ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান রাখার জন্য তামাক কোম্পানির কূটকৌশল এবং রেস্তোরাঁয় তামাকজাত পণ্য প্রদর্শনের জন্য প্রণোদনা প্রদান

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
‘ঢাকা শহরের ধূমপানমুক্ত রেস্তোরাঁগুলোতে ডেজিগনেটেড স্মোকিং এরিয়ায় তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য প্রকাশ, লা ভিঞ্চি হোটেল, ঢাকা, শনিবার ১১ ডিসেম্বর ২০২১

শনিবার ১১ ডিসেম্বর, ঢাকার লা ভিঞ্চি হোটেলে এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংগঠন ভয়েসেস ফর ইন্টারেক্টিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) পরিচালিত ‘ঢাকা শহরের ধূমপানমুক্ত রেস্তোরাঁগুলোতে ডেজিগনেটেড স্মোকিং এরিয়ায় তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহযোগিতয় এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব অসীম কুমার উকিল এমপি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সালিম সামাদ, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক জনাব ইকবাল মাসুদ, দ্য ইউনিয়ন এর কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর গ্রাস্টস ম্যনেজার আব্দুস সালাম মিয়া। ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন। ভয়েস-এর মিডিয়া ম্যানেজার আফতাব খান শাওন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

ভয়েসের প্রকল্প সমন্বয়কারী জায়েদ সিদ্দিকী গবেষণার মূল ফলাফল উপস্থাপন করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, জরিপকৃত সমস্ত রেস্তোরাঁয় “আলোকিত রঙিন সজ্জিত বাক্স” (যার ভেতর সিগারেটের খালি প্যাকেট) বিজ্ঞাপনের উপকরণ হিসাবে প্রদর্শিত হতে দেখা গিয়েছে। যার সবগুলোতেই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (BATB) এর সাইন/লোগো পাওয়া গিয়েছে। শতকরা ৭৩ ভাগ রেস্তোরাঁয় ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকায়, শতকরা ২৭ ভাগ রেস্তোরাঁর প্রবেশ/প্রস্থান পথে এবং রেস্তোরাঁর খাবার পরিবেষন টেবিলের কাছে বিজ্ঞাপন সামগ্রী প্রদর্শিত হচ্ছে। একই রেস্তোরাঁয় একাধিক স্থানে এই সকল বিজ্ঞাপন সামগ্রী প্রদর্শনের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এই বিজ্ঞাপন সামগ্রী প্রদর্শনের জন্য তামাক কোম্পানি রেস্তোরার মালিকদের এককালীন নগদ আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে। রেস্তোরাঁর অবস্থান অনুযায়ী যার গড় পরিমাণ আট লক্ষ টাকা, সর্বোচ্চ পনেরো লক্ষ টাকা এবং সর্বনিম্ন চার লক্ষ টাকা এবং এই নগদ সুবিধা ব্যাংক চেক এবং ব্যাংক ট্রান্সফার এই দুই মাধ্যমে দেয়া হয়। এই সুবিধা নেয়ার সময় ৬০% রেস্তোরাঁ লিখিত চুক্তি করেছে এবং ৪০% মৌখিক চুক্তি করেছে।

গবেষণায় আরো জানা যায়, রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের উপহার পেয়ে থাকে। যেমন: টি-শার্ট, লাইটার, অ্যাশ ট্রে, রান্নার জিনিস, কফি মগ, তামাকজাত দ্রব্য, কম দামে তামাকজাত দ্রব্য, প্লেট/গ্লাস, কোভিড প্রতিরক্ষামূলক সামগ্রী, নতুন সিগারেট ব্র্যান্ডের বিনামূল্যে নমুনা ইত্যাদি। রেস্তোরাঁগুলোতে বিজ্ঞাপন ঠিকভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে কিনা তা তদারক করার জন্যে তামাক কোম্পানির প্রতিনিধি ৪০% রেস্তোরাঁয় প্রতি ৭ দিন পরপর, ২৬.৭০% রেস্তোরাঁয় প্রতি ১০ দিন পরপর, ৩৩.৩০% রেস্তোরাঁয় প্রতি ১৫ দিন পরপর সশরীরে পর্যবেক্ষণ করতে আসেন।

উপস্থিত অতিথিবৃন্দ গবেষণার ফলাফলের প্রশংসা করে বলেন যে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ফাকফোকর এবং এর দুর্বলতা ব্যাবহার করে তামাক কোম্পানিগুলো সুযোগ নিচ্ছে বিধায় এতে অধূমপায়ীরা পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক হুমকি স্বরূপ।

উল্লেখ্য যে, ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এর বিভিন্ন ফাঁকফোকর ব্যবহার করে তামাক কোম্পানিগুলো ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার পক্ষে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। বিদ্যমান আইনে এক কক্ষ বিশিষ্ট রেস্তোরাঁয় ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু একাধিক কক্ষ বিশিষ্ট রেস্তোরাঁয় নির্ধারিত ধূমপানের স্থান রাখার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ ব্যাবহার করে তামাক কোম্পানি রেস্তোরাঁ মালিকদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে ও প্রণোদনা দিয়ে তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন সামগ্রী প্রদর্শন করছে।

প্রধান অতিথি জনাব অসীম কুমার উকিল এমপি বলেন, পাবলিক পরিবহনে ধুমপানের ব্যাবস্থা আগের থেকে কমেছে। এর থেকে বুঝা যাচ্ছে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা ব্যাবহার করে রেস্তোরাঁয় ধুমপানের নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বাতিল করতে হবে। যাতে অধুমপায়ী ‍বিশেষ করে, নারী এবং শিশুরা পরোক্ষ ধুমপান থেকে রক্ষা পায়।

ঢাকা আহসানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক জনাব ইকবাল মাসুদ বলেন, পরোক্ষ ধুমপান কমানোর উদ্দেশ্যে আমাদের উচিত হবে হোটেল কর্তপক্ষকে আইন ভঙ্গ ব্যাপারে আরো বেশি তাদের সচেতন করা এবং এই ব্যাপারটি সফল করার জন্যে প্রশাসনের সাহায্য নিতে হবে।

সিটিএফকে এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলদেশ গড়ার যে লক্ষ রয়েছে তা তামাক কোম্পানির কারনে বিভিন্ন ভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। রেস্তোরাঁগুলোতে ধুমপানের ব্যাবস্থা তৈরি করা এর একটি উদাহারন।

দ্য ইউনিয়ন এর কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, তামাক কোম্পানির বিভিন্ন প্রভাব এবং আইন এর অপব্যাবহারের কারনে আমরা যুবকদের ঝুঁকির মুখে ফেলছি এই ব্যাপারে আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এমতাবস্থায়, অধূমপায়ীদের বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের পরোক্ষ ধুমপান হতে বাঁচানোর জন্যে সরকারকে অবিলম্বে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে সব ধরনের পাবলিক প্লেস থেকে পৃথক ধুমপান এলাকার রাখার বিধান বাতিল করার জোর দাবী জানানো হয়।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!