পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে
পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট!

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
3 মিনিটে পড়ুন
বুলু বেগম।

গত ৭ অক্টেবর ২০১৯ সালে বুলু বেগম নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের পারকোল গ্রাম থেকে এসেছিলেন নাটোর শহরের স্বর্ণকার পট্টি এলাকায়। তিনি পথের ধারে বসে পদ্মফুল বিক্রি করছিলেন।

কথা হয়েছিল তার সঙ্গে তিনি বলেছিলেন- তার বাড়ির পাশেই সু-বিশাল চিনিডাঙার পদ্মবিল, সকালে পদ্মফুল তুলে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নাটোর শহরে পদ্মফুল বিক্রি করতে এসেছেন। মলিন বদনে তার পরিধানে দারিদ্রতার কষাঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল।

1 4 পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে <br>পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট!
পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে
পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট! 43

স্বামী জেলে, মাছ ধরে। একসময় সারা বছর মাছ আর পদ্মফুল পাওয়া যেত বিলে, বর্তমানে বিলের অনেকাংশেই সারা বছর পানি থাকে না। তাই মাছ আর পদ্মফুলের পরিমাণ গেছে কমে, ফলে আয়ের উৎস কমে গেছে, দুই ছেলে আর এক মেয়ের জননী তিনি।

মেয়েটার বিয়ে দিয়েছেন আর ছেলেটা বিয়ে করে পর হয়ে গেছে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছেলে আর স্বামী নিয়ে, তিনজনের সংসার। সেদিন সকালে প্রায় ৩২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম তিনি নাটোর শহরে এসেছিলেন পদ্মফুল বিক্রি করতে।

2 4 পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে <br>পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট!
পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে
পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট! 44

সেদিন একটি পদ্মফুলের দাম ছিলো তিন টাকা। সব পদ্মফুল বিক্রি হলে তার রোজগার হত চারশত পঞ্চাশ টাকা। যাতায়াতের খরচ বাবদ ব্যয় ছিলো প্রায় একশত টাকা। অবশিষ্ট থাকতো তিনশত পঞ্চাশ টাকা। সবগুলো বিক্রি হবে এমন কোন নিশ্চয়তা ছিলোনা, তবে যাই হোক যতটুকুই আসুক সংসার চালাতে তার তেমন কোন কষ্ট ছিলোনা।

চলতি বছরেও শারদীয় দুর্গা উৎসবের আয়োজন প্রায় শেষের দিকে। সম্পূর্ণ হতে চলেছে ডেকোরেশন ও প্রতিমা তৈরীর কাজ। বাজার জুড়ে চলছে উৎসবের কেনাকাটার আমেজ। তবে বুলি বেগমের উপস্থিতি এ বছরে আর পাওয়া যায়নি।

3 2 পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে <br>পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট!
পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে
পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট! 45

এছাড়াও তার মতন ওমেদ আলী, বিলকিস বেওয়াসহ অনেকেই আসতো নাটোর শহরে পদ্মফুল ও পদ্মফল বিক্রি করতে। এবছরে তাদের কাউকে দেখাতে পাওয়া যায়নি। কেন তারা এ বছর পদ্মফুল বিক্রি করতে আসেনি? এমন প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে সাময়িকী।

সরজমিনে গেলে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ও মাঝগাঁও ইউনিয়নের পারকোল, মাজগাঁও, মহানন্দাগাছা গ্রামে দেখা হয় কয়েকশত বুলু বেগমের সাথে। যাদের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল এই পদ্মবিল। তারা স্বাধীনভাবে বিলের পদ্মফুল, পদ্মফল এবং মাছ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

4 2 পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে <br>পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট!
পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে
পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট! 46

অথচ একদল হায়নার থাবায় কমছে সরকারি এই বিলের আয়তন।অনেকেই নিজ নামে তৈরি করেছে দলিল। দখলে, দূষণে নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ভুগছে পদ্মবিল। বিলে দু-একটি পদ্ম গাছের দেখা মিললেও ফোটেনি এবার পদ্মফুল।ফলে বেকার হয়েছে হাজারো পরিবার, কমছে জলাশয়।

আর খরা মৌসুমে প্রভাবশালীরা বিল দখল করে, করছে চাষাবাদ। ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে পদ্মবিলে অধিক পরিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার। অনেক স্থানে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু, খনন করা হচ্ছে পুকুর, আর এভাবেই প্রকৃতি হারাচ্ছে তার ভারসাম্য।

5 2 পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে <br>পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট!
পদ্মফুল নেই পদ্মবিলে
পদ্মফুল বিক্রেতা বুলু বেগমের কষ্ট! 47

স্থানীয়রা বলছেন- এক সময় এই পদ্মবিলে সরকারি খাস সম্পত্তি ছিল প্রায় এক হাজার বিঘা। তবে বর্তমানে শোনা যাচ্ছে এই বিলে সরকারি সম্পত্তি রয়েছে ৪৭ বিঘা। যে বিলে সারাবছর পানিতে নিমজ্জিত থাকত সেই বিল কিভাবে জমিতে রূপান্তরিত হল? কারা সরকারি সম্পত্তির দলিল তৈরি করল? এমন প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর কি পাওয়া যাবে?

আসুন না সবাই মিলে দেখে আসি নাটোরের সেই চিনি ডাঙ্গার পদ্মবিল, মাছের অভয়াশ্রম, পাখির অভয়ারণ্য, উদ্যোগ গ্রহন করি কিভাবে হায়নার থাবা থেকে বিলটি রক্ষা করা যায়, কিভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায় বুলু বেগমের মতন হাজার পরিবারের প্রতিদিনের কর্মসংস্থান।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!