থার্টি ফার্স্টে আতশবাজির বিকট শব্দে কাঁপছিল শিশুটি, পরদিন মৃত্যু

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন

‘আতশবাজির বিকট শব্দে ছেলেটা বারবার কেঁপে উঠছিল। তার সামনে গেলেই ভয়ে আঁতকে উঠছিল, দূরে সরে যাচ্ছিল। সারা রাত আতঙ্কে কাটে তার, শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। বিকট শব্দের এক পর্যায়ে আমি ও আমার স্ত্রী আমাদের ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরি। বুকে তার মাথা রাখি। ছেলেটা তখনো স্বাভাবিক হচ্ছিল না। কে জানতো, পরের দিনই আমাদের ছেড়ে যাবে সে।’

কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই থার্টি ফার্স্ট নাইটের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন তানজীম উমায়ের নামে এক শিশুর বাবা ইউসুফ রায়হান। চার মাস বয়সী শিশুটি ১ জানুয়ারি বিকেলে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যায়।

জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্রে ছিদ্র ছিল উমায়েরের। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছিল সে। জানুয়ারির ১ তারিখ শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি উমায়ের। ছোট্ট উমায়েরকে হারিয়ে দিশেহারা তার বাবা-মা। ছেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও মনকে সান্ত্বনা দিতে পারছেন না তারা। বারবার মনে করছেন ভয়াল সেই থার্টি ফার্স্ট নাইটের কথা।

৩ জানুয়ারি বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে ছোট্ট উমায়ের ও তার বাবার ছবি। চলছে পটকা-আতশবাজি ফাটানো নিয়ে নানা সমালোচনা, উঠছে নিষিদ্ধের দাবি।

উমায়েরের বাবা ইউসুফ রায়হান বলেন, ‘আমার বাবু মায়ের পেট থেকেই হৃদযন্ত্রে ছিদ্র নিয়ে এসেছিল। প্রথমে রোগ ধরতে না পারলেও আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে তার টেস্ট করাই। অবশেষে রোগ শনাক্ত করতে পেরে চিকিৎসকরা ফেব্রুয়ারিতে তার অপারেশনের ডেট দেন। উমায়েরের শ্বাসকষ্টও ছিল। সে অল্প শব্দেই কেঁপে উঠত, ভয় পেত।’

ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে নিউমোনিয়া নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় উমায়েরকে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হয় তাকে। চার দিন পর সুস্থ হয়ে বাসায় আসে। বাসায় ফিরে সপ্তাহখানেক পর আবার তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তাকে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। ডাক্তারের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের কারণে তাকে দেখানো যায়নি। ডাক্তার উমায়েরকে ১ তারিখে নিয়ে যেতে বলেছিলেন।

থার্টি ফার্স্ট নাইটে কী ঘটেছিল— জানতে চাইলে ইউসুফ রায়হান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে ছেলেটা বেশ সুস্থ ও প্রাণবন্ত ছিল। সে সন্ধ্যায় মনের আনন্দে খেলাধুলা করছিল। সন্ধ্যায় তার মা আমাকে ভিডিও কল করে ছেলেটাকে দেখাল। উৎফুল্ল ছেলেকে দেখে আমিও বাসায় ফিরে আসি। বাসায় ফিরে দেখি উমায়েরের মা তাকে খাওয়াচ্ছে। রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দে পটকা ও আতশবাজি ফাটানো শুরু হলো। ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ থেকে পটকা ফাটানোর অনেক শব্দ হচ্ছিল। ছেলেটা তখন রীতিমত কাঁপছিল। আমি যখন তাকে চুমু খেতে যাচ্ছিলাম, তখনো সে ভয় পাচ্ছিল, কান্নাকাটি করছিল। সে জোরে শব্দ হলে ভয় পেত বলে আমরা বাসায় খুব সতর্কভাবে জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতাম।’
ভয়ংকর সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তখন উমায়েরের মাকে বলি ওকে জড়িয়ে ধরতে, যাতে বিকট শব্দগুলো তার কানে না যায়। আমরা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরি। বুঝতে পারছিলাম শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তার। কোনোভাবে রাতটি অতিক্রম করলাম। সকালে শ্বাসকষ্ট বেশি হওয়ায় আমরা তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাই। চিকিৎসক দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তি নেন। দুপুর পর্যন্ত তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল, বিকেলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হলো। এর পরপরই তাকে নেওয়া হলো লাইফ সাপোর্টে। সন্ধ্যায় কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আমাদের ডেকে বললেন ছেলেটা হার্টফেল করেছে, সে আর বেঁচে নেই।’ (সূত্র ঢাকা পোস্ট)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!