কবি সুদীপ্ত বিশ্বাস এর ছ’টি কবিতা

সুদীপ্ত বিশ্বাস
সুদীপ্ত বিশ্বাস
3 মিনিটে পড়ুন
সাময়িকী আর্কাইভ

বাউল

একলা বেশ তো আছি, একলা থাকাই ভালো
দুপুরে ডিস্কো নাচি, রাতে পাই চাঁদের আলো।
কোনো এক নিঝুম দুপুর, কিংবা গভীর রাতে
মনে আর পড়েই না তো,টান দিই গঞ্জিকাতে।
পরোয়া করব কেন? সমাজটা দিচ্ছে বা কী?
ছোট্ট জীবন আমার, তাইতো নাচতে থাকি।
পলকা এই জীবনে, কী হবে দুঃখ এনে?
চল্ না উড়াই ঘুড়ি, সুতোতে মাঞ্জা টেনে।
লাফিয়ে পাহাড় চড়ে, সাঁতরে নদীর বুকে
কবিতা দু’এক কলি আসলে রাখছি টুকে।
এভাবে কাটছে তো দিন,তোমাকে আর কী খুঁজি?
জানিনা কোথায় তুমি, আমাকে ভাবছো বুঝি?
ভাবলে কী হবে আর, নদীতে জল গড়ালে
চাঁদটা বন্ধু আমার, গভীর এই রাত্রিকালে
গাছেরা আগলে রাখে, পাখিরা গাইতে থাকে
ঘরে আর যায় কী ফেরা? ওই যে বাউল ডাকে !

জল

সেতু? হ্যাঁ গো, সেতুই পাতো তোমার আমার বুকে
চিরটাকাল ভালবাসা থাক না বাঁধা সুখে।
সুখের বাঁধন আলগা হলেই নামব আবার জলে
জলে জন্ম, জলে মৃত্যু, জলেই বাঁচতে বলে।
জল হয়ে তাই তোমার পাশে যেই না আমি নামি
ভালবাসার অতলতলে যাই তলিয়ে আমি!
জল তো মুছে ফেলে সবই সাঁতরে যাবার পরে
তাই বিরহ দেয় না উঁকি জলের কোনও স্তরে।
ভুলে যাওয়া বরং ভালো, ভুলতে কি আর জানি?
তাইতো শুধু হৃদয় সেঁচে দুঃখ তুলে আনি।

বিপ্রলব্ধ

ত্রাহ্যস্পর্শে তিথিক্ষয়ে চাঁদের দেখা নেই
মঞ্জুষাতে লক্ষ্ণীকে নয়, চাইছি তোমাকেই।
তামরসের মতোই তুমি, মুগ্ধ হয়ে থাকি
ধৈবতহীন আরোহণে তিলক কামোদ রাখি।
অনিকেত শব্দচাষী বন-পাহাড়ে ঘুরি
স্মিত হাসির ময়ূখছটায় মন করেছ চুরি।
ভৈরবের ওই বিরহী সুর পাখির ডাকে ঝরে
বিপ্রলব্ধ, বিহানবেলায় বড্ড মনে পড়ে।

শব্দার্থ: –
তিথিক্ষয় ~ একদিনে দুই তিথির ক্ষয় হয়ে তৃতীয় তিথির সংযোগ; ত্রাহ্যস্পর্শ; অমাবস্যা।
মঞ্জুষা ~ লক্ষ্ণীর ঝাঁপি।
তামরস ~ পদ্ম।
তিলক কামোদ হল একটা রাগ।
এই রাগে অবরোহণে সাতটি সুর থাকলেও আরোহণে ধা বা ধৈবত সুরটি থাকে না।
অনিকেত ~ গৃহহীন পথিক।
শব্দচাষী ~ কবি।
ময়ূখ ~ রশ্মি।
ভৈরব হল প্রভাতকালীন একটা রাগ।ভোর বেলা গাওয়া হয় এই রাগ।
বিপ্রলব্ধ অর্থ বঞ্চিত বা প্রতারিত।
বিহানবেলা মানে সকালবেলা।

জলছবি

বেঁচেই আছি বাঁচছি বেশ
চশমা এঁটে পক্ক কেশ।
জীবনটা কী? জানি কী কেউ?
মিথ্যে শুধু গুনছি ঢেউ।
বাড়ছে যত বাঁচার আশা
যাচ্ছে বেড়ে ক্ষুৎপিপাসা ।
কীসের খোঁজে ইঁদুর দৌড়
ছুটছে লোকে ছুটছে জোর।
দিনটা আসে দিনটা যায়
চমকে খসা ঝরাপাতায়
কলকলানো নদীর পাশে
চুপটি করে মৃত্যু আসে।

দ্বন্দ্ব

জল আগে না পানি?
আমরা কী তা জানি?
ওসব জানতে গেলে আগে
পেতে হয় জলপানি।

গড বড় না আল্লা?
কার যে ভারি পাল্লা?
পরনে তাদের হ্যাট-কোট-বুট
না কি আলখাল্লা?

হিন্দু না মুসলিম?
উচ্ছে না কী নিম?
মরার পরের ভয় না পেয়ে
বাঁচ্ না ভীতুর ডিম।

আল্লা হরির ভক্ত?
এদের মেলা শক্ত?
কাটলে পরেই দেখতে পাবে
লাল দুটোরই রক্ত।

কাঁটাতার

আমরা পাখিরা উড়ে যাই কতদূরে
কত দেশ-গ্রাম ইয়ত্তা নেই তার
মানুষেরা শুধু ঝগড়া-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।

আমরা নদীরা বয়ে যাই কত দূরে
পাহাড়ের থেকে দূর সাগরের পার
মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।

আমরা আলোরা সূর্যের থেকে এসে
ভেদাভেদ ভুলে ঘোচাই অন্ধকার
মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।

আমরা মেঘেরা হাওয়ার ডানায় ভেসে
কত পথ চলি হিসেব থাকে না তার
মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।

মানুষেরা কেন কাঁটাতার ভালোবাসে?
হিংসা বা দ্বেষে কেন যে বিবাদমান!
কেন যে শেখেনি ভালোবেসে বেঁচে থাকা,
নদী বা বাতাস,মেঘ-পাখিদের গান।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!