সিদ্ধার্থ সিংহের ছয়টি অণুগল্প

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
4 মিনিটে পড়ুন

নির্ঘাত

পাড়ার ছেলে। গলির মুখে বাইকের উপরে বসেছিল। গলির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে একটি মেয়ে বলল— এই, আমি গড়িয়াহাট মার্কেট যাব। আমাকে একটু ছেড়ে দিবি?
ছেলেটি বলল, চল।
— বাইকটা কিন্তু আমি চালাব।
ছেলেটি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই? তার মানে যাব বাইকে আর ফিরব ব্রেকিং নিউজে!

অন্ধ

অন্ধ ভিখারিটাকে সবাই দেখত মন্দিরের সামনে বসে রোজ‌ ভিক্ষে করতে। সেই ভিখারিটাকে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে একটা লোককে সপাটে থাপ্পড় মারতে দেখে সবাই ছুটে গেল— কী হয়েছে? কী হয়েছে?
ভিখারিটা তখন চিৎকার করে বলছেন, এত বড় সাহস! যাঁদের খুচরো থাকে না তাঁরা দশ টাকার নোট দিয়ে অনেক সময় আমার থালা থেকে সাত টাকা আট টাকা খুচরো তুলে নেন।‌ মানে দু’-তিন টাকা দেন। আর উনি লোক দেখানো একটা দশ টাকার কয়েন দিয়ে সেই কয়েনটা তো নিয়েছেনই, তার সঙ্গে আরও দু’খানা পাঁচ টাকার কয়েন তুলে নিয়েছেন!
তখন এক পথচারী বললেন, তুমি দেখলে কী করে? তুমি তো অন্ধ!
আরও রেগে গিয়ে তিনি বললেন, সেই হিসেব পরে হবে‌। তার আগে এটা বলুন, উনি কেন দশ টাকা দিয়ে কুড়ি টাকা তুলে নিয়েছেন!

হতদরিদ্র

পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিল— হতদরিদ্র কাকে বলে?
পরীক্ষার্থীটির বাবা একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। বাবার মুখে ছেলেটি যা শোনে, সেটাই লিখে দিল পরীক্ষার খাতায়—
যাঁর নিজস্ব কোনও হেলিকপ্টার নেই, তিনি মোটেই বড়লোক নন। যাঁর বাড়ির বাগানের মালির একটি গাড়িও নেই, তিনি মধ্যবিত্ত নন। যাঁর দু’টি অ্যালসেশিয়ান পোষার সঙ্গতি নেই, তিনি দরিদ্র নন, হতদরিদ্র।

সত্যিকারের বন্ধু

রিকির বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কিরে, এরা তোর বন্ধু?
রিকি ওর‌ বাবার মুখের দিকে তাকাল, হ্যাঁ।
— এরা তোর বন্ধু! যাদের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে‌ তুই ক’পা এগিয়ে গেলে, যারা তোর জামার পিছন ধরে টানে?
— হ্যাঁ, টানে।
— তুই আরও একটু এগিয়ে গেলে, যারা ঝর্ণা কলমের মুটকি খুলে তোর পিঠে কালি ছিটোয়?
— হ্যাঁ, ছিটোয়।
— তার থেকেও আরও একটু এগিয়ে গেলে, যারা নর্দমা থেকে দলা দলা নোংরা তুলে তোর পিঠে ছুড়ে মারে?
— হ্যাঁ, মারে।
— আর তখন তুই ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য পড়ি কি মড়ি করে প্রাণপণে পা চালাস?‌ কী, তাই তো?
রিকি বলল, হ্যাঁ বাবা, একদম ঠিক বলেছ। আমি চাই, ওরা এ সব আরও করুক। ‌ওরা যত এ সব করবে, আমি তত ওদের ও সবের হাত থেকে বাঁচার জন্য জোরে জোরে পা ফেলে ওদের থেকে আরও একটু এগিয়ে যাব।
ছেলের কথা শুনে বাবা তো অবাক, কী বলছিস!
রিকি বলল, হ্যাঁ বাবা, আমি ঠিকই বলছি। এরা এগুলো না করলে আমি এগোতেই পারতাম না। এরাই আমার আসল বন্ধু। সত্যিকারের বন্ধু।

মেয়েরা ভাবে

রনিতা বলল, দেখ দেখ, ওই যে মেয়েটা আসছে, ওকে সবাই কেমন ড্যাবড্যাব করে দেখছে।
সৃজন বলল, মেয়েরা ভাবে সুতির মিষ্টি রঙের শাড়ি, কপালে ছোট্ট একটা টিপ, হালকা লিপস্টিক আর ময়ূরের মতো পা ফেলে ফেলে হেঁটে গেলেই বুঝি ছেলেরা ওদের প্রেমে পাগল হয়ে যাবে।
— হবে না?
সৃজন বলল, না হবে না। তার পর নিচুস্বরে বলল, মরে যাবে।

সবচেয়ে সুন্দর

ঘরে ঝাঁট দিচ্ছিল রাধা। বউ তখন রান্নাঘরে। তন্ময় সেই সুযোগে একটু ঘনিষ্ঠ হওয়ার ফন্দি করে রাধাকে বলল, তুমি খুব সুন্দর। আমার বউয়ের চেয়েও সুন্দর…
রাধা বলল, মিথ্যে বলবেন না দাদাবাবু।
— মিথ্যে না। বিশ্বাস করো, আমি সত্যি বলছি।
— তা হলে আপনার ড্রাইভার যে বলে, মেমসাহেবের চেয়ে সুন্দরী আর কেউ নেই!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!