ ভাষাভাষীরা যেটুকুই হামলা এবং হয়রানির শিকার হচ্ছে, যা খুব উদ্বেগের।

তিনি জানান, কোলনের এক স্কুলে এক রুশ ভাষাভাষী ছাত্রকে তার সহপাঠীরা পিটিয়েছে৷ হার্ডওয়ারের দোকানে গিয়েছিলেন এক পোলিশ নারী। সেখানে উপস্থিতরা রুশ ভেবে এমন আচরণ শুরু করে যে দ্রুত চলে আসতে হয় সেই নারীকে।

ওবারহাউজেনে এক পোলিশ-রুশ দোকানে হামলার ঘটনা কোলনেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এক সুপারমার্কেটের মালিক এতটাই উদ্বিগ্ন যে, এখন ভয় রাশিয়ার তৈরি পণ্য রাখার কারণে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা হতে পারে। ফ্রিডরিশ মনে করেন, রাশিয়ার হামলার কারণে জার্মানিতে নির্দোষ মানুষদের হয়রানি, নির্যাতন অচিরেই বন্ধ করা উচিত৷ তিনি বলেন, “কিছু সহিংসতার ঘটনা যেহেতু সামনে এসেছে, আইনি সংস্থাগুলোর উচিত এসবের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। মস্কোর কাজের দায়ভার এখানকার রুশদের ওপর চাপানো হচ্ছে- এটা চলতে দেওয়া যায় না৷ আইনের শাসন কার্যকর করতে হবে।”

এদিকে বন শহরের উপকণ্ঠে রুশ ভাষা ও সংস্কৃতির স্কুল চালান নারিনা কারিৎস্কি। ২০১১ সালে খুব ছোট্ পরিসরে শুরু করা স্কুলটির পরিসর অনেক বেড়েছে। স্কুলে এখন ২৫ জন শিক্ষক৷ ৫০০টি পরিবারের সন্তানদের রুশ ভাষার পাশাপাশি ছবি আঁকা, ব্যালে নাচ, এমনকি রোবোটিক্সও শেখান তারা। ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর নারিনা প্রথম আঘাতটি পান একটি মেইল পড়ে।

মেইলে এক শিক্ষার্থীর ইউক্রেনীয় মা লিখেছেন, “আপনার স্কুলে আমাদের বাচ্চারা যে পড়তে যায় তাতে আমরা খুব খুশি৷ রুশ আগ্রাসনের বিষয়ে আপনার কী অভিমত তা কি একটু জানাবেন?“ মেইলটি পড়ে নারিনা দুঃখের চেয়ে লজ্জা পেয়েছেন বেশি। তিনি বলেন, “এ (আগ্রাসনের) বিষয়ে আমরা কী ভাবছি তা জানা তার কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ৷ রুশ ভাষাভাষী হিসেবে আমরা যে কতটা লজ্জিত তা যে সবাইকে বোঝাতে পারছি না এটা ভীষণ লজ্জার।”

একটি ফোনও এসেছিল নারিনার স্কুলে। সেখানে প্রতিবেশী পরিচয় দিয়ে এক লোককে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, “আপনারা এই রাস্তার কলঙ্ক৷ আপনারা খুনী!”

অনেক ছাত্র-ছাত্রীর মা-বাবাই এখন চিন্তিত৷ সন্তানদের স্কুলে পাঠানো ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছেন না তারা৷ অনেক মা-বাবাই নিজেদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত। তাদের সন্তানের সঙ্গেও খারাপ কিছু ঘটতে পারে এমন ভয় পাচ্ছেন তারা। নারিনা কারিৎস্কি বলেন, “জার্মানিতে বসবাসরত এই মানুষগুলোর সঙ্গে যে ওই হামলার কোনো সম্পর্ক নেই তা সবার বোঝা উচিত। যুদ্ধটা জনগণের নামে করা হলেও এটা নিতান্তই পুতিনের যুদ্ধ।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!